সমাজে নানান মতের লোক থাকবে, যেমন বাগানে ফুটে থাকে নানান রঙের ও গন্ধের ফুল, আমরা দেখে মুগ্ধ হই, সুবাসে হই মোহিত। আমাদের তেমনি কাঙ্ক্ষিত বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে যখন আঘাত আসে, আমি ভীষণ সঙ্কুচিত হয়ে যাই। আমি আমার সমাজ, আমার দেশটাকে চিনতে পারি না। ভাবি, এটা কি আমার সমাজ? এটা কি আমার দেশ? এটা কি আমার সেই কাঙ্ক্ষিত সমাজ? স্বপ্নের স্বদেশ? ক্ষোভে দুঃখে বলে উঠি, এই সমাজের কূপমন্ডুকতাসমূহ, হীনমন্যতাসমূহ বুঝি আজও গেল না।
আমি আমার যাপিত সমাজে কোনো কূপমন্ডুকতা, অবিনয়, মননহীনতা, অনুদারতা, বর্জন, জঙ্গিবাদ, রেডিকেলিজম বা আমূল সংস্কারবাদ, পরমত অসহিষ্ণুতা যখন দেখি, সঙ্কুচিত হয়ে যাই। মনে পড়ে, আমরা আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষকের কক্ষে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন এ ধরনের প্রবণতাসমূহ নিয়ে সমালোচনা করেছিলাম। আমরা তখন তরুণ বয়সী শিক্ষার্থী। আমার শিক্ষক বয়সে পরিপক্ক, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, তাই তাঁর ঋজু কণ্ঠের সমালোচনা আর ক্ষোভটা এখনও মনে পড়ে গেল। এখনও যখন দেখি এগুলো আমাদের সমাজকে গ্রাস করে আছে, সঙ্কুচিত হয়ে যাই।
আমি প্রত্যাশা করি, স্বপ্ন দেখি এমন একটি সমাজের আমি একজন সদস্য, যে সমাজের মানুষ নম্রতায় সেরা, পূর্বসরীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে গর্ববোধ করে। যে সমাজের মানুষ, কারো কাছ থেকে জ্ঞান, মনন, মনীষার ছিটেফোটা পেলেও তার ঋণস্বীকার করে। যে সমাজের মানুষ প্রতিবেশীর ছিদ্রান্বেষণ করে না, তার ভালোর জন্য প্রশংসা করে, তার উন্নয়নের দিকগুলোর উপর মতামত দেয়, সমালোচনা করে গঠনমূলক, সরাসরি। এমন একটি মননশীল, উদার, বিনয়ী, গ্রহণশীল, ইতিবাচক ও পরমতসহিষ্ণু সমাজের অপেক্ষায় ছিলাম, আছি, থাকবো, যতই আসুক ভুল আঘাত।