সমস্যাবৃক্ষ তত্ত্ব: সমস্যাকে জিইয়ে রাখে, প্রতিষ্ঠিত করে, মূলোৎপাটন করে না

শহীদুল্লাহ শরীফ
Published : 29 Nov 2014, 08:03 AM
Updated : 29 Nov 2014, 08:03 AM

আমাদের সমাজে কোনো (অধিকাংশ) সমস্যারই মূলোৎপাটন হয় না, মূল জায়গায় আঘাতও করা হয় না। আমাদের একেকটি করে জাতীয় সমস্যাগুলো উপলব্ধি করুন সমস্যাবৃক্ষ তত্ত্ব বুঝতে পারবেন।

আমাদের সমাজদেহের মাথাগণ কি সমাজ-সমস্যার প্রধান সুবিধাভোগী? তাই কি প্রকৃত সমাধানে উদ্যাগী নন। তাঁরা সমস্যার জন্ম দেন বা না দেন; সমস্যার জন্মকে অনেকে মনে হয় স্বাগত জানান, লালন করেন, বাঁচিয়ে রাখেন। সমাজ-সচেতন লোকজন এর বিরু্দ্ধে সোচ্চার হলে সমস্যাবৃক্ষের উপরে উপরে ডালপালা কাটেন, পাতা ছাটেন, সচেতন জনগণের দাবি মানেন, সাময়িক সমাজের চাপ ও দায় সারেন। তাই কিছু দিন পরই আবার ঐ সমস্যা আগের মতো ফুলে ফেঁপে জেগে ওঠে। হয়ত আবার সমাজ সচেতন মানুষের চাপে আবার সমস্যাবৃক্ষ বাঁচিয়ে রেখে, উপরে উপরে ডালপালা কাটি, সচেতন জনগণের দাবি মানি, সাময়িক দায় সারি। আবার কিছু দিন পর ঐ সমস্যা আগের মতো ফুলে ফেঁপে জেগে ওঠে। এই চক্রাকার সমস্যা ফিরে ফিরে আসা বা ফিরিয়ে আনা দেখে এক সময় আর কেউ কিছু বলে না। সমস্যাটাকেই শাশ্বত হিসেবে সবাই মেনে নেয়। সমস্যাবৃক্ষকে বাঁচিয়ে রাখা ও সমস্যাকে শাশ্বত রূপ দেওয়ার এই সূত্রটি বড়ই কার্যকর, খুবই সফল। এতে সমস্যাবৃক্ষের মালিক-সমিতি ও ক্ষমতাসীন উভয়েরই লাভ; শুধু সমাজটা পিছিয়ে যায়। এভাবেই চলছে, যত দিন এই অশুভ সূত্রের কার্যকর প্রয়োগ হবে, তত দিন অকার্যকর হবে আমাদের যত শুভ উদ্যোগ। সমস্যা-বৃক্ষের মূলোৎপাটন করতে না পারলে তা ফিরে ফিরে আসবে; এক সময় তা শাশ্বত রূপ লাভ করতে পারে।

উদাহরণ/যেমন ধরা যাক আমাদের শিক্ষা সেক্টরের বর্তমান সমস্যা। আমাদের একজন শিক্ষামন্ত্রী (যার অবস্থা ঐ লোকটার মতো যিনি  আশেপাশে যে কারো  মোবাইল ফোন বেজে উঠলেই ধরে হ্যালো হ্যালো শুরু করেন। কথা বলেন। কিন্তু একবারও ভাবেন না ওটা কি তাঁর ফোন। সবাই হাসে। মজা পায়।) তিনি (যদিও প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর মন্ত্রণালয় নয়) প্রশ্নপত্র ফাঁস সমস্যার মূল কারণ নিয়ে কথা বলছেন না (সেটা সমস্যা আড়াল করতে নাকি সমস্যা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে কে জানে); এমনকি ডালপালা নিয়েও না, তিনি তীর ছুঁড়ছেন শূন্য আকাশের দিকে। এক শিক্ষককে জানতাম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার শাস্তি হল, সমানে যাকে পান তাকে ধরে দু ঘা দেন, সে অন্যায়কারী হোক আর না হোক। আরে ভাই, ফেইসবুক কী দোষ করল? এটা তো একটা মাধ্যম। একে ব্যবহার করেছে সবাই যে যার কাজে, অকাজে…। যে প্রশ্ন ফাঁস করেছে তাকে ধরুন, মারুন ও শাস্তি দিন। হায়রে আমার দেশ, সেলুকাস! এমনই দেশের শিক্ষা ও নেতৃত্বের হাল হকিকত।

প্রশ্ন ফাঁস সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করা হয় না ফলে মূলোৎপাটন হয় না। পরিণামে একই সমস্যা প্রশ্ন ফাঁস ফিরে ফিরে আসে।

এটা শিক্ষা শুধু নয় প্রায় সব মন্ত্রণালয় সম্পর্কে, সব জায়গা সম্পর্কে প্রযোজ্য। এটা একটা জাতীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমস্যা। তারই প্রমাণ স্বরূপ দেখতে পাচ্ছেন পাশের আরেকটি পোস্ট: "পরিবেশের ধ্বংসের কারণ হয়ে পলিথিন আবার ফিরে এসেছে।" এটা সমস্যাবৃক্ষ তত্ত্বের উদাহরণ ও পরিণাম। এখন আর কেউ তেমন পরিবেশের ধ্বংসের কারণ হয়ে পলিথিন আবার ফিরে এসেছে বলে চিৎকার করছে না। গা-সহা হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসটা কী হয় দেখা যাক। যেভাবে সমস্যাকে সমস্যা বলে স্বীকারই করা হচ্ছে না। তাতে অপেক্সা করতে হবে কী দাঁড়ায় সেজন্য।

সমস্যাবৃক্ষ তত্ত্ব ও তার ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখে আপনিও অনুসরণ করতে পারেন যদি সমাজ-প্রশাসনের কেউকেটা কেউ হন। আপনার ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখে সমাজের মানুষ জ্বলে পুড়ে মরবে।

অন্যদিকে যারা সমাজের সমস্যা নিয়ে সজাগ সোচ্চাকন্ঠ

তাদের সমস্যা-বৃক্ষের মূলোৎপাটন করার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। না হলে একই সমস্যা ফিরে ফিরে আসবে; এক সময় তা শাশ্বত রূপ লাভ করতে পারে। এমনকি ঐ সমস্যাবৃক্ষটি সমাজে আর সমস্যাবৃক্ষই থাকবে না। সে একটি গা-সহা বৃক্ষ এমনকি সুন্দর সুদৃশ্য বৃক্ষ হিসেবে সমা

দৃতও হতে পারে।