টাকা পাচারের খবরে আমজনতা খুশি!

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 8 May 2017, 07:35 PM
Updated : 8 May 2017, 07:35 PM

"৭০ হাজার কোটি টাকা 'পাচারের' অভিযোগ তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক" খবরের শিরোনামটা পড়েই আমরা বোকা জনগণ যারপনাই খুশি! আর এই খুশির মাত্রাটা এতই যে, মন চাইতেছে- মনের খুশি বুকের সাথে বেঁধে বুড়ীগঙ্গার পচা জলে ঝাঁপ দেই!

মহাশয়েরা যে চুরি, ডাকাতি, লুটপাট, ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার লুট না ঠেকিয়ে, শুধু তদন্ত করতে চেয়েছেন? এতেই আমরা ষোল কোটি জনগণ খুশীতে নয়খানা হয়ে গেছি। মহাশয়দের সেরাম দয়ালু মন দেখে, জনগণের প্রতি মায়াময় মুখ দেখে আমজনতার দুচোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল ঝরতেছে; যাতে করে আগামীতে এই জল ব্যবহার করেও মহাশয়গণ মন খুলে চুরি করতে পারেন!

বাংলাদেশ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচারের যে তথ্য গ্লোবাল ফাইনানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশ করেছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।

গত ১ বছরে মাত্র ৭০ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছে। এ আর এমন কী? বছরে মাত্র সত্তর হাজার কোটি টাকা! এইডা কোন ফিগার হইলো? বাংলাদেশের এত বড় বাজেট, তা থেকে মাত্র এই কয়টা টাকা চুরি হয়েছে বলে দুঃখ করছেন? মহাশয়দের বুদ্ধি দেই! আরও বেশী বেশী করে আওয়ামী, বিএনপি, জামায়াত নেতারা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হোন! যাতে করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাটাকে চিরস্থায়ীভাবে পরিবারের মধ্যে বন্দবস্থ করে নেওয়া যায়! নিজেদের ক্ষমতাকেন্দ্রে থাকা সকল ক্ষমতাধারীদেরকে- বড় কার্টেল, ছোট কার্টেলে ভাগ করে একত্রিত করুন। যাতে করে বাইরে থেকে যেই আসুক, বা যে দলই ক্ষমতায় আসুক তাতে যেন মহাশয়দের কোন সমস্যা না হয়!

অর্থমন্ত্রীর পক্ষে সংসদে প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮৯৭ কোটি ডলার (৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি) পাচার হয়েছে বলে সোমবার প্রকাশিত 'ইলিসিট ফাইনানশিয়াল ফ্লোজ টু অ্যান্ড ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০৫-২০১৪' শীর্ষক প্রতিবেদনে তথ্য দেয় জিএফআই। ওয়াশিংটনভিত্তিক এই গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল- এই ১০ বছরে বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়ায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।

এতে করে ভাই ভাই হয়ে সব সরকারের সময়ই সমান সুযোগ পাবেন! আমজনতাকে নিয়ে ভাবার কোন দরকার নেই! ওদেরকে রিলিফের নামে, কাবিখার নামে, বিধবা-মুক্তিযোদ্ধার ভাতার নামে একটু আধটু উচ্ছিষ্ট দিবেন, ওদের এতিম-অনাথদের মধ্যে মাঝে মাঝে দান খয়রাত করবেন তাতেই হবে! আর যারা একটু আধটু বেয়াড়া অথচ লোভী আছে তাদেরকে টিভি, রেডিও, ব্যবসার লাইসেন্স দিবেন! অথবা যাদের ইতিমধ্যেই উন্নয়নের প্রেজেক্ট দিয়েছেন তাদেরকে সেই প্রজেক্টগুলোর মেয়াদ আজীবন বলবত রাখুন! বছর বছর শত-হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে দিন! না করছে কে? আর একেবারেই বেয়াড়া যারা আছে তাদেরকে ৫৭ ধারায় লাল দালানে রাখুন! এতেই মহাশয়দের 'চুরি আর সেই মাল পাচার' আজীবনের জন্য নিরাপদ হবে!

. "দ. এশিয়ায় সর্বোচ্চ ব্যয় বাংলাদেশে" … চার লেনের এক কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে বাংলাদেশে খরচ হচ্ছে গড়ে ১২৩-২৫০ কোটি টাকা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ দূরত্বের ফ্লাইওভার নির্মাণে করতে খরচ হচ্ছে ৯০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা। আর পাকিস্তানে ৬০ থেকে ১১০ কোটি টাকা, মালয়েশিয়ায় ৬০ থেকে ১৩০ কোটি টাকা এবং চীনে ৯০ থেকে ১৩০ কোটি টাকা।

আর আমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতাবানেরা আছেন তারা খুশি থাকেন! নিজেদের আখের গোছানোর সাথে সাথে মহাশয়দের সন্তানেরা যেন আগামী হাজার বছর ধরে নিজেদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর রাখতে পারেন তার ব্যবস্থা করুন! কানাডা, আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া পাচার করা টাকা দিয়ে আলীশান বাড়ী-গাড়ী রেখে যান! যাতে তেনেরা আগামীতে মনখুশি মত ফুর্তি-টুর্তি করতে পারে! দেইখেন, আনন্দে যেন কোন ঘাটতি না থাকে তেনাদের?

ফের সময় ও ব্যয় বাড়ছে 'মগবাজার-মৌচাক' ফ্লাইওভার প্রকল্পের। মূল অনুমোদিত প্রকল্প থেকে ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ছে।৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় এখন ১ হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

বাই দ্যা ওয়ে- মহাশয়দের জন্য কয়েকটা দৃষ্টিকটু নজির রয়ে গেছে! এই যেমন ধরুন- ইদি আমীন থেকে শুরু করে সাদ্দাম, গাদ্দাফীদের এলিটগোষ্ঠীও মহাশয়দের মত করেই ভেবেছিলেন! এইটুকুই যা সমস্যা!

অবশ্য মহাশয়রা এদিকটাও ভেবে রেখেছেন দেখেই না ভরসা পাচ্ছি! অলরেডি জমি-টমি দান-টান করতেও শুরু করে দিয়েছেন দেখে ভাল লাগছে!