মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-৮

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 20 Dec 2016, 03:51 PM
Updated : 20 Dec 2016, 03:51 PM

গতকাল তুরুস্কে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এবং যতদূর জানা যাচ্ছে ঘটনা ঘটিয়েছে তুরস্কেরই পুলিশ বাহিনীর এক সদস্য। ওদিকে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডেও আক্রমণ হয়েছে। অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিলো- মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়বে! তাহলে কী বিষয়টা সত্যি হতে যাচ্ছে?

যে আলেপ্পো থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সূচনা, সেই আলেপ্পোতে- আসাদের সাথে রাশিয়াও মধ্যপ্রাচ্যের দাবা খেলায় জিতে গেছে। ধারণা করা যায়- বাকী অঞ্চলগুলোতেও প্রেসিডেন্ট আসাদ জিতে যাবে। যদিও মনে করি, সে পুরো সিরিয়াকে আর তার শাসনের অধীনে পাবে না! কারণ সেখানে শক্তিশালী দেশগুলোর অন্য প্ল্যান না থেকেই পারে না!

আমেরিকা, সৌদি আরব নাটের গুরু হলেও, প্রেসিডেন্ট আসাদকে উচ্ছেদ করতে সবচেয়ে বেশী কলকাঠি নেড়েছে তুরস্ক। এমনকি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে উস্কানি ও সামরিক সাহায্য যারা দিয়েছে তাদের মধ্যেও অন্যতম ছিল এই তুরস্ক। ফলে সে এমনিতেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের চক্ষুশূল হয়েই আছে। পাশাপাশি রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে ইতিমধ্যেই তারা পুতিনের টার্গেটে পড়েছে। অন্যদিকে সেই ঘটানাকে মিউচুয়াল করতে যেয়ে রাশিয়ার সাথে সে বেশী মাখামাখি করছে বলে মনে হয়েছে আমেরিকার! যার ফলে সেনা অভ্যুত্থানে তুরুস্কের প্রেসিডেন্ট প্রায় মারা পড়েছিলেন, নেহাতই ভাগ্যের জোড়ে আর রাশিয়ার উপযাজক তথ্যে সে যাত্রা বেঁচে গেছেন তিনি।

যদিও তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য কিন্তু নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কতটুকু ন্যাটো দিয়ে তাকে সাহায্য করবে তা বলা মুশকিল। বলা হয়ে থাকে, আমেরিকার প্রতিটা গেমে- প্ল্যান-এ থেকে প্ল্যান-জেড পর্যন্ত থাকে। সিরিয়ার যুদ্ধে আমেরিকা তার 'প্ল্যান-এ' -তে আপাতত হেরে গেছে এবং জিতে গেছে রাশিয়া। এবার দেখা যাক তাদের প্ল্যান-বি, সি, ডি তে কী আছে?

এ তো গেল একদিক, অন্যদিকে যে সৌদি আরব ছিল আমেরিকার এক নম্বর বন্ধু। যার বলে তারা ইয়েমেন আক্রমণ করলো, সেই আমেরিকাই এখন বলছে সৌদিকে সে আর অস্ত্র দিবে না! পাশাপাশি ইয়েমেনে তাদের আক্রমণে সমর্থন দিবে না। এতে তাদের সঙ্গী হয়েছে ব্রিটেনও। অন্যদিকে সৌদি আরব তেলের উৎপাদন বাজারের চাহিদা অনুযায়ী না কমিয়ে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছে প্রায় তিন ভাগের দুইভাগ। ফলে তেলের রফতানীর উপর নির্ভরশীল রাশিয়ার অর্থনীতি পরে গেছে ভীষণ চাপে। যার কারণে সে ইতিমধ্যেই রাশিয়া তথা পুতিনের চক্ষুশূল হয়েই আছে। এখন যদি আমেরিকা সৌদির ক্ষেত্রে তার প্ল্যান-বি বাস্তবায়ন করে, তাহলে কী ইয়েমেনের হুতিরা সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করবে না? তাদেরকেও উস্কানি দেওয়ার দেশের তো আর অভাব নেই!

