পতিতা‬ নয়, যৌনকর্মী (এক)

সীমান্ত প্রধান
Published : 16 Nov 2015, 12:03 PM
Updated : 16 Nov 2015, 12:03 PM


গণিকা-বৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি, দেহব্যবসা অথবা পতিতাবৃত্তি পৃথিবীতে হাজারো বছর আগের একটি প্রথা। এই প্রথার উৎপত্তি ঠিক কবে ঘটেছিলো পৃথিবীতে? এমন প্রশ্নের উত্তর সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে যতদূর জানা যায়, মধ্যযুগীয় বর্বরতার গর্ভে অর্থাৎ সামন্তীয় সমাজে এর উৎপত্তি ঘটে।

আর এই প্রথার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিলো পতিতালয়, গণিকালয় বা বেশ্যালয়। কারো কারো ভাষায় এগুলো অন্ধকার গলি বা অন্ধকার জগৎ। যা পুরুষ-তন্ত্রের কল্যাণে; নষ্ট-ভ্রষ্ট পুরুষের কাম-বাসনা চরিতার্থর জন্য।

যে সমস্ত নারী কারণে বা অকারণে বা অর্থের বিনিময়ে শরীর বিকিয়ে দেয় এখানে, সমাজ তাদেরকে-পতিতা, গণিকা, বেশ্যা, রক্ষিতা, দেহপসারণীসহ নানা নামে ভূষিত করে।

অথচ যাদের জন্য তারা এসব নামে ভূষিত; সে সমস্ত কামুক পুরুষদের এ সমাজ কি বিশেষণ দিয়েছে? কেবল 'খদ্দের'! যা চরম বৈষম্য এবং পুরুষতান্ত্রিক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ।

এখানে রূপ আর যৌবনের জৌলুশ একমাত্র অবলম্বন। যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো, তারা যখন যৌবন হারিয়ে ফেলে; তখন তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ যন্ত্রণার খড়গ। যার হাজারো সাক্ষী রয়েছে পতিতা-পল্লীতেই।

এ পেশাতে কেউ কখন শখে আসে না। এখানে যারা আসে; তারা কোনো না কোনো ভাবে পুরুষদ্বারা প্রতারণার স্বীকার এবং অভাবের তাড়নায় তাড়িত। উপায়ন্তর না দেখে এই পেশাটাকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে এক শ্রেণীর মানুষ। যা হয়ে উঠে তাদের বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন।

বহু আগে নারায়ণগঞ্জ পতিতা-পল্লী (বিলুপ্ত)'র উপর এক ঘবেষণা চালিয়ে জানা গিয়েছে যে, বাবা মার সংসারে অভাব, সৎ মায়ের সংসার, স্বামীর নির্যাতন, প্রেমিকের প্রতারণা, অবুঝ অবস্থায় হারিয়ে যাওয়া এবং দুষ্ট লোকের খপ্পরে পরা নারীরাই এই নিষিদ্ধ গলির বাসিন্দা হয়ে উঠে। এরপর তারা ধীরে ধীরে হারাতে থাকে কৃষ্ণ গহ্বরে।

ওই ঘবেষণায় পাওয়া গিয়েছিলো, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, নড়াইল, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোরের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল এমনকি শহরেরও অনেক দিনমজুর পরিবারের মেয়েরা ছিলো ওই অন্ধকার গলির বাসিন্দা।

এখানে কারা আসতেন? এমন ঘবেষণায় দেখা গিয়েছিলো, রাজনীতিক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশেষ বাহিনী, পুলিশসহ সমাজের কথিত অভিজাত থেকে নিচুতলার সব শ্রেণীর মানুষই আসতেন পতিতা-পল্লীতে।

কামুকের দলেরা ক্ষণিক সুখের জন্য; কাম-বাসনা চরিতার্থের জন্য চেটে-পুটে খেতেন বারবনিতার শরীর; আর প্রকাশ্যে নাক সিঁটকিয়ে তারাই ওই সকল মেয়েদের ‌'বেশ্যা' বলে গালাগাল দিতেন! (চলবে)