পাবনা শহরের ব্রিজের কাছে সিএনজি স্ট্যান্ডের পাশে একটি টি স্টলের মালিক রশিদ ভাই। আমি খাওয়া-দাওয়া করার পর দেখলাম একটি এনজিওকর্মী এসেছের্ ঋণের কিস্তি নিতে! কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, তিনি ৩ কোটি টাকা লোকসানের পর আজ রাস্তার পাশের একটি ছোট্ট টি স্টলের মালিক। কথাটা শোনার পর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, তখন তিনি পাশের বিল্ডিংটি দেখিয়ে বললেন, 'আমি শুধু এই ৫তলা বিল্ডিংটির মালিকই শুধু ছিলাম না, ব্যাংক ব্যালেন্স সবই ছিলো।' মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা, বেঈমানী, আত্মীয়ের হটকারীতা, সব কিছু্ মিলিয়েই নাকি তিনি আজ পথের ছোট্ট ব্যবসায়ী। ঋণের বোঝা কমাতে সকল সহায় সম্পদ বিক্রি করে ফেলেছেন। সব দেনা-পাওনা শেষ করে, আরও ৪ লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা এখনও আছে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে অন্যরা সবাই যথেষ্ট বিত্তশালী। তবু নিঃস্ব এই ভাইয়ের খবর নেয় না শুধু তাই নয়, তার এখানে থাকা মায়ের খবরও অন্যরা নেয় না। তিনি বলেন 'আগে আমি যখন বাজারে বের হতাম, তখন মানুষের সালাম নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, আর এখন মানুষ ভয়ে আমার সালাম নেয় না, কখন জানি তার কাছে কি চেয়ে বসি!'
এক মেয়ে ও এক পুত্র সন্তানের জনক রশিদ ভাইয়ের এখন দিন-রাত্রি হয় ঋণের বোঝা হালকা করার চিন্তা নিয়ে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় তার কর্ম ব্যস্ততার সূচনা আর শেষ হয় রাত ২টায়। আমি বললাম, আপনি ঘুমান কখন? বললো 'ঘুমই তো হয় না'। আমি বললাম ঋণের জ্বালাময়ী তাগিদ আর চিন্তা আপনার শান্তির ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
রশিদ ভাইয়ের কাছ থেকে একটা জিনিস আমি শেখার চেষ্টা করেছি, সেটা হলো- উনি কি অসহনীয় যন্ত্রণার মাঝেও হাল ধরে টিকে আছেন! বিশাল অট্টালিকা আর বিত্তের জৌলস ছেড়ে পথে পাশে বসেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন সংগ্রামে জয়ী হবার মানসে! কতটা ধৈর্য্য থাকার পর মানুষ আকাশ সম চিন্তা আর ঋণের বোঝা নিয়ে দিব্যি অনাগত দিনগুলো পাড়ি দিচ্ছেন, শুধু একটু প্রশান্তি আর টিকে থাকার সুপ্ত বাসনায়।
আমাদের চারপাশেই অনেক অনুপ্রেরণার গল্প লুকিয়ে আছে, কিছুটা অবহেলায়! সেগুলোকে একটু ভাবলেই নিজের জীবন পথের অসম পথগুলো পাড়ি দেবার কিছুটা অনুপ্রেরণা খুঁজে পাই। প্রচন্ড চাপের মাঝেও টিকে থাকার প্রেরণা জোগায় হেরে গিয়েও জয়ী হবার বাসনায় সংগ্রামী রশিদ ভাইয়ের মতো মানুষেরা। রশিদ ভাই, আপনার সাথে হয়তো আর কখনো দেখা হবে না, তবুও জীবন সংগ্রামে আপনি জয়ী হোন, বিধাতার কাছে এই প্রার্থনাই রইল।
সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী।
(পাবনা থেকে)
sumitbanikktd.guc@gmail.com