ওরা মানুষ নয়, ওরা ট্রিগার বাহিনী : ৭ জানুয়ারি ‘ফেলানী দিবস।

পথহারা সৈকত
Published : 4 Jan 2013, 07:19 PM
Updated : 4 Jan 2013, 07:19 PM

সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশ ও প্রবেশ করল নতুন এক বছরে। নতুন বছরের শুরুতেই শুরু হয়েছে পুরাতন বছরের দেনা-পাওনার হিসাব মেলানোর। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের টানাটানি ছিল বিগত বছরের একটা উল্লখ যোগ্য বিষয় এবং বিগত বছর গুলির মত গত বছরও ছিল সীমান্তে বিএস্এফ এর বাঙ্গালী হত্যা উৎসব। এমন কি নতুন বছরের প্রথম প্রহরেই আমারা পেয়েছি এক জোড়া লাশের শুভেচ্ছা।ভারতের সাথে সীমান্ত আছে মোট ৬ টি দেশের বাংলাদেশ,পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমার। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক রয়েছে ভারতের সাথে পাকিস্থানের। সেই পাকিঃ সীমেন্তেও গত ১০ বছরে কোন বেসামরিক মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেনি যা অহরহ ঘটছে বাংলাদেশ সীমান্তে। সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং এর প্রতিবেদন অনুসারে গত দশ বছরের বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার চিত্রটা নিম্নরুপ।

২০০০ সালে ৩৯ জন
২০০১ সালে ৯৪ জন
২০০২ সালে ১০৫ জন
২০০৩ সালে ৪৩ জন
২০০৪ সালে ৭৬ জন
২০০৫ সালে ১০৪ জন
২০০৬ সালে ১ ৪৬ জন
২০০৭ সালে ১২০ জন
২০০৮ সালে ৬২ জন
২০০৯ সালে ৯৬ জন
২০১০ সালে ৭৪জন
২০১১ সালে ৩৪ জন
২০১২ সালে ৪২ জন

মোট ১২ বছরে ১০৩৯ জন গড়ে প্রতি বছর ৮৭ জন সাধারন জনতা বিএসএফ এর গুলি খেয়ে মারা গেছে। আর ২০১৩ এর ১ জানুয়ারীতে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফ তরিকুল ইসলাম (২৮) এবং মুক্তার আলম (২৮) নামের দুই বাংলাদেশীকে হত্যা করে। এই ঘটনায় আহত হয় আরও তিনজন। এর ঠিক ১ দিন পর বুধবার ভোর ৩টার দিকে আরও দুই বাংলাদেশীকে হত্যা করে বিএসএফ। এই হত্যাকন্ডের ঘটনায় আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম.খা. আলমগীর বলেন
বিএসএফ আক্রমণের জবাবে গুলি চালিয়েছে', বিএসএফ আত্মরক্ষায় গুলি চালালে কথা নেই।
এটাই হল আমাদের পররাষ্ট্রনীতি।

বিএসএফ যুগের পর যুগ আমাদের তথা বাংলদেশীদের হত্যা উৎসব চালাতেই থাকবে আর আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিনমিনে গলায় বলতে থাকবে বিএসএফ এর আত্মরক্ষার কথা। গোটা পৃথিবীতে কিলিং জোন হিসাবে খ্যাত ফিলিস্তিনি-'ইসরাইল সীমান্তেও এত বেসামরিক মানুষ হত্যা করা হয় না যা আমাদের সীমান্তের বন্ধুরা করে। ভারতের সাথে আরও অন্য যেসব দেশের সীমান্ত আছে সেসব সীমান্তে আমাদের বন্ধুরা ট্রিগার চাপার সাহস পান না। কারণ? তাদের হাত ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষমতা আছে সে সব দেশের আছে। আমরা ছোট দেশ, আমাদের ক্ষমতা ও কম তাই বলে কি আমারা প্রতিবাদ করব না? আমাদের যুবসমাজ কি মিছিল করেবে না? দাদাদের দেশে একজন মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় সেই দেশে ছাত্ররা রাজপথে মিছিল করেছে, আমাদের ছাত্রদের কি হল? এই সিরিয়াল কিলিং ( ৮৭ জন প্রতি বছর ) এর প্রতিবাদ কি আমরা করব না ? আমরা কি ভুলে গেছি ? আমরা কোন জাতি ?

কি ভুল ছিল ফেলানীর ? জীবন্ত ফেলানী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাঁটাতারে ঝুলে চার ঘণ্টা গোঙিয়েছে। ওর গোঙরানোর শব্দ যেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল পতাকার পত পত করে উড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। 'পানি' 'পানি' বলে চিত্কার করেছে ফেলানী। আর ছ'ঘণ্টা পরই ও মেহেদি রাঙ্গা হাত নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। অনাগত জীবনের স্বাপ্নিক মেহেদি যেন খুন হয়ে কাঁটাতারের ইথারে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছে ফেলানী। স্বাধীন দেশে দাঁড়িয়ে পরাধীন নূর হোসেন তার মেয়েকে কাছ থেকে এক বিন্দু পানি দিতেও পারেনি, হয়তবা অভিশাপ দিয়েছে নিজের ভাগ্যকে। নিজের সন্তান কে মৃত্যুর দেশে যাওয়া দেখেছেন ফ্যালফ্যাল করে। ফেলানী যেন ফেলানী নয় বরং বাংলাদেশ আর নূর হোসেন যেন নূর হোসেন নয়,বরং পুরা বাঙ্গালী জাতি।

মুক্তি যুদ্ধের ঋণ শোধ করে বন্ধুত্ব পেতে আর কত কিছু দেওয়া লাগবে দাদাদের ? আমরা উচ্চসূদে ঋণ, অসম বাণিজ্য চুক্তি,ট্রানজিট দিতে সরকারের শক্ত অবস্থান, পানি বণ্টনে উদাসীনতা সব মেনে নিয়েছি। এমনকি বিডিআর ধ্বংস করে বিজিবি করেছি। যে বিডিআর ৩ জন বিডিআর হত্যার জবাব দিয়েছিল ১৮ জন বিএসএফ হত্যার মাধ্যমে সেই বিডিআর এখন বিজিবি হয়ে বিএসএফ এর সাথে একত্রে টহল দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সহ প্রায় সব স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান গুলির আইটি খাত তুলে দিয়েছি তাদের হাতে। আর কত কিছু দিলে সীমান্তে হত্যা বন্ধ হবে?

আমরা খুজে খুজে দিবস পালন করি। আমরা কি পারি না ? আসছে ৭ জানুয়ারি নাম না জানা হাজারও ফেলানী দের জন্য, স্বাধীনতা রক্ষার শপথ নিয়ে একটি দিবস পারন করতে ? আজ স্বাধীনতার ৪১ বছর পরে এসেও আমারা বহু ভাগে বিভক্ত। বিদেশী প্রভুদের থাবা থেকে বের হওয়ার জন্য এবং স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পাএয়ার জন্য একটি শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য সময়ের দাবী। তবে সেই ঐক্যের দর্শন হতে হবে ন্যায় ও দেশপ্রেম। দেশপ্রেমের ভিত্তিতেই আমাদের একত্রীত হতে হবে এর এগিয়ে যেতে হবে আগামীর দিকে। এর জন্য আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি কিংবা অন্য কোনো দলের বাংলাদেশ দেখতে চাই না, চাই সবার বাংলাদেশ।

ধন্যবাদ
পথহারা সৈকত
গাজিপুর,বাংলাদেশ