এদিকে ভারত-পাকিস্তান প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্কের মত করে করে একে অপরের দিকে গোলা ছুঁড়ছে। মারা পড়ছে দুই পক্ষেরই সেনা। এমনি সময়ে ভারতে দাবী উঠেছে তাদেরও আত্মঘাতী সেনাদল তৈরি করা হোক। অপরদিকে বাংলাদেশ-মায়ানমার বর্ডার অশান্ত হওয়ার খবর বের হচ্ছে!

এই যদি অবস্থা হয়! তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের আতংকগ্রস্থ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে! আর রয়েছে পেটের ধান্ধা! এতসব ঝামেলা রেখে তারচেয়ে একটা অন্যরকমের গদ্য লেখার চেষ্টা করি- দেখি না কী হয়?

আর্টিলারির একটানা দ্রুম দ্রুম গর্জন ভেসে আসছে-
আলেপ্পোর দিক থেকে। আসাদের বিপক্ষরা পালাচ্ছে!
একটু আগে, বাংকার বার্স্টের শব্দে কানে তালা লাগায়
শুনতে পারছি না- মানবের বেঁচে থাকার আত্মচিৎকার।
যুদ্ধবিমানের গর্জনের সাথে ব্যারেল বোমার বিস্ফোরণ।
এসব শুনে বললাম, হাইবারনেশনে যাবো!
তুমি বললে, কেন, কেন?
আমি বললাম, তোমার এই কেন, কেনই আমার উত্তর!

ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন হয়ে সিরিয়া! এরপর কে?
যুদ্ধের টকটকে আগুনে, বারুদে পুড়ছে মানুষ
ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একটার পর একটা জনপদ, দেশ
কিসিঞ্জারী বুদ্ধি আর সাদা ভল্লুক, লড়ছে জয়ের নেশায়।
নতুন করে বেছে নিচ্ছে আরেকটা শিকার!
এসব দেখে বললাম, হাইবারনেশনে যাবো!
তুমি বললে, কেন, কেন?
আমি বললাম, তোমার এই কেন কেনই, আমার উত্তর!

হোয়াইট হাউসে বসেছে পুতিনের নোমিনি
যেমন করে গর্ভাচেভ বসেছিলো একদা ক্রেমলিনে!
এরদোগান বুঝতে পারছেনা কে তার বন্ধু, কোনদিকে যাবে সে?
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছে, বাংলা-বার্মা সীমান্তে নতুন উপদ্রপ।
বাংলার একদা সংখ্যাগুরুরা বিলুপ্তির আশংকায় ভুগছে!
এসব ভেবে বললাম, হাইবারনেশনে যাবো!
তুমি বললে, কেন, কেন?
আমি বললাম, তোমার এই কেন কেনই, আমার উত্তর!

টার্গেট, সেলস, ডেভেলপমেন্টের নেশা আর প্রেশার
ঝুলছে প্রোমোশনের মুলো, নয়ত ফায়ার।
রেসের ঘোড়ার কাছে তার মালিক চায় শুধুই জয়
নয়ত বলবে, ফায়ার টু দ্যা বাস্টার্ড।
কাজের ব্যস্ততায় জীবন জেরবার, চিন্তা ছিন্নভিন্ন।
এসবে ভুগে বললাম, হাইবারনেশনে যাবো!
তুমি বললে, কেন, কেন?
আমি বললাম, তোমার এই কেন কেনই, আমার উত্তর!

এপোয়েন্টমেন্ট, রিলোশনশীপ বিল্ডআপ আর-
নানারঙের মানুষের সাথে মিশতে মিশতে
যখন পাই- পথনারীর সঙ্গম অফার!
ঠিক তখনই, হয়ে যাই লজ্জায় লাল
বাট তোমার অফারে মৌন থাকলাম!
এবার, সময় নিয়ে ভেবে বললাম, হাইবারনেশনে যাবো!
তুমি বললে, কেন কেন?
আমি বললাম, তোমার এই কেন কেনই, আমার উত্তর।

২০/১২/২০১৬

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-৭
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-৬
আমেরিকার টোপ: প্রেসিডেন্ট আসাদ এবার কি করবে?