২১তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস-২০১২: আপনি কি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সচেতন?

সগীর হোসাইন খান
Published : 2 Dec 2012, 06:52 PM
Updated : 2 Dec 2012, 06:52 PM

আগামীকাল ২১তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এই দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, "একীভূত সমাজ নির্মাণে সংঘবদ্ধ অঙ্গিকার"। সরকারী ভাবে এই দিবসটি পালন করার জন্য ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই উপলক্ষে প্রধান মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

বেসরকারী ভাবেও এই দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম আলাদা ভাবে এই উপলক্ষে বিকাল তিনটা থেকে এক র‌্যালীর আয়োজন করেছে যেখানে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করবে। আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।

————————————————

প্রতিবন্ধী শিশু হলেই এক সময় হত্যা করা হত। এটা এখন ইতিহাস। প্রতিবন্ধী শিশুদের অবস্থান আজ অনেক সুসংহত। কল্যাণের যুগ পেরিয়ে এখন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারের কথা বলা হচ্ছে। সে প্রবাহে সরকার "প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন-২০০১" পরিবর্তন করে "প্রতিবন্ধী অধিকার আইন" হিসেবে পাশ করতে যাচ্ছে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি বর্তমান সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। এর প্রমাণ "জাতীয় শিশু নীতি-২০১১", "জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-২০১১", জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০", "Comprehensive Early Childhood Care and Development (ECCD) Policy Framework" , "জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১", "জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯" ইত্যাদি নীতিমালা/আইন এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিসিএসএ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য (পরোক্ষ) ১% কোটা, বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, চাকুরীতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্রীড়াঙ্গন প্রস্তুত সহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের মূল ধারায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে।

"জাতি সংঘ প্রতিবন্ধী অধিকার আইন-২০০৬" প্রণয়ন করার পর থেকে বিশ্বব্যপী প্রতিবন্ধী অধিকার আন্দোলন একটি নতুন রূপ নিয়েছে। কল্যাণের দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে সরাসরি অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এখন সবাই সচেষ্ট। এখন সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে না। সুযোগ সুবিধা আদায় করার জন্য আন্দোলন করছে।

প্রযুক্তি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অক্ষমতাকে সক্ষমতায় পরিবর্তন করে সহায়তা করছে। আজকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য ও প্রযুক্তিতে তাদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এখন চাকুরী শুধু টেলিফোন অপারেটর কিংবা ওয়েলকাম ডেস্কেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা শিক্ষকতা করছে, সরকারী কাউন্সিলিং এর কাজ করছে, তারা বেসরকারী প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে এমন কি জাতি সংঘের প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক কমিটিতে বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আইসিটিতে অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাইতে বেশী এগিয়ে। ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স এবং অটোক্যাডে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের উপস্থিতি চোখে পরার মত। তাছাড়া গার্মেন্ট শিল্পে একটি বড় অংশ কাজ করছে আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলতে।

ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিবন্ধী শিশুদের অবস্থান অপ্রতিবন্ধী শিশুদের চাইতে অনেক ভাল। স্পেশাল অলিম্পিকে সবচাইতে বেশি পদক পাওয়া তারই প্রমাণ বহন করে। আমি যখন এই লিখাটি লিখছি তখন বাংলাদেশর জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল ওয়ার্লড ব্লাইন্ড ক্রিকেট কাপে কানাডার বিপক্ষে খেলছে। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদেরা বিদেশে গিয়ে ব্লাইন্ড চেস এ অংশগ্রহণ করছে যা তাদের প্রবল সক্ষমতার প্রমাণ বহন করে।

বর্তমান সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একীভূত সমাজ নির্মাণে এবং একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে সবাই কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল ধারায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এর কোন বিকল্প নেই। তাই সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী বান্ধব করা হচ্ছে।

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীদের ব্যপারে বিজনেজ অব এলোকেশন এ থাকলেও এখন প্রায় সব মন্ত্রণালয়ই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা শুরু করেছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তাদের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য।

সার্বিক পরিস্থিতি এখন প্রতিবন্ধী বান্ধব। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন বাংলাদেশের ইতিহাসের যো কোন সময়ের চাইতে বেশী অনুকূল।

এমন পরিস্থিতিতে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে প্রতিবন্ধী বান্ধব সমাজ বিনির্মাণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।

আপনার কাছে প্রশ্ন:

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি দেশ ও জাতির দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে।

আপনি কি বদলেছেন?
আপনার কাছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মানেই করুনার পাত্র নয়তো?
আপনি প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে চান? আপনি যা করছেন তা তাদের প্রতি অধিকারের বদলে কল্যাণ নয়তো?
আপনি প্রতিবন্ধী বান্ধব কি?

উত্তর আপনাকে দেওয়ার দরকার নেই। আপনি আপনাকে উত্তর দিন। আশা করি আপনি নিজেকে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।