মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসা বিষের চেয়েও বিষময়…

ম, সাহিদ
Published : 25 July 2012, 06:39 PM
Updated : 25 July 2012, 06:39 PM

কিছু দিন পূর্বে আমার খালার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম,বেড়াতে গিয়েছিলাম বললে ভুলই হবে প্রায় একযুগ পরে একটি বিশেষ জরুরী প্রয়োজনেই ওখানে যাওয়া। খালার সাথে এর মধ্যে কয়েকবার দেখা হয়েছে নানু বাড়ীতে তবে নিজ বাড়িতে আমাকে পেয়ে প্রথমেই আনন্দাশ্রু এবং যরপরনাই ভোনপুকে সীমাহীন আদরের আতিশয্যা সত্যিই নিজেকে বেশ খানিকটা অপরাধি ভাবতে বাধ্য করে দিল। রাতে খাবারের আয়োজন দেখে আকাশ থেকে পরা ছাড়া আমার মত স্বল্পভোজির আর কোন পথ ছিল না। কিন্তু জোর করে বেশী খাওয়ানোর চেষ্টাটি এক পর্যায়ে বিষের চেয়েও মারাত্মক বিষময় হয়ে ওঠেছিল। খালা পাছে মনে কষ্ট পায় ভেবে যতটা সম্ভব চেষ্টার ত্রুটি করি নাই তার পরও শেষ র্যন্ত খালার ভাষ্যে "কিছুইতো খেলি না,শুধু শুধু এতো কষ্ট করলাম"। এক রাতের ভোজনের রেশ এক সপ্তাহ অবধী ডাক্তার-ফার্মেসী আর বিছানার সাথে নিবির আত্মীয়তা দিয়ে কাটাতে হয়েছে।

সাহিত্য নির্ভর বই পড়ার প্রথম দিক হতে আমার প্রিয় লেখক বা সাহিত্যিক শরৎ চন্দ্র চট্রোপধ্যায়। শরতের বই এখনও আমি প্রায় সময়ই সুযোগ পেলেই পড়ি। তবে পাশাপাশি অন্য লেখকদের সাথে সাথে হুমায়ুন আহমেদের লেখার প্রতি আমার একটি আলাদা প্রিতি জন্ম নিয়েছে এবং তা এখনও আছে। একজন লেখকের গল্প উপন্যাস থেকে আমরা আমাদের জীবন সংসার সাজানোর কথা কল্পনা করতে পারি কিন্তু বাস্তবে কতটা সম্ভব এটা আমরা সবাই বেশ ভাল করেই জানি। যদি একজন লেখকের লেখা থেকে সাময়ীক আনন্দ অনুভব করে ক্ষনিক সময়ের জন্য সেই গল্পের জগতে হারিয়ে যাই তাতে খুব একটা ক্ষতি আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু কোন লেখকের ব্যাক্তিগত সমস্যা কিংবা তার নিজিস্ব চাল-চলন অথবা তার সংসার জীবন নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করে আমার কতটা লাভ-ক্ষতি সে হিসাব আমি করতেই পারি এবং তাই স্বাভাবিক। হুমায়ুন আহমেদ তার সৃষ্টি দিয়ে যেমন আমাদের আনন্দ-বেদনা ও কৌতুক মিশ্রিত অনুভবে আলোড়িত করেছেন ঠিক তেমনি পাশাপাশি এই সব হতেই অর্থ উপার্জন করেছেন এবং তাই ছিল স্বাভাবিক। তার মৃত্যু আমাদের আরো নতুন নতুন সৃষ্টি দিয়ে আনন্দিত করার পথটি রুদ্ধ করে একজন কথা শিল্পীর অকাল প্রয়ান আমাকে ব্যাথিত করেছে ঠিক তবে আমাকে একই কারনে উন্মাদ হতে হবে এটা আমি কোনভাবেই মানতে পারি না।

ব্যাক্তি হুমায়ুন আহমেদ আর কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন এক বা অভিন্ন ভেবে আমরা অনেকেই ভুল করছি। ব্যাক্তি হুমায়ুন যা করেছেন বা করে গেছেন ঠিক তেমনটি যদি আমরাও করতে থাকি বা করার চেষ্টা করি তবে সমাজে এর বিরুপ প্রভাব কতটা ভয়ংকর ভাবে প্রতিফলিত হবে একটু চোখ বুঝে চিন্তা করলেই নিজেই অনুভব করা সম্ভব। আর ব্যাক্তি হুমায়ুন আহমেদকে অনুসরন করা যতটা সহজ ঠিক কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মত লিখনি দিয়ে একটি মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করে তোলা কতটা কঠিন এটা নিরুপনের ক্ষমতা আর যাই হোক আমার অন্তত নেই। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর থেকে প্রতিটি ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলিতে তার ব্যাক্তিগত এবং পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে যে রকম চুল চেরা বিশ্লেষন এমনকি কখনও কাউকে নন্দিত আবার অন্যকে নিন্দিত করে পক্ষান্তরে হুমায়ুন আহমেদের প্রতি কতটা সুবিচার করা হচ্ছে তা নিয়ে শুধু প্রশ্ন নয় ভয় হচ্ছে এটা আসলে কোন চক্রান্ত নয়তো ?

আমি যাকে ভালবাসি তাকে তার ভালটা আমার কাছে ভাল লাগে বলেই। তাই বলে তাকে ভালবাসার খেসারত হিসাবে তার মৃদু-মন্দটাকে নিয়েও অহেতুক নাক গলানো কতটা যুক্তিযুক্ত এটা আমাকেই বুঝতে হবে। হ্যা আমার ভালবাসার বস্তুটির ক্ষতির কারন কেউ হলে তাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করাব তবে তা ভালবাসর ক্ষতি করে নয়। আমি আমাকে যতটা ভালবাসি ঠিক তার চেয়ে অন্য কাউকে বেশী ভালবাসা কখনও সম্ভব নয়। তাই নিজেকে হাসির খোরাক না বানিয়ে অন্যকে দোষারোপ না করে আসুন আত্মসমালোচনা করি,যা বলছি ততটা বলার অধিকার আমার আছে কি ?

মনে রাখতে হবে,অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়,মাত্রারিক্ত ভালবাসা বিষের চেয়েও বিষময়।