এ বছর পবিত্র হজ্ব ব্রত পালনে ইচ্ছুকগন জেনে নিন: চিকিৎসা ও স্বাস্হ্য সমস্যা

সাইফ ভূঁইয়া
Published : 29 May 2011, 03:15 PM
Updated : 29 May 2011, 03:15 PM

হজ্জ্বের সময় চিকিৎসা চাহিদা খুব বেশি থাকে। তখন রোগের লক্ষণ ও চিহ্ন অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা অগ্রগণ্যতা পায়। এসব জটিল ক্ষেত্রে নিজের সমস্যা সম্পর্কে দ্রুত এবং স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলাটা জরুরি।

৫০% হাজি Dehydration, Heat Stroke এ আক্রান্ত হন। যখনই কেউ গলা শুকিয়ে আসা, হালকা জ্বর জ্বর বোধ করবেন তখনই ওরস্যালাইন খেতে শুরু করুন। বেশি বেশি পানি এবং পানি জাতীয় তরল পান করতে হবে ; কথাটি মাথায় গেঁথে নিন।

যেহেতু বেশিরভাগ হাজি বয়স্ক এবং নানান শারীরিক জটিলতায় ভোগেন তাদের কিছু কিছু উপসর্গ দেখে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিন। যদি দেখা যায় মুখ বা শরীরের কোনো অংশ দুর্বল লাগছে কিংবা একটি চোখ বন্ধ করতে কষ্ট হচ্ছে, পানি পান করার সময় মুখ দিয়ে গড়িয়ে বাইরে পড়ছে, বুঝতে হবে তিনি স্ট্রোকের শিকার হতে যাচ্ছেন। তাঁর হাটা-চলা বন্ধ করে দিন। দ্রুত কোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান।


(হিট স্ট্রোকে আক্রান্তকে প্রাথমিক সেবা দিন)

যদি বুকে ব্যথা হয় এবং ব্যথা যদি এক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় তাহলে সব কাজ বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে বলুন, লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে আস্তে আস্তে ছাড়তে বলুন, দ্রুত হাসপাতালে নিন।

যাদের ডায়বেটিক আছে তারা ওষুধ বেশি করে নিয়ে আসুন; যেহেতু হজ্জ্ব এর আনুষ্ঠানিকতা সারতে অনেক সময় লাগে, প্রচুর পরিশ্রম করেন অথচ যথেষ্ট খাবারের সুযোগ পান না, তখন সুগার কমে যাবে। তেমন হলে খুব দুর্বল লাগবে, ঘাম দেবে, মানসিক বৈকল্য দেখা দেবে। এমন হলে মিষ্টি জাতীয় কিছু দ্রুত খেতে দিন।

আবার ওষুধ না খাওয়ার জন্য সুগার বেড়ে যেতে পারে। তখন বুক ধরফর করবে, পেট ব্যথা করতে পারে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব এর বেগ দেখা দেবে। এমন হলে সাথে সাথে ভুলে যাওয়া ওষুধ কিংবা ইনস্যুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হবে।

যাদের আ্যজমা বা হাপাঁনি আছে তাদের ধুলোবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। যেসব খাবারে এলার্জি আছে সেসব খাবেন না। সব সময় সাথে ইনহেলার রাখবেন।

যতটা সম্ভব কাপড় বা মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন। আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশ থেকে অনেকে ভয়াবহ ম্যানিনজাইটিস, ইয়েলো ফিভার এর মতো ভাইরাস নিয়ে আসেন যা সহজে আপনাকে আক্রান্ত করতে পারে।

আপনি পুরোটা সময় সৌদি আরবের স্বাস্হ্য মন্ত্রণালয়, রেড ক্রিসেন্টসহ সব ধরনের স্বাস্হ্যসেবা পাবেন। সমস্যাটি হবে ভাষাগত। তাই আপনার চিকিত্সা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপত্র সাথে রাখুন।

জরুরি প্রয়োজনে আপনার মোবাইল কিংবা ল্যান্ডলাইন থেকে 997-এ ফোন করুন, অ্যাম্বুলেন্স হাজির হয়ে যাবে।

999-এ পুলিশ কে পাবেন। হজ্জ্বের সময় এরা এত্তো সুন্দর সেবা দেবে যে পুলিশ সম্পর্কে আপনার ধারনাই পাল্টে যাবে।

প্রত্যেক নামাযের আগেভাগেই নামাযের জন্য হাজির হোন যদি আপনি হারাম শরীফের ভিতরে কাবা শরীফের কাছাকাছি জায়গা থেকে নামাজ আদায় করতে চান।

মদিনায় মসজিদে নববী এশা'র নামাযের কিছু পরে সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। আবার তাহাজ্জুদ নামাযের আগে খোলা হয়। নামাজ আদায়ের জন্য আপনাকে অবশ্যই আগেভাগে মসজিদে নববীতে আসতে হবে।

মহিলা হাজিদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর রওজা মোবারক পরিদর্শনের জন্য বিশেষ সময়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

হারাম শরীফের মধ্যে বক্স, জিনিসপত্রের থলে, কেনাকাটার ব্যাগ এবং পিঠে বহনযোগ্য ব্যাগ বহন করা নিষিদ্ধ।

আপনার আয়োজক সৌদি আরব থেকে ফেরার জন্য আপনার রিজার্ভেশন ঠিক করে রেখেছে কিনা তা নিশ্চিত হোন। ফ্লাইট বিড়ম্বনার কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশী হাজিদের জেদ্দা বিমান বন্দরের বাইরে খোলা আকাশের নিচে অসহায় অবস্হায় অপেক্ষা করতে দেখা যায় যা মোটেও সম্মাজনক ও কাম্য নয়।

নির্ধারিত ওজনের বাইরে মালামাল কিনে থাকলে উচ্চহারে ওয়েট চার্জ দিতে প্রস্তুত থাকুন।

আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা আপনার হজ্জ্ব কবুল করুন, হজ্জ্বের পরিপূর্ণ সওয়াব আপনাকে দান করুন এবং হজ্জব্রত পালন আপনার জন্য সহজ করুন। আমিন!