এলাকার মানুষজনের কাছে ওরা ’খরগোশ শিশু’

শাহিন বাবু
Published : 22 Oct 2016, 08:04 PM
Updated : 22 Oct 2016, 08:04 PM

বাবা মায়ের সাথে রুপা এ্ং মিম

রুপা একটু গম্ভীর হলেও মিম চঞ্চল বেশি

টেলিভিশন যেমন প্রিয় তেমনি অবসর পেলেই রুপা মিম লুড খেলতে বসে যায়

খরগোস শিশু হিসেবেই চিনছে এলাকার মানুষজন ওদের । দু বোনের বয়সের দুরত্ব ৯ বছর হলেও দুজন দুজনার । ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাওয়া অবধি খেলার সাথি …

রুপা খাতুন বয়স ২৬ বছর । আর মিম খাতুন – এর বয়স ১৭ বছর । তারা দুই বোন । দেখলে যে কেউ মনে করতে পারে হয়তো টুইন বেবি ।

রুপার উচ্চতা ৩১ ইঞ্চি এবং মিম এর উচ্চতা ২৬ ইঞ্চি । ওরা বাস করে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় । বাপ দাদার বসতভিটা বাড়াদি ইউনিয়নের আঠারো ক্ষেদা গ্রামে । ওদের মায়ের নাম ফাতেমা বেগম ।

গল্পের শুরুটা এখোন থেকে ছাব্বিশ বছর আগে । ফাতেমা বেগমের কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান । সেটি ছিলো প্রথম সন্তান – মা হওয়ার প্রথম অনুভূতি । কিন্তু আকার আয়তন আর শারিরীক ওজন অনেক দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয় পুরো পরিবারটিকে । ভুমিষ্টের সময় ওজন দেখা যায় মাত্র দেড় কিলো । সে পর্যন্ত শেষ কথা নয় । দিন যত যায়

ততই যেন জটিলতা বাড়তে থাকে । হরমোন জনিত একটা প্রবল সমস্যা অবশ্য তাকালেই বোঝা যায় । গলার কন্ঠস্বর অস্বাভাবিক চিকন, হাতের দুই কনুই এর হাড় একটু খানি বেড়িয়ে আসা । মাথার চুলও অনেক হালকা । এমন কিছু ব্যতিক্রম চোখে পড়তে থাকে । মাস গড়িয়ে বছর আসে – কেটে যায় অনেক সময় কিন্তু আদরের সন্তানের শারিরীক বিকাশ ঘটেনা । যদিও চলাফেরায় কথাবার্তায় তেমন কোন সমস্যা দেখা যায়না ।

প্রথম সন্তানের প্রসবের সময় ফাতেমা বেগমের ২২ বছর বয়স । নিয়মিত চেক-আপ বা আল্ট্রা সোনোগ্রামের কোন সুযোগ ছিলোনা । একবারে নিভৃত পল্লী । সে সময়টাতে চলাফেরা ছিলো অনেক কঠিন । ভাঙ্গা চুড়া কাচা পথ । নগর সুবিধা বলতে সেই জেলা শহর চুয়াডাঙ্গা ।

ছিলোনা নিয়মিত ডাক্তার দেখানোর কোন তাগিদ ।  ১ম সন্তান রুপার গর্ভপাত  গ্রামের দাই দিয়েই করানো হয় । এক্ষেত্রে যথেস্ট সচেতনতার অভাব ছিলো পরিবারটির মধ্যে ।

ফাতেমার বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ একজন কৃষক । অল্প পড়া শোনা জানা একজন । তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে ডাক্তার দেখানো চিকিতসা চালায় পরিবারটি । এক সময় তারা ধরে নেয় – এটা তাদের অদৃষ্ট । যা কপালে ছিলো তাই হয়েছে ।

https://www.youtube.com/watch?v=y4B-PGR5514

এরপর ৯ বছর পর আসে আরেকটি সন্তান । কিন্তু দেখা যায় ওর ও এই রকম সব উপসর্গ । জন্মের সময় ওজন ছিলো প্রায় দেড় কিলোর মতো ।এবার আব্দুর রশিদ এবং ফাতেমা

উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে । বাংলাদেশে এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও চিকিৎসকদের শরনাপন্ন হয় তারা । ফাতেমা বেগম জানায় – তাদের বয়স বাড়লেও চেহারার গড়ন শিশুদের মতো । তবে চলা ফেরায় কোন শারিরীক জটিলতা নেই । খাওয়া ঘুম অন্যদের মতোই স্বাভাবিক । তাদের শারিরীক গঠন নিয়ে গ্রামের অনেকেই হাসি তামাশা করে ।

তিনি বলেন – সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সময়ে তিনি নিয়মিত চেক আপ বা হাসপাতালে যেতেন না । সন্তান গর্ভপাতের ঘটনাটিও তার বাসায় গ্রাম্য দাই দিয়ে সম্পন্ন হয় । রুপা এবং মিম সর্ম্পকে বলেন- তারা  টেলিভিশন দেখে লুডু খেলে-  সাদা কাগজে  আকিজুকি করে কলম চালিয়ে  সময় ব্যয় করে । তবে তাদের তেমন কোন বন্ধু নেই ।  দুজনই দুজনের বন্ধু । দিনের বেশির ভাগ সময় এক সাথে কাটায়। রাতে ঘুমোয় পাশাপাশি ।

তাদের মা আরো জানায় – বর্তমানে খাওয়ার পরিমান কমে গেছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন,  মানুষের জন্মের সময় মস্তিষ্কে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতির কারনে এ রকম  শারিরীক উপসর্গ দেখা দেয় । এর কার্যকর কোন চিকিতসা এখোনো আবিস্কৃত হয়নি । অনেক চিকিতসক হরমন জনিত সমস্যার কথাও বলেছেন তাদের। তবে প্রকৃত রোগ সর্ম্পকে তারা অবগত নয়।

সন্তানদের পিতা আব্দুর রশিদ জানান, তার মৃত্যুর পর সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি চিন্তিত । তিনি বলেন , তাদের চিকিৎসার পেছনে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখের বেশি অর্থ ব্যয় হয়ে গিয়েছে । তিনি একজন গরিব কৃষক তার পক্ষে আর এদের চিকিতসার ব্যয় বহন করা সম্ভব না । তাদের বাবা এটিকে ইশ্বরের আশির্বাদ হিসেবে মেনে নিয়ে শান্তনা খুঁজছেন ।

 Shahin Babu

Bangladesh Contributor,   CATERS NEWS AGENCY      http://www.catersnews.com

Bangladesh Contributor  Solent News and Photo Agency Southampton, UK