গতকাল পালিত হলো বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় উৎসব "বাংলা নববর্ষ"। হিন্দুয়ানি উৎসব , বিধর্মীদের উৎসব ইত্যাদি নানা অভিধায় অভিষিক্ত করে একটি চক্র বাঙালির হাজার বছরের এই ঐতিহ্যকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে। তারা রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। কিন্তু তাদের অপপ্রচার, চোখ রাঙানিতে বৈশাখের আবেদন এতটুকু কমেনি বরং বেড়েছে।
আজ বৈশাখ মানে ঈদ-পূজোর মত কেনাকাটার ভী্ড়,পহেলা বৈশাখ মানে ইলিশ নাহোক পাটশাক, শুঁটকি ভর্তা বা আরো অন্যান্য ভর্তা দিয়ে সকালের পান্তা। আমরা যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন গ্রামের মানুষের মাঝে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার প্রচলন দেখিনি। তবে ছোটকাল থেকে দেখে এসেছি পহেলা বৈশাখকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে পালন করতে। বিভিন্ন প্রকার শাক খেতে হবে, নখ কাটা যাবে না, সামর্থ্য অনুযায়ী ভাল খাবার খেতে হবে ইত্যাদি অঞ্চলভেদে নানা প্রকার আচার দিয়ে পালন করা হতো পহেলা বৈশাখ । আজ গ্রাম-শহর সর্বত্র মঙ্গলশোভাযাত্রা, রঙ -বেরঙের পোষাক পড়া বৈশাখী আচারের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশাখকে হিন্দুয়ানি উৎসব বলে যারা প্রচার করে তাঁদের কথায় বিশ্বাস করে কেউ পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশের রাস্তায় বের হলে বাংলাদেশকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মনে করে ভুল করবে -এতে কোন সন্দেহ নাই।
ইলিশের চড়া দাম যে নববর্ষ পালনে বাঁধা হতে পারবে না তা প্রমাণ করে দিয়েছে এবারের বৈশাখ। যেন স্থবির হয়ে গেছে পুরো রাজধানী। আলাদা একটা সৌন্দর্য ধারণ করেছে শহরের প্রতিটি অলি-গলি। তীব্র যানজট, ২০ টাকার রিকশা ভাড়া ১০০ টাকা তবুও কোন অভিযোগ নাই। সবার মুখে হাসি। হাসিমাখা কণ্ঠেই মানুষ বৈশাখের নাগরিক ভোগান্তির কথা বলছে , মেনে নিচ্ছে।
বর্ষবরণে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল। কোথাও কোন মারামারির খবর আসেনি, আমরা আধিপত্য বিস্তারের কোন খবরও পাইনি। সন্ধ্যার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একজন তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা অথবা শ্লীলতাহানি হয়েছে। আর তাতেই ধুন্ধুমার। কিছু অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার কাছে মনে হলো এটাই আজকের সবচেয়ে দামি সংবাদ ।বর্ষবরণের লিড নিঊজ। ফেসবুকে তাদের ভেরিফাইড পেজে নানা রঙ চড়িয়ে খবরটি প্রচার করতে লাগল। আর শেখ হাসিনার বাপ দাদাকে গালি দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা ফেসবুক ব্যবহারকারীরা পেয়ে গেল মওকা। বর্ষবরণ পাপ ,এটা আল্লাহর লানত, কেউ কেউ ঐ অচেনা তরুণীকে গালি দিতে ছাড়ল না। কেউ একবারের জন্য সেই যুবকদের কথা বলেনি যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত। তাদের কমেন্টের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে কোন মেয়ে বৈশখের অনুষ্ঠানে গেলে তার পরিধেয় বস্ত্র খুলে নেয়া ইসলামে জায়েজ আছে।
অনলাইনে বিভিন্ন পেইজ, তথাকথিত সংবাদপত্রগুলোর সংবাদ প্রকাশের ধরণ দেখে সন্দেহ করাই স্বাভাবিক এটা বোমা হামলার মতো পরিকল্পিত ঘটনা কিনা? বাঙালির প্রাণের উচ্ছাসকে বিতর্কিত করার জন্য কি এই ঘটনা? পত্রিকায় প্রচারিত সংবাদ মারফত জানা যায় ৩০-৩৫ জন সংঘবদ্ধভাবে এই কাজ করেছে। এরা কারা? তদন্ত হওয়া দরকার। এতো পুলিশি নিরাপত্তার মাঝে কেনো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এলাকায় অভিজিত হত্যা , নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে এই বিষয়টি নিয়েও ভাবার অবকাশ আছে। সর্বোপরি দেশের অনলাইন মিডিয়া গুলোর সংবাদ প্রকাশের নীতিমালা তৈরি এবং এদের উপর নজরদারি করার ব্যবস্থা গ্রহন করাও সময়ের দাবি। ব্যাপারটা খুব কঠিন নয় কারণ অল্প কিছু সংবাদ পোর্টাল এই ধরণের মানহীন সংবাদ প্রকাশ করে।
তথ্যসূত্রঃ
১।https://www.facebook.com/nayadiganta/photos_stream
২।https://www.facebook.com/newbasherkella/photos/a.428857090535594.1073741828.428835640537739/875489142539051/?type=1&theater