কাতার বিশ্বকাপ ২০২২: অভিযোগের কাঠগড়ায় ফিফা

সেলিম আহমেদ
Published : 2 June 2014, 05:52 PM
Updated : 2 June 2014, 05:52 PM

২০১০ সালে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ৪০ডিগ্রি তাপমাত্রার দেশ কাতারে যখন ২০২২ বিশ্বকাপের সিদ্ধান্ত ফিফা ঘোষণা করেছিলো, তখন থেকে ব্রিটেন সহ বিশ্ব মিডিয়া এবং বিশেষ করে প্রভাবশালী মিডিয়া টেলিগ্রাফ ফিফার বিরুদ্ধে ঘোষ ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছিলো। টেলিগ্রাফ ফিফা প্রধান সেপ ব্লাটারকে জুরিখে সরাসরি তিন বার একই প্রশ্ন বিগত সময়ে করলে তিনি তিনবারই কোন অনিয়ম ও ঘোষ লেনদেনের মাধ্যমে ২০২২ সালে কাতারে ও ২০১৮ সালে রাশিয়ায় ভেন্যু নির্বাচনের সিদ্ধান্তে কোন অনিয়ম ও ব্যত্যয় হয়নি বলে জানিয়েছিলেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত জুরিখে ফিফা এথিকস কমিটি বিশ্ব মিডিয়ার সামনে স্বীকার করলো কাতার বিশ্বকাপ ও রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে যে কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে এবং ব্যালট পেপারের ছবি সহ যে সব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেসবের প্রেক্ষিতে ফিফা এথিকস কমিটি ঘোষের লেনদেন সহ সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখবে।

প্রেস কনফারেন্সে খোদ সেপ ব্লাটার সহ এথিকস কমিটির পক্ষে মিঃ গার্সিয়া নিজেই আজ টেলিগ্রাফ সহ মিডিয়াকে এই সংবাদ জানিয়েছেন।

এদিকে বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো ২০১৮ রাশিয়া আর ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের সিদ্ধান্তে যে সব ঘুষের লেনদেন হয়েছিলো, তার কিছু কিছু তদন্তে বেরিয়ে আসছে, যা টেলিগ্রাফ, ফ্রান্স নিউজ২৪ সহ অন্যান্য পত্র পত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, যা রীতিমতো ফিফার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। টেলিগ্রাফ বলছে কাতার বিশ্বকাপের সিদ্ধান্ত পূণর্বিবেচনা করতে হবে। এ দাবী এখন বিশ্ব মিডিয়ায় জোরেশোরে আলোচিত হওয়ায় ফিফা বেশ বেকায়দায় পড়েছে। অথচ ২০১০ থেকে ফিফা বেশ চড়া গলায় সেই সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান কয়রে আসছিলো।

মাইকেল হুগের ছেলে কাতার হাসপাতালে চাকুরী ও কাতারে মুভঃ

২০১০ সালে ফিফা যখন আগামী ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন থেকে মাত্র তিন মাস পরেই ফিফার ২২ সদস্যের সর্বোচ্চ পরিষদের তখনকার প্রধান মাইকেল হগের ছেলে পিটার ডি হুগ কাতার হাসপাতালের সার্জারিতে চাকুরী লাভ করেন। তারপর পরই পিটার কাতারে স্থায়ী চাকুরী একই হাসপাতালে-কাতারের আসপিটার হসপিটাল লাভ করলে পরিবার সহ আবুধাবিতে মুভ করেন। কাতারের এই হাসপাতাল বিশ্ববিখ্যাত স্পোর্টস সাইন্স এবং ইনজুরির জন্য বিখ্যাত এবং অত্যাধুনিক এই হাসপাতালের মালিক কাতার ভিত্তিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ার যিনি ফিফার কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ডাঃ খলিফা জিহাম আইকুয়ারি আসপিটারের ডাইরেক্টর ছাড়াও কাতার অলিম্পিক এসোসিয়েশনেরও সভাপতি।

আসপিটার স্পোর্টস হসপিটাল এবং ডাঃ খলিফার সাথে ফিফার সম্পর্ক নিবিড় ২০০৯ সাল থেকে আর ফিফা কাতার বিশ্বকাপের সিদ্ধান্ত নেয় ২০১০ সালে, ২০১১ সাল থেকেই অভিযোগ ফিফার দিকে উঠে আসে মিডিয়ায় এই আসপিটার ও খলিফা ডাঃ কে নিয়ে।

