নাসিক থেকে কুসিক-পরিবর্তনের পথে কতটুকু?

ম, সাহিদ
Published : 16 Nov 2011, 11:42 AM
Updated : 16 Nov 2011, 11:42 AM

হুজুগে বাঙ্গালী বলে আমাদের একটি পরিচয় আছে কিন্তু বর্তমানে আমার মনে হয় সেই প্রবনতা আমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকলেও অনেকাংশে তা কমে এসেছে অনেকটাই। তবে সেই হুজুগ যদি পরিবর্তন আর সামাজ সংস্কার বান্ধব হয় আমার মনে হয় এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।

এই কিছুদিন আগে সারা বাংলাদেশ উন্মুখ হয়ে নারানগন্জের (নাসিক) নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রতিটি মানুষই জানাতে চেয়েছিল নাসিক নির্বচন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থির অবস্থায় কিছুটা হলেও আমাদের বড় রাজনৈতিক দল গুলিকে কোন মেসেজের মাধ্যমে তাদের চাওয়া পাওয়ার কথাটি। এখন কথা হল নির্বাচন হল নারায়নগন্জে আর মেসেজ দিল সারা বাংলাদেশ এটাও কি সম্ভব। হ্যা সম্বব আর সম্ভব বলেই এই নির্বাচনোত্তর সহিংসতা,রাজনৈতিক কাদাছুরা ছুরি এমনকি বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক ইস্যু তেরি করতে ব্যার্থ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। কারন তারা বুঝতে পেরেছিল এই নির্বাচনটি নারায়নগন্জে অনুষ্ঠিত হলেও এর প্রভাব পরেছে সারা বাংলায়।

এখন প্রশ্ন হল এ থেকে রাজনিতি কি শিক্ষা নিল এবং দিল। এই শিক্ষা কে কত টুকু নিল এবং বাংলাদেশের জনগনের আশা আকাংখার যথার্থ মুল্যায়নে এগিয়ে এসে একটি আস্থার ভিত তৈরি করতে পারলো এটার একটি টেষ্ট কেস হতে পারে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন (কুসিক)। এর সাথে একটি কথা অবলিলায় যোগ করা যায় বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে যে যতটা বিতর্কিত করার চেষ্টা করুক না কেন তাদের গ্রহনযোগ্যতা এবং স্বচ্ছ নিরেপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের একনিষ্ঠতা এবং দৃঢ় প্রত্যেয়ের পরিক্ষায় উত্তির্নের যথেষ্ট নাম্বার নিয়েই শেষ মুহুর্তের এই নির্বচন হবে তাদের ফাইনাল রেজাল্টের অপেক্ষা মাত্র।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বচন করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট চাপ এবং খবরদারীতে থাকতে হয় এটা একরকম নিয়মেই পরিনত হয়েছিল। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন কতটা স্বধীন ভাবে তাদের সময়ে অনুষ্ঠিত করতে পেরেছে এ বিষয়ে আজকের (১৬-১১-২০১১) ভোরের কাগজের মুক্তচিন্তার একটি কলামে মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যা লিখেছেন তা থেকে কিছুটা নিচে উল্লেখ করলে বুঝতে সুবিধা হবে বলে আমার বিস্বাস।

