ও আমার চক্ষু নাই…

রূপক বিধৌত সাধু
Published : 29 August 2016, 02:33 AM
Updated : 29 August 2016, 02:33 AM

বাড়ির গেইট ধাক্কাচ্ছিলো কেউ একজন। গেইট খুলে দেখলাম ৭০ উর্ধ্ব এক মুরুব্বি (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)। জিগ্যেস করলাম, "কী সমস্যা, মুরুব্বি?" মুরুব্বি বললেন, "বাবা, দুগগা খাওন দিবেন? দুইদিন ধইরা কিছু খাইনা।" আমি বললাম, "ভিত্রে আহেন।"

মুরুব্বি বাড়ির ভেতরে এলেন। কিন্তু গোল বাঁধলো ঘরে ঢোকা নিয়ে। তিনি কিছুতেই ঘরে ঢুকবেন না! কী আর করা; বারান্দায় চেয়ারে বসতে বললাম, কিন্তু তিনি বসবেন না। তারপর টুল এনে দিলাম, তিনি টুলেও বসবেন না । মেজাজ খিঁচড়ে গেলো। ভাবছি কষে একটা ধমক দেবো; কিন্তু দিতে পারলাম না, মুরুব্বি মানুষ তো। ইতিমধ্যে মাটি গেঁড়ে বসে পড়েছেন তিনি। বললাম, "মুরুব্বি, আপনে যে এইভাবে বইছেন; মাইনষে দেইখা তো খারাপ কইবো।" মুরুব্বি বললেন, "আমি উচা জায়গায় বইতে পারি না।"

মুরুব্বিকে খাবার দেওয়া হলো; আগ্রহ সহকারে খাচ্ছিলেন। জিগ্যেস করলাম, "শেষ কোন সময় খাইছিলেন?" মুরুব্বি জানালেন, "কালকা সকাল সাড়ে এগারোটায় । "আহারে!" এবার জিগ্যেস করলাম, "ক্ষিধা লাগে না?" মুরুব্বি বললেন, "ক্ষিধা লাগলেও এমনিতেই হুইয়া থাকি। রোজা করলাম না খাইয়া।" জিগ্যেস করলাম, "বউ-পোলাপান নাই?" মুরুব্বি বললেন, "পোলা নাই; দুইটা মাইয়ার একটা বিয়া দিছি, আরেকটা প্রতিবন্ধী! বউ মাইয়ার লগেই থাহে!"

"আপনের জমি-জিরাত নাই?" জিগ্যেস করলাম । মুরুব্বি বললেন, "আছিলো; লেইখ্যা নিছে।" কয়েকজনের নাম বললেন তিনি। জিগ্যেস করলাম, "লিইখ্যা দিছেন ক্যা?" মুরুব্বি বললেন, "সংগ্রামের বছর খুব অভাব আছিলো। হেরা তো আমার আত্মীয়; কইলাম, কয়েক মণ ধান দেও, পরে শোধ কইরা দিমুনে? হেরা কইলো, টিপসই লাগবো; দিলাম টিপসই। হেইডা যে সাফকাউলা দলিল আছিলো, জানতাম না তো। ঐ বছর নালিশ বসাইলাম; সবাই কইলো, আপনে তো লিইখ্যা দিছেন; এখন কী করার আছে…….." দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

আবার বলা শুরু করলেন, "ওসমানী সাব একটা সার্টিফিকেট দিছিলেন; হেইডাও নিয়া নিছে।" কালপ্রিটটার নাম জিগ্যেস করলাম আমি, উনি বললেন। এলাকার প্রভাবশালী একজন। আরও অনেক কথা হলো। জিগ্যেস করলাম, "চলেন ক্যামনে?" বললেন, "চইলা যায়। আগে কাম কইরা খাইতাম, অহন শইল কোলায় না!" উনি জানালেন ডাকাত কুপিয়েছিলো উনাকে। তাই পরিশ্রমও করতে পারেন না।

উনার খাওয়া-দাওয়া শেষ হলো। পান-টান খান কিনা জানতে চাইলাম; জানালেন পান উনার সাথেই আছে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে উঠে পড়লেন। এক পাত্র চাল এনে দিলাম। উনি সঙ্কোচ বোধ করছিলেন; আমি বললাম, "শরমের কিছু নাই। ক্ষিধা লাগলে খালি আইয়া পড়বেন।" উনি মুচকি হাসলেন; বললেন, "খোদা আপনাগো মঙ্গল করবে।"