ক্যাসিও ঘড়ি

রুরা
Published : 15 June 2011, 12:07 PM
Updated : 15 June 2011, 12:07 PM

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। একটু দেরিতে হলেও আমার ছেলেবেলার চাওয়াগুলোকে গুরুত্ব দিতেন বাবা-মা। কারণ তিন মেয়ের পর মান্নত করে পাওয়া ছেলে আমি। লেখা পড়াতে মোটামুটি সন্তুষ্ট। অন্যান্য কাজেও অসন্তুষ্ট নন। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে তেমন একটা মিশি না। গায়ে পড়ে কারো সঙ্গে ঝগড়া পাতি না। মা-বাবার আদেশ নির্দেশগুলোর কদর করি।

১৯৯৯ সালের কথা। ক্লাস ফাইভে পড়ি। কতই বা বয়স হবে আর। এরই মধ্যে সখ হল ঘড়ি কেনার। আমাদের এদিকে তখন ক্যাসিও ঘড়ির বেশ কদর। হাতে পরে ঘুরলে সবাই বড় লোকের ছেলে মনে করে। আমাদের ক্লাসের আরও কয়েকজনের রয়েছে এমন ঘড়ি। বাবার কাছে তাই একদিন আবদার করে বসলাম। ক্যাসিও ঘড়ি চাই। বাবা সেই কথা কানে নিলেন কিনা কে জানে। দুই মাস পেড়িয়ে গেল। বাবার ঘড়ির কথা স্মরণ নেই ভেবে আরেকদিন বললাম। বাবা কিনে দিবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করলেন।

তখন ক্যাসিও ঘড়ির দাম ছিল ৩৫০ টাকা। বাবার সামান্য আয়। সংসার চালিয়ে বাড়তি টাকা রাখা সম্ভব হয় না। কিন্তু সেই কথা বোঝার ক্ষমতা ছিল কোথায়? তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে বাবা একদিন বাজারে নিয়ে গেলেন। আমার পছন্দসই একটা ক্যাসিও ঘড়ি কিনে দিলেন। ঘড়ি পেয়ে আনন্দে লাফ দিতে ইচ্ছে করছিল।

ডান হাতে ঘড়ি পরে হাঁটি। কোনো ছাত্র হাতের দিকে তাকালে গর্বে বুক ফুলে যাওয়ার মত অবস্থা হয় আমার। কখনো ফুল হাতা জামা পরলে অকারণেই গুটিয়ে রাখি কনুই পর্যন্ত। ওয়াটার প্রুফ ঘড়ি বলে হাত ধুয়ার সময়ও খুলি না। এভাবেই চলছিল দিনকাল।

একদিন শুনলাম ময়মনসিংহ শহরে খালেদা জিয়া আসবেন। সার্কিট হাউস ময়দানে বিশাল সমাবেশ হবে। সেই বয়সে দেশ নেত্রীকে কাছ থেকে দেখার লোভ ক'জনই বা সংবরণ করতে পারে। নির্ধারিত দিনের ক্লাস সেরে সবার আগে ছুটলাম আমি। আগে যাওয়াতে লাভ হল। মঞ্চের সামনের ব্যারিকেডের পাশেই দাঁড়াতে পারলাম। এমনিতেই রোদ তার ওপর হাজার হাজার মানুষ। গরমে গা ভিজে কুল কুল করছে। ফুলহাতা শার্ট পরেছিলাম। গরম বাড়তে থাকলে শার্টের হাতা যতটুকু পারা যায় ওপরে গুঁজে রাখলাম। একসময় খালেদা জিয়া এলেন। ভাষণ শেষ হল। সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। এবার ফেরার পালা। তার আগে সময়টা জানা প্রয়োজন। ডানহাত ওপরে তুলে চোখের সামনে ধরলাম। কিন্তু একি! হাত তো খালি। ঘড়ি কোথায় গেল। আশপাশটা নজর বুলালাম। নেই। আমার জীবনের সখের ঘড়িটা এভাবে হারিয়ে যাবে কখনো ভাবতেই পারিনি। দু'চোখ বেয়ে কান্না ফেটে পড়তে চাইল। কিন্তু এত এত লোকজনের মধ্যে সেটিও সম্ভব নয়। সখ করে নেত্রীকে দেখার আনন্দ নিমিষেই মাটি হয়ে গেল।