এই নির্বাচনটিই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন শেষ নির্বাচন হতে যাচ্ছে এমনটি শতভাগ নিশ্চিত করেই বলা যায়। যতোই বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে গালমন্দ করুক, তাদের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতাকে অস্বীকার করুক দেশের জনগণ এবং ইতিহাস সাক্ষী দেবে যে, বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে ২০০৭-২০১২ মেয়াদে যে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে সামান্য কিছু সমালোচনা ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের রেকর্ড এই কমিশনের ধারেকাছে যাওয়ার মতো অন্য কোনো কমিশনেরই নেই। ভবিষ্যৎ কমিশন কেমন হবে তা কেবল ভবিষ্যতেই বলা যাবে। কিন্তু ৪০ বছরের সকল কমিশনের চাইতে বর্তমান কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা অনেক বেশি। সুতরাং দেশের মানুষ আশা করছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কুমিল্লাতেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। স্বীকার করতে হবে, নির্বাচন কমিশনের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও সহযোগিতার ওপর। এ ক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে বড় ধরনের কোনো বিপদে ফেলেনি, নির্বাচন ভন্ডুল করার কোনো ষড়যন্ত্র করেনি। নেতাকর্মীদের মধ্যে কারো কারো ইচ্ছা অনেক কিছুই থাকতে পারে কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রে নীতি ও আইনের অবস্থানে অনড় ছিল। যদিও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর নিয়োগ নিয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ করা গেছে। কিন্তু সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তা কোনো ব্যত্যয় ঘটায়নি। সরকারের অবস্থানে কোনোভাবে দখল-বেদখল বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা লক্ষ করা যায়নি। নির্বাচনের আগে বিরোধী দল থেকে উত্থাপিত সকল অভিযোগই শেষ পর্যন্ত অসার প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ নাসিক নির্বাচন বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তিকে অনেক ডিগ্রিতে তুলে ধরেছে। মানুষ নির্বাচনে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কেমন হলে কী হতে পারে, কেমন না হলে কী ঘটতে পারে সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছে। নিকট অতীতেই আমরা দেখেছি ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে যেসব উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলোতে সরকারের দখলি মনোভাব কেমন ছিল, তার ফল কী হয়েছিল, জনমনে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে কী ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল, একই সঙ্গে বিচারপতি আজিজকে সিইসি করার পর আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন, কমিশনে কর্মরত সচিব ও কর্মচারীরা কেমন বেপরোয়া হতে পারে তাও আমাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়নি। অন্যদিকে গত সাড়ে তিন বছর ধরে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন দেশে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচন কীভাবে একটি আস্থার জায়গা তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছে তাও লক্ষ করেছে। আবারো বলছি, এখন ৪ দলীয় জোট এসব অর্জনকে একেবারেই অস্বীকার করে বর্তমান সিইসিসহ অপর ২ নির্বাচন কমিশনকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আসলে ৪ দলীয় জোটের তেমন নৈতিক অধিকার আছে কিনা এসব অভিযোগ করার সেই প্রশ্ন ১৪ দল কখনো জোরেশোরে করছে না কেন তাই আমার মতো একজন সাধারণ নাগরিক প্রায়ই বুঝতে পারছে না। তবে সাধারণ মানুষ খোলা চোখেই এসব দেখছে, বুঝতেও পারছে। সে কারণেই জনগণ বিএনপির নেতাদের অগ্রিম মন্তব্য ভিত্তিহীন অভিযোগ খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। এম কে আনোয়ার সাহেব যেমন সেদিন বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকলে তারা কুসিক নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এম কে আনোয়ার বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে কখনো বস্তুনিষ্ঠ কথা বলেন কি? নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের আগে-পরেও তিনি এবং তার দলের নেতৃবৃন্দ যেসব কথা বলেছেন সেগুলোর মধ্যে কোনো দায়িত্বশীলতার পরিচয় পাওয়া গেছে কি? উত্তরে বোধহয় সপক্ষে কিছু বলার পাওয়া যাবে না।

আমি নির্বাচন কমিশনে সাফাই গাইতে এ লেখার অবতারনা করি নাই,কুসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগ,বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি সহ স্বতন্ত্র মিলিয়ে এ পর্যন্ত গোটা বিশেক প্রার্থীর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। তবে বড় দুই দলেই একাধীক প্রার্থী যেমন আছেন ঠিক তেমনি কিছু প্রার্থীকে নিয়ে আছে নানা অভিযোগের কারনে বিশেষ কিছু উপমা। এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নির্বাচনে বিষয়টি বলার আগে গত সংসদ নির্বচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা সদর আসনটিতে দলীয় কোন্দল নিরসনে আফজাল-বাহার ইস্যুতে কুমিল্লাকে সিটিতে রুপান্তরিত করে একজনকে মুল্যায়নের প্রতিশ্রুতির কথাটি অনেকেরই জানা। তবে এ ছাড়াও খোদ আওয়ামীলীগ থেকে আরো ত্যাগি এবং যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী রয়েছেন এটা বলার অবকাশ রাখে না। অন্যদিকে বিএনপিতে আছে মনিরুল হক সাক্কু-হাজী ইয়াছিন এবং মনিরুল হক চৌধুরীর ত্রিমুখি মানোনায়ন প্রত্যাশি দ্বন্ধ। কিন্তু সাবেক পৌর মেয়র মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লায় একটি মডেল পৌরসভার ভিত রচনা করে সাধারন ভোটারদের কাছে অনেকটাই জনপ্রিয়। এখন দলীয় বিবেচনায় কে মনোনায়ন পাবে তার হিসাব নিকাশ আমরা করবা না কিন্তু এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বচ্ছতা আর জনগনের মনের ভাষা বুঝার ব্যর্থতায় নতুন কোন আইভিকে খুজে নিতে আমজনতার কষ্ট হবার মত কোন কারন নেই। এখন আমাদের প্রতিক্ষা নির্বচন অনুষ্ঠানের আগেই যেন বড় রাজনৈতিক দলগুলি মনোনায়ন বিজয়ী হয়ে আমাদের পরিবর্তনের মেসেজটির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

আর এখনই সময় কে কার আগে জনগনের ভাষায় নিজেদের উপাস্থপন করে অদুর ভবিষ্যতের স্বর্ণালী দ্বারে পৌছতে পারার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। পরিশেষে শুধু এ টুকুই বলতে পারি আমরা আমাদের মেসেজ পৌছে দিয়েছি এবং দিচ্ছি কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাদেরই……..।