শিক্ষা ভবনের ছায়াতেই যে শিশুটির বাস, তার শিক্ষা নিশ্চিত করবে কে?

সাজিদ রাজু
Published : 2 Jan 2017, 02:25 AM
Updated : 2 Jan 2017, 02:25 AM

ফুটপাতের পাশেই যে কাটাতারের বেড়া, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার দেয়াল, সেটি তার ঘরেরও দেয়াল। বিপরীত পাশে দুটো ইট দিয়ে মশারির দু'পাশ বাঁধা। মশারির ঘর। ভেতরে গুটিশুটি কাথামুড়ি দিয়ে অঘোরে ঘুমায় এক খণ্ড নিষ্পাপ শিশু। সন্ধ্যা নামতেই তার চোখে রাজ্যের ঘুম। শীতের হিমেল বাতাসে সে ঘুম আরো গাঢ় হয় ভেজা মেঘের মতোই।

ছেলে ঘুমিয়ে পড়বে তাই, মা জাহানারার রান্নার তাড়াহুড়ো। কোনমতে দু'মুঠো চাল ফুটিয়ে মুখে তুলে দেয় তার বাপজানের। পাগল স্বামীর অনুপুস্থিতিতে এই একমাত্র সম্বল ধুলোর ধরায়। ধুলো মাখামাখি ফুটফুটে এক টুকরো হাসি, সারাক্ষণ ভরিয়ে রাখে চারপাশ। পাশ দিয়েই রিক্সার ক্রিং ক্রিং বেল, গাড়ির হর্ণ, বাসের ভেপু। তবুও ছেলেটির আধো আধো বোল, আম্মু আম্মু ডাক আর খিলখিলিয়ে ওঠা হাসি যেন আলাদা হয়ে কানে বাজে। এ নিয়েই নদী ভাঙ্গা চর থেকে রাজধানীতে এসে ফুটপাতে সংসার পেতেছে জাহানারা। কেবল জাহানারা নয়। এমন সংসারের সারি প্রেসক্লাব থেকে দোয়েল চত্ত্বর, কারওয়ান বাজার থেকে হাতিরপুল কিংবা রাজপথের ফুটপাতের নানা জায়গায়। তাদের কাছে বছরের শুরু বা শেষের কি আলাদা অর্থ আছে? খেলে বেড়ানো শিশুগুলোর কাছে তো নয়ই।

টেলিভিশনের খবরে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চোখে পড়লো কোমলমতি শিশুদের ভূবন ভোলানো হাসি। সে হাসি বছরের প্রথম দিন নতুন বই পেয়ে। খুশি গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে থাকা নানা বয়সী শিশুরা। নতুন বই হাতে পাওয়ার কেমন অনুভূতি, কেমন লাগে নতুন বই এর নতুন গল্পগুলো পড়তে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। হয়তো উচ্ছ্বল শিশুরাও বই হাতে পেয়েই বাড়ির দিকে, মায়ের পানে দিয়েছে ভোঁ-দৌড়! একটু বড়রা হয়তো স্কুলের মাঠেই এক দমে পড়ে নিয়েছে ছোট ছোট ছড়াগুলো। কেউ কেউ হয়তো এক বসাতেই চোখ বুলিয়ে নিয়েছে ছোট ছোট মজার গল্পগুলোর উপর দিয়ে। সে এক বিরল দৃশ্য নিশ্চয়ই।

এমন অনুভূতির বন্যায় ভাসতে পেরেছে কি সব শিশু? বাদ পড়েছে অনেক শিশু। ফুটপাতে মশারির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া শিশু, কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন দোকানে কাজ করা শ্রমিক শিশু কিংবা সারাদিন ফুল বিক্রি করে বেড়ানো হকার শিশু।

ভাল লাগতো যদি সব শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেতো। যদি আর কোন শিশুকে হকারের কাজ করতে হতো না কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি। ভাল লাগতো যদি সব শিশুর শৈশব হতো হেসে-খেলে-ঘুরে বেড়ানো। যদি হাতে শোভা পেতো সব শিশুর হাতে রঙিন বই। যদি দেখতে না হতো, খোদ শিক্ষা ভবনের দেয়ালের পাশে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায় বড় হতে থাকা পথশিশু।

সংবাদকর্মী