ফিফার এক্সিকিউটিভ এর ১০ বছরের মেয়ের একাউন্টে ২ মিলিয়ন পাউন্ড পেমেন্টঃ

রিকার্ডো টুক্সেরিও ছিলেন ফিফার এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য, যার ভোটিং ক্ষমতাও ছিলো, ২২ সদস্যের সেই ভোটিং ক্ষমতার একজন ছিলেন তিনি। তিনি আবার ব্রাজিলের ফুটবল কমিটির প্রধান ছিলেন। তার মেয়ে আন্টোনিয়া উইগ্যান টুক্সেরিয়া ২০১১ সালে যার বয়স ছিলো মাত্র ১০ বছর। অথচ প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে টুক্সেরিয়ার মেয়ে আন্টোনিয়ার একাউন্টে ২২ জুন ২০১১ সালে কাতার থেকে তার সেভিংস একাউন্টে ২ মিলিয়ন পাউন্ড জমা হয়।

ব্রাজিলের পুলিশ যখন এই পেমেন্টের ব্যাপারে তদন্তে নামে রিকার্ডো তখন ফিফা থেকে পদত্যাগ করে আমেরিকার মিয়ামি পাড়ি জমান তদন্তের মুখোমুখি না হতে।

প্লাতিনির ছেলের কাতারের স্পোর্টস কোম্পানির মালিকঃ

২০২২ সালে কাতার  বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্তের পর পরই ফ্রান্স ফুটবল এসোসিয়েশন ও ইউইএফএর প্রেসিডেন্ট ফুটবলার মাইকেল প্লাতিনির ছেলে লাওরেন কাতারের জায়ান্ট স্পোর্টস কোম্পানির মালিক রাতারাতি বনে যান, অথচ প্লাতিনি ২০১০ সালে কোন অনিয়মের কথা অস্বীকার করে ফিফা প্রধান ব্লাটারের সমর্থনে মাঠে নেমেছিলেন।

জ্যাক ওয়ার্ণারের কাতার ফুটবল এসোসিয়েশন থেকে ২মিলিয়ন পাউন্ড পেমেন্টঃ

ফিফার এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাক ওয়ার্নার কাতারের অলিম্পিক ও ফুটবল এসোসিয়েশন কর্তৃক ২ মিলিয়ন পাউন্ডের পেমেন্ট লাভ, যা তার নিজের কোম্পানি এককভাবে ১.২ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ করে।

ব্লাটারের ঘোষণা ওয়ার্ণারের ৭২০,০০০ পাউন্ডের তদন্ত হবেঃ

জুরিখে ফিফা প্রধান সেপ ব্লাটার এবং এথিকস কমিটি নিজেই স্বীকার করে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাক ওয়ার্ণারের ফিফা কর্তৃক বিশ্বকাপ ২০২২ আয়োজনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পাঁচ দিন পরেই কাতার কর্তৃক ৭২০,০০০ পাউন্ড পেমেন্ট গ্রহণের তদন্য করবে।

এসময় সাংবাদিকেরা ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনে ও লন্ডনের টেলিগ্রাফে প্রকাশিত রিকার্ডো, প্লাটিনি আর অন্যদের ৫.৬ মিলিয়ন কেলেঙ্কারির বিষয়ে তদন্ত হবে কিনা জানতে চাইলে ফিফা এথিকস কমিটি স্বীকার করে সকল বিষয়েই তদন্ত হবে। ফিফার এ ঘোষণার পর পরই ফ্রান্স, লন্ডন সহ বিশ্ব মিডিয়ায় সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের সিদ্ধান্ত ফিফা হয়তো পূণর্বিবেচনা করতে পারে, যেহেতু ব্যাপকহারে অনিয়ম ও ঘুষ কেলেঙ্কারির দালিলিক প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি ভোট কেলেঙ্কারির ব্যালট পেপারও টাকার বিনিময়ে বিক্রির প্রমাণও টেলিগ্রাফ প্রকাশ করেছে, ফ্রান্সের ফুটবল ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে একই সাথে।

আজকে জুরিখে এথিকস কমিটির পক্ষে মিঃ গার্সিয়া যখন ষ্ট্যাটম্যান্ট সাংবাদিকদের সামনে দিতেছিলেন, তখন সেপ ব্লাটারও উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকেরা মিঃ গার্সিয়াকে ব্যক্তিগত কমেন্টের জন্য ঘিরে ধরলে তিনি বলেন, আপনারা ষ্ট্যাটম্যান্ট পেয়েছেন, তদন্তের শুরুতে আমি ব্যক্তিগত কোন কমেন্ট দিতে পারবোনা।

2nd June 2014, London.