পুনরুজ্জীবিত হোক মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের অমর স্মৃতিচিহ্ন

সুমিত বণিক
Published : 26 May 2017, 09:23 PM
Updated : 26 May 2017, 09:23 PM

পাবনা গিয়েই শুনলাম বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িটি পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে। সম্প্রতি ঘুরতে গিয়েছিলাম মহানায়িকার স্মৃতিধন্য বাড়িটিতে। বাড়িটি মহানায়িকার হলেও দীর্ঘদিন এটি অন্যদের দখলে ছিল।পাবনার সংস্কৃতিমনা মানুষদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ও প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে অবশেষে ২০১৪ সালে বাড়িটি দখল মুক্ত হয়।বর্তমানে বাড়িটি পাবনা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন। জেলা প্রশাসন বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও এর সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ করছে এবং চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে এটিকে আরো সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এই বাড়িতেই নাকি শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন উপমহাদেশের স্বনামধন্য বাংলা সিনেমার জীবন্ত কিংবদন্তী সুচিত্রা সেন। ইতিমধ্যে পাবনার বর্তমান জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো এই সংগ্রহশালাটিকে সমৃদ্ধ করার জন্য দেশে-বিদেশে মহানায়িকার স্মৃতিবিজরিত কোনো দ্রব্য, চলচ্চিত্র ও ছবি থাকলে তা সংগ্রহশালায় দেয়ার জন্য আহ্বানও জানিয়েছেন।

বাড়িটি পরিদর্শনের জন্য ফি রাখা হয়েছে ১০ টাকা। প্রতি সোমবার সংগ্রহশালাটি বন্ধ থাকে।আপাতত বাড়িটির বাহিরে ও ভিতরে বেশ উন্নয়ন করা হয়েছে। একজন সহায়ক রাখা হয়েছে, যিনি আগত দর্শকদের সহায়তা করেন। ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই কানে বাঁজলো মহানায়িকার অভিনীত ঐ সময়ের সিনেমার পুরোনো গান। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতিকথা আর ছবি দিয়েই আপাতত জাগরিত করা হয়েছে মহানায়িকার স্মৃতি সংগ্রহশালাটিকে। রয়েছে একটি পরিদর্শন বই, যেখানে একজন দর্শনার্থী তাঁর মনের অব্যক্ত অনুভূতিটুকু লিখে আসার সুযোগ পাবেন। গাইড বা সহায়ক হিসেবে যে তরুণ ছেলেটি দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, সেও তার সাধ্যমত দর্শনার্থীদেরকে জানানোর চেষ্টাটুকু করেন।

নতুন প্রজন্মের মানুষ হিসেবে সংগ্রহশালাটি ঘুরে অনেকেই হয়তো হতাশ হবেন, কারণ এক কথায় ডিজিটাল কিছু লেখা ও ছবি ছাড়া আর কিছুই নেই এতে, আবার অনেকেই আশায় বুক বাঁধবেন কারণ দখল মুক্ত হওয়ার আগে মহানায়িকার ভক্ত বা নতুন প্রজন্ম পাবনা শহরের এই বাড়িটি ঘিরেই যে সুচিত্রা সেনের অম্লান স্মৃতি মিশে আছে, তা দেখার বা অনুভবেরও সুযোগটুকুই ছিল না।

ইতিহাস পড়ে জানা যায়, সুচিত্র সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনা পৌরসভার সেনেটারী ইন্সপেক্টর। চাকরির সুবাদে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে হেমসাগর লেনে একটি একতলা বাড়ীতে বসবাস করতেন। এই করুণাময় দাশগুপ্তের মেয়ে সুচিত্রা সেন ওরফে রমা ১৯৪৬-৪৭ সালে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় কোলকাতায় চলে যান। ১৯৫১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সুচিত্রা সেনের বাবা সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। সে সময় জেলা প্রশাসন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক ভিটা গোপালপুর মৌজার এসএ ৯৯ খতিয়ানভুক্ত ৫৮৭ এসএ দাগের ০.২১২৫ একর বাড়ীটি রিক্যুইজিশন করেন। এরপর থেকে বাড়ীটিতে সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বসবাস করতে থাকেন এবং সর্বশেষ ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের সময়ে স্থানীয় কতিপয় জামায়াত নেতা বাড়ীটি অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত করে একসনা লিজ নিয়ে 'ইমাম গায্যালী ইন্সটিটিউট' নামের একটি কিন্ডার গার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

অবশেষে, মহানায়িকার অমর স্মৃতি জাগরিত থাকুক বাংলার সকল মানুষের হৃদয়ে এবং মহানায়িকার অম্লান অর্জনের পথ ধরে এগিয়ে যাক বাংলার সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র শিল্পীগণ ও সমাজ। কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই জেলা প্রশাসন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ কে, সর্বোপরি আরো যারা মহানায়িকার স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে শুভ উদ্যোগটির সাথে সম্পৃক্ত আছেন।

সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী।

(পাবনা থেকে ফিরে)

sumitbanikktd.guc@gmail.com

…………………