সালাম চাচার দগ্ধ সন্তানেরা

এহসানুল করিম
Published : 1 Dec 2012, 02:41 PM
Updated : 1 Dec 2012, 02:41 PM

বাড়ির পাশেই সালাম চাচা'র ছোট্ট বাড়ি। মাত্র দুই মিনিটের পায়ে হাটা পথ। আমার পাঁচ বছর বয়সী ছেলের সাথে তার ভাল খাতির। তাকে দাদু বলেই জানে আর তিনিও প্রতিদিন মুমিতের খোঁজ খবর রাখতেন।

গত কোরবানী ঈদে গরু কিনবার পরে তার উৎসাহ ছিল দেখার মত। তিনি নিজ থেকেই গরুর দায়িত্ব বুঝে নিলেন। সকাল বেলা থেকে সন্ধ্যা অবধি তার সময় কাটলো গরুর পিছনে। নি:স্বার্থ দায়িত্ব পালন।

উনার তিন ছেলে আর এক মেয়ে। সবাই কোন না কোন পেশায় আছেন। বেশ ভাল ভাবেই আছেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন প্রবাসী পাত্রের সাথে। কিন্তু উনাকে দেখার সময় তাদের নেই। তার নিজের আয় রোজগার বলতে দুই ঘরের সামান্য ভাড়া। সেই ভাড়াতেও প্রতি মাসে ভাগ বসাতো কোন না কোন ছেলে। তিনি ভাড়ার টাকা থেকে নিজের জন্য যতটা খরচ করতেন তার চাইতে অনেক বেশী খরচ করতেন নাতি-নাতনীদের পিছনে।

সালাম চাচা একটা বিশাল অপরাধ করে ফেলেছিলেন। ঈদের ছুটিতে তার ঘরের কিছু কাজ করিয়ে লেবারদের পারিশ্রমিকের সাথে দুইশত টাকা বকশিস দিয়েছিলেন। উনার টাকা থেকেই দিয়েছিলেন। বিষয়টা উনার এক ছেলে ও একমাত্র মেয়ের সহ্য হয় নাই। তারা তাকে কটু কথা শোনাতে থাকে। তিনিও কিছু কিছু কথার জবাব দেন। তবে তার সবচাইতে বড় অভিযোগ ছিল নিজের নিয়তির প্রতি।

সকালে সৃষ্টি হওয়া কথা কাটাকাটি দুপুরে এক তরফা বাক্যবানে পরিনত হয়। সালাম চাচা চুপ থাকেন এবং তাদেরও চুপ থাকতে বলেন। কিন্তু চুপ থাকার পাত্র তারা নয়। এই বাক্যবান থেকে বাঁচার জন্য তিনি বাড়ির বাইরে বের হতে গেলে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যান। উনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার বা উনার মাথায় সামান্য পানি ঢালবার সময়ও তাদের হয় নাই। উনার স্ত্রী আর প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসার আগেই তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

তার তিন ছেলে আর এক মেয়ে খুব বড় করে চেহলাম আর কুলখানির আয়োজন করেছিল। তাদের মাথা ছিল নত হয়ে। প্রচন্ড দু:খে ভারাক্রান্ত ছিল তাদের মন। কৃত অপরাধ তাদের সারা জীবন দগ্ধ করবে। অনুতাপে দগ্ধ হওয়া ছাড়া তাদের আর কি'ই বা করার আছে।

সন্তানরা যেন অনুতাপে দগ্ধ না হয় তার জন্য পরকাল থেকেই সালাম চাচা পরম করুণাময়ের কাছে হয়তো দোয়া করবেন। বাবা আর মা'রাতো এমনই হন।

পুনশ্চ:
১) ঘটনা সত্য। তবে উনার নাম সালাম নয়। প্রকৃত নাম গোপন রাখা হল।
২) এখন থেকে প্রতি শনিবারেই নিয়মিত লিখবো সরল জীবন, সহজ যাপন। আর 'অক্ষমের মন্তব্য প্রতিবেদন' আগের মতই অনিয়মিত চলবে।

———————————————————————————–
এই পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।