রোহিঙ্গা: মানবতা, মানবাধিকার, সমস্যা ও বাংলাদেশ

শাহরিয়ান আহমেদ
Published : 14 June 2012, 12:00 PM
Updated : 14 June 2012, 12:00 PM

"BENGALI TERRORISTS STATES ENEMIES " যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক 'দি টেলিগ্রাফে' এই ছবিটি গুরুত্ব সহকারে দুই দিন আগে ছাপানো হয়। মিয়ানমারের দাঙ্গার সাথে বাঙালিদের (বাংলাদেশীদের) নাম আগেও জড়ানো হয়েছে। পৃথিবীর সবচাইতে অবহেলিত জাতি রোহিঙ্গাদের বিপদে তাদের পাশে দাড়িয়ে, তাদেরকে আশ্রয় দিয়েই আমরা সন্ত্রাসী হয়ে গেলাম? কোথায় এখন জাতিসংঘ? কোথায় আমেরিকা? মায়ানমারে তেলের খনি থাকলে হয়ত তাদের দেখা মিলতো।

বার্মাতে দাঙ্গার খবর সারা দুনিয়ার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়, কিন্তু সেখানে প্রাধান্য পায় কেবলই দাঙ্গার ছবি। কী কারণে হচ্ছে, কী করনীয়, সরকারের ভূমিকা কী ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ খবর সামান্যই পাওয়া যায়।

মানবিক কারণেই আমরা চাই রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াতে। কারণ আমরা বাংলাদেশীর জানি শখ করে কেউ ভিটা মাটি ছেড়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় না। আমাদের মানবতা আছে বলেই লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা এখনো বাংলাদেশে আশ্রিত। মানবতাবোধ আমাদের অহংকার।

বিপদে এবং দুঃসময়ে মানুষ মানুষের পাশে থাকবে, আশ্রয় দিবে এটাই মানবতা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা, নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের দুর্দিনে তাদের আশ্রয় দিয়েছে, অস্ত্র দেয়নি। নিজ দেশের মানবাধিকার না থাকলেও অন্যদের জীবনের নিরাপত্তা দিয়েছি। হাজার হাজার মানুষ ভূমিহীন হলেও ওদের জন্য আমরা জায়গা দিয়েছি। আমরা প্রমাণ করেছি আমরা মানুষ, নিজেদের শত সমস্যা সত্বেও আমরা ওদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

আবারও একই রকম সমস্যা, হাজার হাজার রোহিঙ্গা সাহায্যের জন্য ছুটে আসছে বাংলাদেশের দিকে। ওরা শুধু জীবনে নিরাপত্তা চায়। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ লোকদের সাহায্য দরকার, একটু ঠাই দরকার। অনেক দূরের রাস্তা পারি দিয়ে, অনেক আশা নিয়ে বঙ্গোপসাগরের তীরে ছুটে আসা ট্রলার গুলোকে আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি বুক ভরা কষ্ট নিয়ে। অসহায়, অসুস্থ, আহত মানুষগুলোর জন্য খাবার, পানি, ঔষধ নিয়ে যেতে মনটা টানে। আমরা জানিনা তার কোথায় যাবে, কোথায় চলে গেছে। শুধু জানি তারা আরাকান বা রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে পারবে না। হয়ত সাগরে ভেসে কোনও একদিকে চলে যাবে।

মানুষ হিসেবে আমরাও তাদের জন্য কাঁদি, কষ্ট পাই। অনাহারী শিশুগুলার ক্ষুধার ছটফটানি, আহতদের আর্তনাদে হয়ত প্রকৃতিও কাঁদছে। অনেকেই না খেয়ে মরে যাবে, আহতরা চিকিত্সার অভাবে আর বাকিরা অসুখ বিসুখে। কিছু লোক বেচে থাকার জন্যই বেচে যাবে। নিয়তি তাদের বাচিয়ে রাখবে। বেচে যাওয়া মানুষগুলো হয়ে উঠবে প্রতিবাদী, প্রতিশোধ পরায়ণ, হিংস্র।

শাহরিয়ান আহমেদ
১৪.০৬.২০১২

ছবি- দি টেলিগ্রাফ। ইয়াহু 7 নিউজ। গুগল সার্চ।