এ লজ্জা আমাদের সকলের

শাহজাদী রিহাস সাবাহ
Published : 22 Dec 2014, 08:46 AM
Updated : 22 Dec 2014, 08:46 AM

সম্প্রতি ডা. মিনহাজ রশিদুর রহমান নামক একজন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তার একটি ফেইসবুক বার্তা পরছিলাম। লেখাটি হুবহু তুলে ধরলাম।

" সারা জীবনেও এত লজ্জা পাইনি।
গতকাল এক মুক্তিযোদ্ধা এসেছিলেন তাঁর মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রের ফটোকপি সত্যায়িত করে নিতে। আমি তখন ইমারজেন্সি রুমে ডিউটিতে। আশেপাশে চরম ব্যস্ততা। এরই মাঝে খেয়াল করলাম এক অশীতিপর বৃদ্ধ জবুথবু হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। কি প্রয়োজন জিজ্ঞাসা করতেই শীর্ণ হাতে ধরে রাখা একতাড়া কাগজ বাড়িয়ে দিলেন। সত্যায়িত করতে হবে। দ্রুত ঝামেলা বিদায় করার জন্য কিছু না দেখেই সাইন করা শুরু করেছি, এমন সময় চোখ আটকে গেল একটা লেখার প্রতি " অমুক মুক্তিযোদ্ধা অমুক এলাকায় অতীব বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন"। আবার তাকালাম বৃদ্ধের দিকে। সামনের চেয়ারে বসতে বললাম।
'আপনি মুক্তিযোদ্ধা?'
'জ্বি স্যার'
'যুদ্ধের সময় আপনার বয়স কত ছিল?'
'স্যার, আমি তখন মেট্রিক পরীক্ষা দিছি'।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত কাগজ গুলো সিগনেচার করে ফেরত দিলাম, বললাম অফিস থেকে সিল দিয়ে নিতে। বৃদ্ধ চলে গেলেন। আর আমি লজ্জায় আর অপরাধবোধে জর্জরিত হতে থাকলাম।
কি জটিল আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা! এখানে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তার সত্যায়ন নিতে হয় নিজের বীরত্বকে প্রমানিত করার জন্য, আর আজকের পটভূমিকায় সেই কর্মকর্তা আমি, যার জন্মই কিনা মুক্তি যুদ্ধের প্রায় দেড় যুগ পরে।
আরো বেমানান হলো 'স্যার' সম্বোধন। সত্যিকারের বীরদের মুখে 'স্যার' ডাক মানায় না।
————
ডা. মিনহাজ রশিদুর রহমান "

ডা. মিনহাজ রশিদুর রহমান কে বলতে চাই, এ লজ্জা শুধু আপনার একার নয়। এ লজ্জা আমাদের সকলের, পুরো বাংলাদেশের। দেশের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা এখনো তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে পারিনি। কাগজের সার্টিফিকেট দিয়ে অথবা কিছু নির্দিষ্ট দিনে তাদের নিয়ে সভা করে স্মৃতিচারণ করে কিংবা দেশ কে নিয়ে কবিতা, গান লিখে নিজেদের কে আমরা দেশ প্রেমিক হিসেবে পরিচয় দেই। কিন্তু প্রকৃত দেশ প্রেমিক কাকে বলে এবং দেশ প্রেমিক দেশের জন্য কি করে সেই দৃষ্টান্ত রেখেছেন এই মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তি যুদ্ধের এত বছর পরেও তাদের আজ এই দশা ! আমরা কি শুধু লজ্জা পেয়েই মুখ লুকাব ? তাদের জন্য কি করা যায় তা নিয়ে ভাবব না ? নাকি ভেবেই বসে থাকব বা টকশোতে গিয়ে আইডিয়া দিয়ে নাম কামাবো ? এ প্রশ্নগুলো 'সংশ্লিষ্ট কর্তিপক্ষের' কাছে জাতির বিবেকের প্রশ্ন। ১৫৬.৬ মিলিয়ন মানুষের ১৫৬.৬ মিলিয়ন লজ্জা ! সত্যিই, এত লজ্জা কোথায় রাখি ? দেশের ব্যাংকে তো জায়গা সংকুলান হচ্ছে না ! এজন্য এ জাতির বর্তমান দাবি, প্লিজ সুইস ব্যাংকে এই লজ্জা রাখার জন্য একটি একাউন্ট খুলুন ! মনের বোঝা হালকা করুন।