মাকসুদুল আলম, বিশ্বসমাদৃত বাঙালি বিজ্ঞানী, তোমাকে সালাম ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

শহীদুল্লাহ শরীফ
Published : 21 Dec 2014, 08:17 AM
Updated : 21 Dec 2014, 08:17 AM

সোনালি আঁশের সোনালি মানুষ মাকসুদুল আলম আমাদের জন্য সুসংবাদ হয়ে এসেছিলেন। হঠাৎ দুঃসংবাদ হয়ে চলে গেলেন। যেখানে গেলে আর কেউ ফের না, সেই না ফেরার দেশে। তাঁর চিরবিদায় আমাদের বাংলাদেশের জন্য, বিশ্বের বিজ্ঞান চর্চা বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে জিন-নকশা আবিষ্কারের ধারায় একটি মর্মান্তিক দুঃসংবাদ। যাঁর নেতৃত্বে পাটের জিন-নকশা আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ। খবরটি আমাদের জন্য সত্যিই সুখবর ছিল। গর্বের বিষয় ছিল। আর এ আবিষ্কারের নায়ক ছিলেন ড. মাকসুদুল আলম। আজ সকালে (২১ ডিসম্বের ২০১৪) খবরটা দেখেই চমকে উঠলাম। তিনি যে অসুস্থ ছিলেন জানতাম না। বয়সও তো খুব বেশি নয়।

মাকসুদুল আলম এর মতো একজন দেশপ্রেমী, জ্ঞানী, নির্লোভ, নিবেদিতপ্রাণ বিজ্হানী এত আগে চলে গেলেন যাকে আমাদের বাংলাদেশ শুধু নয় সারা বিশ্বের খুব প্রয়োজন ছিল।

বাংলাদেশের সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমকে আমরা জেনেছি চিনেছি যখণ তারও আগে তিনি বিশ্বের অনকে দেশের অনেক কিছু যেমন পেঁপে ও রাবারের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী হিসেবে সাফল্য অর্জন করেছিলেন।

পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের আগে কয়েক বছর ধরেই মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে বসেই তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ২০০৮ সালে দেশের ৪২ জন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে তৈরি 'স্বপ্নযাত্রা' নামক একটি উদ্যোগের মাধ্যমে এই গবেষণার সূত্রপাত।

২০০৯ সালের নভেম্বরে প্রথম আলোর বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের রাবারের জীবনরহস্য উন্মোচন ও পাট নিয়ে গবেষণার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী মালয়েশিয়ায় মাকসুদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে দেশে এসে গবেষণা শুরু করার আহ্বান জানান। পরে ২০১০ সালে নতুন উদ্যমে আবারও গবেষণাটি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিভাগের ১১ জন গবেষক ও ডাটা সফটের ২০ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তথ্য বিশ্লেষণের কাজগুলো করেছেন।
শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও ডাটা সফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কাজগুলো তত্ত্বাবধান করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান এর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা, বেসরকারি সংস্থার প্রযুক্তিবিদ্যা ও সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করে কীভাবে সফল হতে পারে, পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন তার একটি বড় উদাহরণ।

ঢাকার পাশের কামরাঙ্গীরচরের টিনের তৈরি ছোট্ট শখের গবেষণাগার থেকে মাকসুদুল আলম পৌঁছে গিয়েছিলেন রাশিয়া, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র হয়ে মালয়েশিয়ার বড় বড় গবেষণাকেন্দ্রে। পেঁপে, রাবার ও সর্বশেষ পাটের মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ফসলের জীবনরহস্য উন্মোচন করে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই গবেষক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী জার্নাল ন্যাচার মাকসুদুল আলমকে নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাঁকে 'বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবক' হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। যাকে নিয়ে আমরা শুধু গর্বই নয়, যার নেতৃত্বে আমরা আরও কিছু আবিষ্কারও করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের এ সময়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানীকে আমরা অকালে হারালাম।তার কাছ থেকে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব আর অনেক কিছু পেতে পারত।

নিয়তির কাছে আমরা নিরুপায়। তাই মৃত্যরে পর তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি অন্তর থেকে।

সেই সাথে তাঁর উত্তরসুরি বিজ্ঞানীরা যেন তাঁর কাজ থেকে প্রেরণা নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যান এই কামনাও করছি।