বিএসসি ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের দায় কে নেবে?

সুমিত বণিক
Published : 19 Jan 2016, 02:23 PM
Updated : 19 Jan 2016, 02:23 PM

স্বপ্ন দেখার জন্য কাউকে শিখিয়ে দিতে হয় না । মানুষ মনের অজান্তেই স্বপ্ন দেখে ফেলে । কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখেই তৃপ্ত আর কেউ স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক অজানা যুদ্ধে অবতীর্ণ । বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি-ইন-হেলথ টেকনোলজি (ডেন্টিষ্ট্রি) কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের স্বপ্নগুলোও দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে । তৈরি হয়েছে এক অপ্রত্যাশিত অমানবিক সংঙ্কট । পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ডেপুটেশনে আসা শিক্ষার্থীগণ বেতন-ভাতাসহ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে পড়াশোনা করছেন । ফলে ঐ সকল এলাকায় দক্ষ জনবলের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ ।

অপ্রিয় হলেও সত্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে সরকারিভাবে চালুকৃত এ কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো উচ্চশিক্ষা বা চাকুরির উপযুক্ত কোন সুযোগ সৃষ্টি হয় নি ! তাছাড়া শুধু তাই নয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪ বছর মেয়াদী ডেন্টাল চিকিৎসার সহস্রাধিক রোগ ও তার চিকিৎসা বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করেও পুরোপুরি বেকার থাকছেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা । সবই যেন ভুতুরে কান্ড!

বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই ভুঁইফোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট হওয়ার খবরও সবার কাছে নতুন নয় । এমনকি শিক্ষাজীবন শেষে ধরিয়ে দেয়া সার্টিফিকেটটির বৈধতা নিয়েও থাকে সীমাহীন প্রশ্ন! কিন্তু এমন একটি জটিলতর সমস্যার অবতারণা হবে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকালন্টির নিয়ন্ত্রণে প্রণীত কোর্স কারিকুলামে, ভাবতে কষ্ট লাগে!

দেশে স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বিএসসি-ইন-হেলথ টেকনোলজি (ডেন্টিষ্ট্রি) কোর্সের মতো নাজুক অবস্থা আর একটিতেও নেই । শিক্ষার্থীদের মধ্যে  সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়ে হয়তো সংশয় নেই, কিন্তু কি হবে এই বৈধ সার্টিফিকেট দিয়ে? একদিকে দন্ত চিকিৎসার আদ্যোপান্ত হাতে কলমে শিখে টেকনিশিয়ানের স্নাতক ডিগ্রী, অন্যদিকে ডিগ্রী অর্জনের পরও নেই সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এর অধীনে বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ । নেই অন্যান্য সরকারি চাকুরির উপযুক্ত পদ! তাহলে এই কোর্স প্রণয়নের উদ্দেশ্য কি ছিল ? কেনই বা এই কোর্স চালু করে অধ্যয়ণরত বা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরকে জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ?

এখানেই শেষ নয়, এই কোর্স কারিকুলামে বায়োলজিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল বিষয় সমূহ পড়ানো হলেও নেই সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)-এর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাদের প্র্যাকটিস তথা কর্মসংস্থানের সুযোগ । অবহেলিত শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত রহস্যজনকভাবে ভেস্তে গেছে এর কার্যকারিতা । একটি প্রশ্নের উত্তর মাথায় আসে না, কোন প্রকার যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করেই কেন, সরকারিভাবে চিকিৎসা শাস্ত্রের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু করা হলো ? শিক্ষা যদি মৌলিক অধিকারের বিষয় হয়, তাহলে সেই শিক্ষা নিয়ে নাটকীয়তাও কিন্তু অধিকারের উপর আঘাত করার সামিল !

কোন গোষ্ঠী বা কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতার বোঝা তো আর অগণিত শিক্ষার্থীরা বয়ে বেড়াতে পারে না? আর এর কোন যৌক্তিকতাও নেই ।

বর্তমান সরকার অনেক ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন । তাই আমাদের আশা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এর যৌথ পরিকল্পিত কার্যকর পদক্ষেপই পারে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান এই অপ্রত্যাশিত অমানবিক সংঙ্কটের আশু সমাধান করতে ।

সুমিত বণিক,

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী, ঢাকা ।