জাতীয় কমিটির ৭ দফা, তারুণ্যের বর্জ্রকন্ঠ, কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে দাবি আদায়ের প্রত্যয়

শেখ মিজানুর রহমান
Published : 15 Jan 2017, 06:24 PM
Updated : 15 Jan 2017, 06:24 PM

'প্রযুক্তি দিয়ে সুন্দরবন রক্ষার রাজনৈকিত বক্তব্য দেশবিরোধী-
'আজ বুড়িগঙ্গার পানি কালো কুচকুচে, নোংরা। পানি স্পর্শ করলেই মনে হয় শরীরে ঘা হয়ে যাবে। যে সরকার ঢাকার পাশ দিয়ে যাওয়া এ বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে পারে না, ফারাক্কা-তিস্তা নিয়ে কথা বলতে পারে না, তারা কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করবে। সরকারের এমন যুক্তি হাস্যকর।'


সংগঠনের আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, 'বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদসহ সব মহল বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি দিয়ে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র
আমাদের ফেইসবুক পেইজ

ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অভিমত হলো, এখন পশ্চিমবঙ্গের যেখানে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন, একসময় সেখানে ছিল সমৃদ্ধ জনপদ। ব্রিটিশ শাসনামলে … এখন আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা তুলছেন সুন্দরবন রক্ষার আওয়াজ; কিন্তু ইংরেজ আমলে এই আওয়াজ ওঠেনি। … আমরা রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্র চাচ্ছি না; কিন্তু আমাদের যুক্তি হলো রাজনৈতিক।

দেশ প্রেমিক বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে সবিনয় বিবেচনার জন্য ৭ দফা সহ বিগত দিনের আন্দোলনের কয়েকটি চিত্র তুলে ধরলাম, আপনি যদি মনে করেন, সুন্দরবন ধ্বংস হলে ভালো থাকবেন, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আপনাকে কাঁপুরুষ আখ্যায়িত করবেন। অন্যপক্ষ সুন্দরবন ধ্বংস হবে না বলে ধুয়া উড়াচ্ছেন, আপনাদের জন্য খুব দরদ হয়, অন্ধ না হয়ে, পরিবেশ নিয়ে দুচার পাতা পড়লেই, আমাদের আনন্দোলে নিজেকে যুক্ত করতে ইচ্ছে পোষণ করতে বাধ্য বলে আমি মনে করি।

সুন্দরবন রক্ষায় ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় হরতাল, ৭ জানুয়ারি 'বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ' সফল করার আহ্বান জানিয়ে, বিগত দিনের আন্দোলন ও রাষ্ট্রকর্তৃক আন্দোলনকারীদের দমান করার অপচেষ্টার ক'টি চিত্র তুলে ধরছি।

জাতীয় কমিটির মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচী:

সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে পুলিশের লাঠি-গুলি টিয়ার গ্যাসের জবাব দেবে বাংলাদেশ এটি তারুন্যের অনুভব।
প্রধামন্ত্রীকে স্বারকলিপি প্রধানে পুলিশের অযৌ্ক্তিক ভাধা ও লাঠিচার্জ সুন্দরবন রক্ষার মিছিলে:

–জাতীয় কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনের দৃশ্য

জাতীয় কমিটির ৭ দফা
এক. গ্যাস, তেল ও কয়লাসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদে জনগণের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। শতভাগ খনিজ সম্পদ দেশের স্বার্থে সংরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সদ্ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। জাতীয় স্বার্থ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিবেশ ও জনস্বার্থ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য জ্বালানী সম্পদের সর্বোত্তম মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি জ্বালানী নীতি প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আরও বিভাগ এবং জাতীয় ভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। এ কাজে প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে

দুই. অবিলম্বে দুর্নীতি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত দায়মুক্তি আইন বাতিল করতে হবে। 'খনিজ সম্পদ রফতানি নিষিদ্ধ' করবার আইন পাশ করতে হবে। দায়মুক্তি আইন ব্যবহার করে সম্পাদিত সকল চুক্তি বাতিল করে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথনকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতকে দেশি বিদেশি ব্যবসার হাতে জিম্মি করবার বিদ্যমান নীতি, চুক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থেকে দেশকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে হবে।

তিন. রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবনবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল করতে হবে। সুন্দরবনের ক্ষয়রোধ ও তার পুনরুৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য 'সুন্দরবন নীতিমালা' প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএসএইডের বনধ্বংসী প্রকল্প থেকে সুন্দরবনকে মুক্ত করতে হবে।

চার. বিশাল ঋণ ও ভয়াবহ ঝুঁকিনির্ভর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-র পরিবর্তে সেইস্থানে অনেক কম ব্যয়সাপেক্ষ ঝুঁকিমুক্ত বৃহৎ গ্যাস, বর্জ্য ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। বাঁশখালী হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। এসআলম ও চীনা গ্রুপের জালিয়াতি, ভুমিগ্রাস এবং জোরজুলুম বন্ধ করে জনসম্মতির ভিত্তিতে সেই জমিতে গ্যাস, বর্জ্য, সৌর বিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুতের বৃহৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

পাঁচ. বেআইনীভাবে বাংলাদেশের কয়লা দেখিয়ে বিদেশে শেয়ার ব্যবসার অর্থ জরিমানা হিসেবে আদায় করে, এশিয়া এনার্জিকে (জিসিএম) দেশ থেকে বহিষ্কার ও উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ সহ ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের আবাদী জমি, পানিসম্পদ, জনবসতি ও পরিবেশ প্রাধান্য দিয়ে খনিজ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিতে হবে।
ছয়. শতভাগ গ্যাসসম্পদ দেশের কাজে লাগানোর জন্য দুর্নীতিনির্ভর ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী পিএসসি প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে। পরিবর্তে স্থলভাগে ও সমুদ্রে নতুন নতুন তেল গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে জাতীয় সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সুযোগ, ক্ষমতা ও বরাদ্দ দিতে হবে। প্রয়োজনে সাবকন্ট্রাক্ট ও বিদেশী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়ে সমতল, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমুদ্রসীমার সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন শতভাগ জাতীয় মালিকানায় করতে হবে। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে বৃহৎ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন করবার কাজ শুরু করতে হবে। মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় দুটো গ্যাসক্ষেত্র ধ্বংসের জন্য দায়ী শেভ্রন ও নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করে তা টেকসই জ্বালানী নিরাপত্তার কাজে ব্যয় করতে হবে।

সাত. জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও বন্দর নিয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে যে সব জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি করা হয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করতে হবে এবং দায়ী দুর্নীতিবাজ জাতীয় স্বার্থবিরোধী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন বৈজ্ঞানিক তথ্যনির্ভর তার প্রমান-
এ সংক্রান্ত যে কোন লিখা পাবেন
বাঁচাও সুন্দরবন, বাঁচাও বাংলাদেশ