ডিজিটাল বাংলাদেশের দূরদৃষ্টিতা- প্রধানমন্ত্রী সমীপেষু (পর্ব-৩)

সুমন দে
Published : 29 March 2017, 07:34 PM
Updated : 29 March 2017, 07:34 PM

ডিজিটাল বাংলাদেশের ভবিষ্যত পরিকল্পিত হোক। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ডিজিটাল ব্যবস্থা ভিশন-২১ হোক আগামীর উজ্জ্বল বাংলাদেশের কাঠামোর সরকারের আধুনিক প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায়। দেশের চলমান জঙ্গি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড শুধু প্রত্যেকের হাতে দিলেই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল তা কিন্তু না!

সেই স্মার্টকার্ডে অবশ্যই প্রত্যেক জনগণের ক্রিমিনাল কোন রেকর্ড রয়েছে কিনা? কখনো জেল খেটেছে কিনা? কোন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত কিনা? সামাজিক অবস্থান কি? সেই ব্যক্তির যুদ্ধাপরাধীর ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্য কি না? রাজনৈতিক পরিচয় কি? রাজনৈতিক কোন মতাদর্শে বিশ্বাসি? স্মার্টকার্ড নাম্বারের সাথে সংযুক্ত থাকবে টিআইএন নাম্বার, টেক্স রিটার্নর অর্থবছরের কপি রেকর্ড থাকবে চিপে।

ট্যাক্স দিচ্ছে কি না? ট্যাক্স কেন দিচ্ছে না? আয়ের উৎস কি? বাৎসরিক ব্যায় কত? কতগুলি ব্যাংক একাউন্ট এবং কি কি ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে? তার সম্পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত সঠিক ও নির্ভুল ভাবে স্মার্টকার্ডে তথ্য সংগ্রহ করে থাকলে, বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থে জাতীয় পরিচয় পত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন-২১ এর মধ্যে করা সম্ভব হলেই বিশ্বের কাছে বীরের জাতি মাথা উঁচু করে চলবে। দেশের চলমান সন্ত্রাস বিরোধী সকল কর্মকান্ডে ও অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা নজরদারিতে সহায়ক স্মার্টকার্ড জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বিরাট ডিজিটাল ভূমিকা রাখবে। সেই সাথে, ফিঙ্গার প্রিন্ট,(বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মতন) কানের ছবি সংযুক্ত থাকলে সেই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা কয়েক মিনিটের ব্যপার; প্রত্যেক বছর সেই স্মার্টকার্ড হালনাগাদ সরকার কর্তৃক করা হলে নব্য জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ, দেশ বিরোধী সকল কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ ভাবে নজরদারি করা যাবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে দৃষ্টান্তমূলক সহায়তা করবে। অবশ্যই দেশের স্মার্টকার্ডের তথ্যের নিরাপত্তা বিধান করা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এতে দেশের রাজনৈতিক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কালো টাকার অপব্যবহার, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আর্থিক মদদ কে দিচ্ছে ডিজিটাল রূপরেখায় স্পষ্টভাবে ওঠে আসবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আরো স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে, সঠিক নীতি-কৌশল ও সংশ্লীষ্টজনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল সে সম্পর্কে সন্দেহ করার কারণ নেই। সমসাময়িক বিশ্বের অর্থনৈতিক মহামন্দা (২০০৬-২০০৯ সময়কালে) সাহসিকতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবেলা করে যে গুটিকয় দেশ সামষ্টিক আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, বাংলাদেশ সেগুলোর অন্যতম। তবে রিজার্ভ চুরি যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে কতটা প্রভাব ফেলেছে তা ভেবে দেখার বিষয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যত বেশি আধুনিক ব্যবস্থার প্রণয়ন হবে সেই সাথে বিকল্পভাবে চুরি বা সফট্ওয়্যার ব্যবহারে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ কতটা সফলতা পেয়েছে?

আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকারে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব হতে স্বাধীনতা উত্তর এখনো বিদ্যমান। ভৌগোলিক ভাবে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সারির দেশের ঘাটি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশের খনিজ পদার্থের ওপর এবং দেশের সমুদ্র বন্দর এশিয়া মহাদেশের জন্যে বিরাট ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারপোযোগী। এমন সব দিক বিবেচনা করে সমুদ্রসীমা ও তৎসংলগ্ন স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আবারো হুমকির দিকে নিয়ে যাবে আগামীতে বিশ্বের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গন। পৃথিবীর চারটি সর্ববৃহৎ অর্থনীতি, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাপানের মধ্যে অন্তত তিনটি বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সখ্য ও সহযোগিতা গভীরায়নে আগ্রহী। জাপানের শতকরা ৭১ ভাগ কোম্পানি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। চীন বাংলাদেশের সব মেগা প্রকল্পে সহযোগিতা দিতে চায়। সকল দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে সমঝোতামূলক সমাধান করে অগ্রসর হতে চায় ভারতবর্ষ। তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দুটো বড় ইস্যু- তিস্তার পানিবণ্টন ও সীমান্ত চুক্তি আশু সমাধানের দিকে অগ্রসরমান। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের আরও উষ্ণায়নে ইচ্ছুক অংশীদার হতে চায়। বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি এখন তিন হাজার তিনশ কোটি মার্কিন ডলার। এখানে দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো কোন দেশের সাথে অর্থনৈতিক ভাবে দেশের উন্নয়নে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা কতটা গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে পারছে আমাদের ডিজিটাল বিশেষজ্ঞরা? তাই প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা যা বাংলাদেশের আগামী ১০ বছর পর কোথায় পৌঁছাবে; তার অবাধ আলোচনা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখার পথ প্রদর্শক সংশ্লিষ্টগণ।

চলবে…