বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট: আসুন দেখি কি হতে যাচ্ছে(শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ)

সাইফ ভূঁইয়া
Published : 25 May 2011, 10:53 AM
Updated : 25 May 2011, 10:53 AM

বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট: আসুন দেখি কি হতে যাচ্ছে: শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ

মুক্ত বাজার অর্থনীতি আমাদের জন্য কতোটা সফলতা বয়ে আনছে তা ভাবার সময় এসে গেছে।

আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের দিকে তাকালে দেখা যাবে দেশটি নিজেদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে আমদানি বাজার এখনও কঠিন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা শিল্পায়নে বিশেষ করে আইটি, গাড়ী ও গাড়ীর যন্ত্রাংশ, টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক, মুঠো ফোন, ফাইবার অপটিকস, কৃষি সহ অনেক খাতে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে। আমাদের উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারছিনা। তাদের সাথে বাণিজ্য বৈষম্যের পরিসংখ্যান এতোটা-ই বেশী যে আঁতকে উঠা ছাড়া আমাদের বোধকরি কিছুই বলার নেই। তাই আমরা চাই রফতানি বৃদ্ধি,বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সকল ধরনের প্রস্তাব জাতীয় বাজেটে রাখা হোক।

মানব সম্পদ (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ) আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সব চেয়ে বেশী ভূমিকা রাখছে, প্রবাসীদের নিজ দেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব রেখে ই.পি.জেড এর মত কোন বিনিয়োগ পল্লী স্থাপনে বাজেটে প্রস্তাব রাখা হোক এবং অর্থ বরাদ্দ করা হোক।

রফতানি বৃদ্ধি, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিতে হবে ।

গার্মেন্টস, হিমায়িত মৎস্য, সফটওয়ার ও IT খাতে রফতানি, হস্ত ও চামড়া-জাত দ্রব্য, সিরামিক, ঔষধ শিল্পে আমরা বিশ্ব বাজারের একটা বড় অংশ দখল করতে পারি ।

বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এক স্তর পদ্ধতি (single stage) চালু করায় আমাদের বস্ত্র খাত মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে । সুতার দাম প্রতি কেজিতে এক ডলার কমার পরেও বিক্রয় হ্রাস পেয়েছে ৪০% । এর প্রধান কারণ হলো নিট-ফেব্রিক, গ্রে-কাপড় ভারত ও চীন থেকে আমদানি হচ্ছে দেদার।


(খবরে প্রকাশ সুতার কল গুলোতে ৪ হাজার কোটি টাকার সুতা অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে)

দেশীয় বস্ত্র খাত বাঁচাতে হলে মুক্তবাজার অর্থনীতিকে একটু গলা চিপে ধরতে হবে।

চামড়া,কৃত্রিম চামড়ার তৈরী জুতো, চপ্পল, স্যান্ডেল, ছোটদের কাপড়, কসমেটিকস, দেশীয় গার্মেন্টস Accessories, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি(তার, সুইচ, পাখা ইত্যাদি), তালা, টুলস্, ব্যাটারি, খেলনা, নিম্নমানের মেলা মাইন, কাপড়, চুলের ক্লিপ থেকে শুরু করে এক কথায় সব ধরনের পণ্য দেদারসে ঢুকছে চীন এবং ভারত থেকে। ফলে দেশীয় রাবার, চপ্পল, জুতো, বেবি পোশাক শিল্প সহ সকল ছোট ও মাঝারি শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিংবা ধুঁকে ধুঁকে মরছে। সবার আগে নিজেদের শিল্প বাঁচাতে হবে। শিল্প বাঁচলে বেকারত্ব কমবে, আমদানি নির্ভরতা কমবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল দ্রব্যাদি মুক্ত বাজারের নামে বাজারে ঢুকে পড়ছে যা দেখতে সুন্দর হলেও টেকসই নয়। দেশীয় কারখানাগুলো এসব নিম্নমানের কম মূল্যের পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে পারছে না। আমরা এধরনের অসাধু কাজ বন্ধের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

কম্পিউটারের সাথে সকল ধরনের যন্ত্রপাতি এবারও শূন্য করে রাখা হোক। তামাক, তামাকজাত পণ্য, বিদেশী সকল ধরনের কাপড়, জুতো, ফ্যাশন সামগ্রী, বিলাস দ্রব্য, ১৩০০ সি.সি'র উপর গাড়ি,সম্পূর্ণ টিভি, হোম থিয়েটার, ইলেকট্রনিক্স এর ওপর কর বাড়ানো যেতে পারে।

২০০৯-২০১১ পর্যন্ত প্রস্তুতকৃত ১২০০সি.সি. গাড়ির আমদানি কর অর্ধেক করা হোক।

যানজটের কথা মাথায় রেখে মটর সাইকেল/মটর বাইকের (৫০ সি.সি. থেকে ১২৫ সি.সি. পর্যন্ত) ওপর আমদানি কর অর্ধেক কমানো হোক।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য আবাসন ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষ্যে লোহা,স্ক্র্যাপ,পুরনো জাহাজ,টিন,ইস্পাত,সিমেন্ট সহ সকল নির্মাণ সামগ্রীর উপর বিদ্যমান কর অর্ধেকে নামানো হোক।

আমরা গত দু'টি পর্বে শুধু ভর্তুকির কথা বলেছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করলে কোনো সরকারের পক্ষে ভর্তুকি দিয়ে দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়। রাজস্ব আদায় হতে হবে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে আয়কর প্রদান সহজতর করা হোক। দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রণালয়, অফিস এবং গোটা কাঠামোকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য সৎ এবং সাহসী কর্মকর্তা চাই। এটা মনে রাখা জরুরি যে রাজস্ব আদায়ে সফলতা আসলে দেশের উন্নয়নে স্থবিরতা কাটবে।

আমাদের প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত সরকারী দফতর।

***
ছবি সূত্র:ইন্টারনেট দি বেঙ্গলি টাইমসে প্রকাশিত