রুবেল ও হ্যাপির সতিত্বের লড়াই

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 22 Dec 2014, 01:11 PM
Updated : 22 Dec 2014, 01:11 PM

সম্প্রতি বাজারে তোলপাড় তুলেছে রুবেল-হ্যাপির জিডি-মামলা কাহিনী। এটাকে প্রেমকাহিনী বলতে পারছি না। কারণ এ দু'জন তারকার আচরণ, ভাষ্য ও সরকারি নথিপত্রের বিরবণ অনুসারে তাদের পারস্পরির কাহিনীটা প্রেম কাহিনী নয়। রুবেলের মতে এটা প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিং। হ্যাপির মতেও এটা প্রতারণা। তবে সাধারণ শ্রেণির প্রতারণা নয়, প্রতারণার মাধ্যমে ধর্ষণ। প্রচার মাধ্যমে উভয়েরই ভাষ্য প্রচারিত হচ্ছে। তবে ক্রিকেট দলের সদস্য হওয়ায় রুবেল অনেকটাই সংযত। কারণ যে কোন উল্টাপাল্টা মন্তব্য তার পেশাগত জীবনের ইতি টানতে পারে।

এ দিক দিয়ে হ্যাপি অবশ্য অনেকটাই হ্যাপি। সে একজন ছাত্রী। আবার চলচ্চিত্রের নায়িকাও। তার পেশা হল স্বাধীন। সে মানুষের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে। রুবেলও তাই করে, তবে রুবেলের মনোরঞ্জন সরকারের উপর নির্ভর করে। জাতীয় দলে না থাকলে ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার নেই বললেই চলে।

মিরপুর থানায় মামলা করেছিলেন রুবেলই প্রথম। জিডির বিষয়বস্তু ছিল হ্যাপির সম্ভাব্য ব্ল্যাকমেইলিং এর বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ। হ্যাপির সাথে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে হ্যাপি তাকে ব্ল্যাকমেইলিং করতে পারেন বলে জিডিতে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

রুবেলের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণিত করে তার পরদিনই হ্যাপি মিরপুর মডেল থানায় রুবেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নিয়মিত মামলা করেন। মামলার অভিযোগ হল, রুবেল তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। এ জাতীয় ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হওয়ার ভুরি ভুরি নজির রয়েছে। তবে একই সাথে একজন সিনেমার নায়িকা কর্তৃক প্রতারিত হয়ে একজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে মামলা করাটা অবশ্য নজির বিহীন।

বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুসারে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেয়া আছে তাতে রুবেলের বিরুদ্ধে হ্যাপির ধর্ষণ অভিযোগ ধোপে টিকে না। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(ক) ধারার ব্যাখ্যা অনুযায়ী তিনি অবশ্য শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। নারী ও শিশু নির্যাদন দমন আইনের ব্যাখ্যানুসারে, যদি কোন পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতীত [ ষোল বৎসরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলক ভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা [ ষোল বৎসরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷

ব্যাখ্যার প্রথম অংশ হ্যাপির জন্য হ্যাপি হবার কারণ। কিন্তু তার মামলা করার উদ্দেশ্যটুকু তাকে এ আইনি লড়াইয়ে বেশি পিছিয়ে দিবে। যেমন, প্রচার মাধ্যমে হ্যাপি ঘোষণা করেছেন যে রুবেল যদি তাকে বিয়ে করে, তবে  তিনি মামলা তুলে নিবেন। তার ঘোষণা অনুসারে কোন অপরাধের প্রতিকার পাওয়ার জন্য তিনি মামলা করেননি। তিনি মামলা করেছেন রুবেলকে বিয়েতে বাধ্য করার জন্য। কিন্তু কাউকে বিয়েতে রাজি করারনোর মতো কোন  আইন বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় নেই। বিয়ে হল একটি শতভাগ সম্মতির বিষয়। যে কোন সমাজেই প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ সম্মত হলে দাম্পত্য জীবন শুরু করা যায়। তবে সমাজ, ধর্ম ও রীতি ভেদে দাম্পত্য জীবন শুরুর ধাপটির অনেক ভিন্নতা আছে। মুসলিম ধর্মমতে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ সম্মত হলে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষীর সামনে হলফ করলেই বিবাতি জীবন শুরু করার ছাড়পত্র পাওয়া যায়। তবে দেশের আইন ও প্রচলিত রীতি অনুসারে বিবাহ পড়ানো, বিবাহ রেজিস্ট্রি ইত্যাদির কাজ সমাধা করতে হয়। এই রুবেল-হ্যাপির ঘটনাটি এতদূর গড়াতে পারেনি। তবে দাম্পত্য সম্পর্ক বেশিদূর গড়াতে না পারলেও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

হ্যাপির ভাষ্যমতে, রুবেল তাকে বিয়ে করলেই তিনি মামলা তুলে নিবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে যারা বোঝেন তারা নিশ্চিয় বলবেন, তাকে ধর্ষণ করার অভিযোগটি তুলে নেয়ার কোন বিধান বাংলাদেশের আইনে নেই। বাংলাদেশের ফৌজদারি কোন অভিযোগকারী থানা শুধু অভিযোগ জানায়। মামলা চলবে কি না, কিভাবে চলবে এটার দায় কিন্তু বাদীর না। তাই হ্যাপি চাইলেই মামলার কার্যক্রম বন্ধ হবে না।

বিষয়টিকে ক্রিকেটার রুবেল কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন। তিনি ইতোমধ্যেঅস্থায়ী জামিন নিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি স্থায়ী জামিনও  পাবেন। কারণ, একজন সেলিব্রিটি হিসেবে তিনি নিজেকে গোপন রাখতে পারবেন না। যে সব কারণে একজন নাগরিকের জামিন পাবার অধিকার আছে, রুবেলের ক্ষেত্রে সবগুলোই উপস্থিত আছে। তাই তিনি জামিন পেতে পারেন।

চিত্র-তারকা হ্যাপি যদি বিষয়টিকে সতিত্ব হরণ হিসেবে বিবেচনা করে ধর্ষণ অপরাধের বিচার প্রার্থনা করতে পারেন, তাহলে ক্রিকেট তারকা হিসেবে রুবেলেরও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার অধিকার রয়েছে। এমতাবস্থায় তার উচিৎ হবে শেষ পর্যন্ত আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়া। আর এ ‍সুযোগে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরাও এ জাতীয় ঘটনাগুলোর শেষ পরিণতি কী হয় তারও একটা নজির দেখতে পাব।