নেপালের বদনা

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 22 June 2017, 02:48 PM
Updated : 22 June 2017, 02:48 PM

এই জীবনে কোনদিন বদনা নিয়ে ব্লগ লিখতে হবে এই চিন্তা কোনদিনই মাথায় আসেনি। যদিও আমার মাথায় সারাক্ষণই উল্টাপাল্টা চিন্তা ঘোরে। হটাই করেই এই অনাহুত চিন্তা আমাকে রীতিমত গ্রাস করে ফেলেছে। এর জন্য দায়ী আমাদের প্রিয় ব্লগার কাজী।

এবার নেপালে আমি দুটো টার্গেট নিয়ে এসেছি। এর প্রথমটা হলো- নতুন চাকুরীতে নতুন চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়া, দ্বিতীয়টাতে আছে যে করেই হোক কাজ শেষে একটা পিতলের বদনা কিনে বাড়ী ফেরা। আমার সুবিধা হলো- দুটো টার্গেটই ফুলফিল করতে আমাকে কী কী করতে হবে, আর কোথায় কোথায় যেতে হবে তা আমি জানি ও চিনি।

আমি উঠেছি থামেলের একটা হোটেলে। ধর্মেন্দ্র চেয়েছিল- আমি একটা ফাইভস্টারে উঠি। ও সেই অনুযায়ী বুকিংও দিয়ে রেখেছিল। হোটেল বুকিং এর তথ্য ওর কাছ থেকে ফোনে শুনেই আমি ওকে বলেছিলাম, "আমি ভাই গরীব মানুষ, বড় লোকের চাকুরি করি দেখে আমারও চরিত্রটা খারাপ করে দিও না। নিজের পকেটটা একেবারেই ফুটো। এর চেয়ে আমাকে একটা মাঝারী মানের হোটেল ঠিক করে দাও, আর আমাকে থামেলে রাখো। কোম্পানির টাকা বেশি খরচ করে লাভ কী?"

দুটো কথাতেই ও মন খারাপ করে ফেলল। কিছুটা রাগের স্বরে বলল, "আপনার না হয় স্ট্যাটাস নাই কিন্তু আপনার চাকুরির তো স্ট্যাটাস আছে? আর আমি চাই না আপনি থামেলে থাকেন! কেন চাই না তা আপনি আমার চেয়ে ভাল জানেন। তারপর অনেক ক্যাচাকেচির পর ও প্রতি রাতে ৫০ ডলার হারে একটা ফোর স্টারে বুকিং দিলো এবং সেটা থামেলেই। এই হোটেলের সাথে ওর কর্পোরেট চুক্তি থাকায় রেন্ট কিছুটা কম পাওয়া গেলেও রুম আর সকালের ব্রেকফ্রাস্টটা ছিল চমৎকার। রুম থেকে দরজাটা খুললেই একটা বড় বেলকনি। আর তাতে গেলেই সকালের আকাশটা চমৎকার দেখা যায়। আর আমি এটাই চাই।


আমি থাকি হোটেলটি সাত তলায়। পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে আমার চতুর্থ কর্মজীবন শুরু করার চিন্তা মাথায় থাকায় প্রথমদিনটির সকালে উপোস ছিলাম। তাই সেদিন হোটেলের ফ্রি ব্রেকফাস্টটা করিনি এবং দ্বিতীয় তলায় থাকা রেস্টুরেন্টেটাতেও যাওয়া হয়নি।


দ্বিতীয় দিন বুফে থেকে লোভনীয় খাবার প্লেটে নিয়ে টেবিলে বসতেই সেই রেস্টুরেন্টের সামনের দেওয়ালে নজর আঁটকে গেল। ছবিটার দিকে ভাল করে নজর দিয়েই হেসে ফেললাম। আর মনে মনে কাজীর উপর একরাশ রাগ ঝেড়ে বললাম, আবারও সেই বদনা?


নেপালের কাজ শেষে যেদিন ফিরবো, তার আগের দিন হটাৎ করেই ধর্মেন্দ্রর ছেলেটার জ্বর হলো। ফলে সে সেদিন আসতে পারলো না, কিন্তু আমার সদ্য পরিচিত অন্য একজন বায়ার যার নাম রাজকুমার, তিনি হোটেলে এসে হাজির হলেন। এসেই বললেন, চলেন ঘুরে আসি। আমি বললাম, চলেন কাসা-পিতলের দোকানে যাবো। উঠে পড়লাম তার মটর সাইকেলে, খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম কাজীর আকাঙ্ক্ষিত সেই পিতলের বদনাটা।


সবশেষে, কিনে ফেললাম একটা।

২২/০৬/২০১৬