একজন আমজাদ খান ও তার রেখে যাওয়া কর্ম

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 9 July 2015, 04:25 PM
Updated : 9 July 2015, 04:25 PM

মার্কেট ভিজিটে ২০১২ সালের প্রথমদিকে আমি গুয়াহাটি থেকে ট্রেনযোগে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর যাচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য নাগাল্যান্ডে আমাদের পণ্যের একজন ভাল আমদানিকারক খুঁজে বের করা। ট্রেন ছুটে চলছে, যাত্রীরা সব জানালা দিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখছে; আর আমি দেখছি রেললাইনের ধারে থাকা ছোট ছোট দোকানে ঝুলন্ত পণ্য। হটাৎ করেই নাগাল্যান্ডের দুর্গম এক জায়গায় ছোট একটা ষ্টেশনে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে গেল; তাকিয়ে দেখি ষ্টেশনের ছোট চায়ের দোকানটাতে ভারতীয় কয়েকটি পণ্যের সাথে ঝুলছে প্রাণের 'ঝাল মুড়ি'র লাল প্যাকেট। দেরি না করে ঝট করে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম। নিজাম ভাই পিছনে থেকে জিজ্ঞাসা করলেন, কই যান? আমি উত্তর না দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে ঝটপট দুই প্যাকেট ঝাল মুড়ি কিনে ফেললাম। নিজ সিটে ফিরে এসে এর একটা নিজাম ভায়ের হাতে দিয়ে অন্যটা নিজে খেতে শুরু করলাম। বললাম, নেন সকালের ব্রেকফাস্ট'টা সারেন; আমাদের পণ্য দিয়ে। তার আগে নিজাম ভাই আমাকে অনেকবারই সকালের নাস্তা করার জন্য সেধেছিলেন কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই আমার খেতে ইচ্ছে করছিল না।

এটা হলো বাংলাদেশের 'প্রাণ' কোম্পানির বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত সেলস নেটওয়ার্কের ছোট একটা উদাহরণ। যদিও আমি এই প্রতিষ্ঠানের কেউ না কিন্তু প্রায় একই পেশায় থাকার কারণে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে সেই ২০০৫ সাল থেকেই যোগাযোগ রাখি। আমার কিছু ভাল বন্ধু এই প্রতিষ্ঠানে ছিল এবং এখনো আছে। তাই কিছু খোঁজখবর সব সময়ই রাখি। আর চোখের সামনে দেখলাম কৃষিভিত্তিক ছোট্ট এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্য।

এখন এই প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে প্রায় সত্তর হাজার মানুষ চাকুরী করে। প্রায় একশত আটটা দেশে নিয়মিত পণ্য রফতানী হয় এবং তার প্রায় প্রতিটা দেশেই এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীবাহিনী নিজ পণ্যের প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন; যার অধিকাংশই বাংলাদেশের শিক্ষিত নাগরিক।

কি অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ! অবাক হওয়ারই কথা! কারণ আমরা ইউনিলিভার, পিএন্ডজি'র মত মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি বলতে পাগল, এদের পণ্য কিনে নিজেদের ধন্য মনে করি; অন্যের কাছে গর্ব করি। কিন্তু জানি কি আমাদের নিজেদের হাতের কাছেই একইরকম একটা কোম্পানি আছে?

না! আমরা জানি না; কারণ আমরা জানতে চাই না!

তা না জানলেও চলবে! তারচেয়ে আসুন জেনে নেই একজন ভিসনারী মানুষের কথা- যিনি তার চাকুরীজীবন সাফল্যের সাথে শেষ করে অবসরে সময় না কাটিয়ে শুরু করেছিলেন ছোট্ট একটা ব্যবসা; যা আজ একটা মহীরুহে দাড়িয়ে গেছে।

শুধু তাই না, আমাদের দেশ যখন 'গার্মেন্টস পণ্য' ব্যতীত আর কোন নতুন পণ্য খুঁজে পাচ্ছিল না; যোগ করতে পারছিল নতুন কোন পণ্য তার রফতানী বাস্কেটে তখন এই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপই তাতে যোগ করছে নতুন নতুন পণ্য।

এর পরেও যারা কিন্তু কিন্তু করছেন তাদের জন্য সুখবর হলো- আগামী ৫ বছরের মধ্যে আপনাদের উইনিলিভার বা বড় কোন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি থেকে এই প্রতিষ্ঠানের তৈরী পণ্য কিনতে হবে; হয়ত সেটা হবে ভিন্ন নামে; ভিন্ন ব্র্যান্ডে!

দুঃখের সাথে জানাচ্ছি- গতকাল এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জনাব আমজাদ খান চৌধুরী এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন এবং তিনি গেছেন সবকিছু গুছিয়ে রেখে!

আমি তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি।

০৯/০৭/২০১৫, সন্ধ্যাঃ ৭.৫১