তেজগাঁওস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে থেকে ফার্মগেইট, খামারবাড়ি ও বিজয়স্মরনী এলাকার ক্রসিং পয়েন্টগুলিতে অসহনীয় যানজট প্রায় নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার । এক মিনিটের পথ যেন মাঝে মাঝে একঘন্টায়ও ফুরায় না । কোন কিছুই করার নেই যেন আমাদের যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়সমূহের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের এমন একটি গুরুত্বপূর্ন মহানগরীর তথা রাজধানীর কেন্দ্রস্থলের যানজট নিরসনের জন্য । উচ্চপদস্থ এই সকল কর্তাব্যক্তিরা নিজেরা তো কিছুই করতে পারে না, আবার কেউ ভালো পরামর্শ দিলে তাও গ্রহন করে না, পাছে নিজেদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এই ভয়ে । ফলে আমাদের অতি সহজে সমাধান যোগ্য সমস্যাগুলিরও আর কোন সমাধান হয় না বছরের পর বছর ধরে । ঢাকা মহানগরীর যানজট সমস্যাও এমনি একটি সহজে সমাধান যোগ্য একটি সমস্যা কিন্ত ঐ সকল কর্মকর্তাদের কারনে মনে হয় এই সমস্যার কোনই সমাধান নাই । সমগ্র ঢাকা মহানগরীর যানজট সমস্যার সহজ সমাধান নিয়া দীর্ঘদিন দৌড়ঝাঁপ করে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের মনগলাতে ব্যর্থ হয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে অবশেষে স্পট বাই স্পট যানজট কবলিত এলাকাগুলির যানজট নিরসনের কৌশলগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্লগে লিখে সকলকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি । প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আজ বিজয়স্মরনী ও ফার্মগেইট এলাকার যানজট নিরসনের আমার প্রস্তাবটি তুলে ধরলাম । অত্র এলাকার যানজট নিরসনের জন্য বড় কোন অবকাঠামো, যেমন ফ্লাইওভার নির্মানের কোন প্রয়োজন নাই । শুধুমাত্র অত্র এলাকার রাস্তাগুলিকে ওয়ানওয়ে রাস্তায় রুপান্তর করেই এই এলাকার যানজট পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব বলে আমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ।
আমার প্রস্তাবিত এই ওয়ানওয়ে রাস্তাটি হবে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে সোজা দক্ষিনে ফার্মগেইট পর্যন্ত, তারপর ফার্মগেইট হইতে খামারবাড়ি পর্যন্ত, তারপর খামারবাড়ি হইতে সোজা উত্তরে আইডিবি ভবন সংলগ্ন চৌরাস্তা পর্যন্ত, আবার সেই চৌরাস্তা হইতে পুরাতন বিমান বন্দরের ভিতর দিয়ে যাওয়া নূতন রাস্তাটির শেষ প্রান্ত পর্যন্ত অর্থ্যাৎ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গিয়ে এই ওয়ানওয়ে রাস্তাটি শেষ হবে । বিজয়স্মরনীর বিমান চত্বর থেকে রেংগসভবন সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বর পর্যন্ত রাস্তাটি হবে টুওয়ে পদ্ধতির সংযোগ সড়ক । উপরে বর্ণিত ওয়ানওয়ে রাস্তার মাঝখানের সকল ডিভাইডার ও লাইটপোষ্টগুলি অবশ্যই সম্পূর্নরুপে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং প্রয়োজনানুযায়ী কিছু কিছু রাস্তায় আবার বিশেষ ধরনের ডিভাইডার পূন:নির্মান করতে হবে । এখন আসি এই ওয়ানওয়ে রাস্তাটি দিয়া কিভাবে গাড়িগুলি চলাচল করবে সেই বর্ননায় । ওয়ানওয়ে রাস্তাটির বর্ননা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম ,গাড়ির চলাচলের বর্ননাও সেইখান থেকে শুরু করলাম,যথা-মহাখালীর দিক থেকে আসা গাড়িগুলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দিয়া দক্ষিন দিকে অগ্রসর হয়ে রেংগসভবন মোড়ে এসে তিনভাগ হয়ে প্রথমভাগ বামদিকে টার্ন নিয়ে ওভারপাস দিয়ে সোজা নাবিস্কোর দেকে চলে যাবে, দ্বিতীয় ভাগ ডানদিকে টার্ন নিয়ে বিজয়স্মরণী রাস্তার উত্তরাংশ দিয়া চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পূর্বদিকের রাস্তা হয়ে আগারগাঁও ও মিরপুর-১০ এর দিকে চলে যাবে এবং তৃতীয়ভাগ বিজয়স্মরনী রাস্তার দক্ষিনাংশদিয়া মনিপুরীপাড়ার দিক থেকে আসা ও নাবিস্কোর দিক থেকে ওভারপাসের ওপর দিয়ে আসা গাড়িগুলির সাথে মিশে সোজা ফার্মগেইটের দিকে চলে যাবে । ফার্মগেইটের কাছে এসে পাট গবেষনা কেন্দ্রের সামনে গাড়িগুলি আবার তিনভাগে বিভক্ত হয়ে প্রথমভাগ বামদিকের রাস্তা দিয়া হলিক্রস কলেজের দিকে যাবে, দ্বিতীয় ভাগ পুলিশবক্সের সামনে দিয়া ডানদিকে টার্ন নিয়ে কাওরানবাজার-গ্রীনরোডের দিক থেকে আসা মিরপুরগামী গাড়িগুলির সাথে মিশে পার্কের উত্তরাংশের রাস্তা দিয়া খামারবাড়ির দিকে চলে যাবে । তৃতীয়ভাগ হলিক্রস কলেজের দিক থেকে আসা গাড়ির সাথে মিশে সোজা কাওরানবাজারের দিকে চলে যাবে এবং এদের মধ্য থেকে আবার কিছু গাড়ি ফার্মগেইট পানির পাম্পের দক্ষিনপাশ দিয়া ইউ টার্ন করে ফার্মগেইট ফুটওভারব্রিজের দিকে আসবে । তারপর ফুটওভার ব্রীজের নীচ থেকে গাড়িগুলি দুইভাগ হয়ে প্রথমভাগ পার্কের দক্ষিনদিকের রাস্তা দিয়া মানিকমিয়া এভিনিউ হইয়া সোজা আড়ং এর দিকে চলে যাবে, দ্বিতীয়ভাগ রেংগসভবন মোড়ের দিক থেকে আসা গাড়ির সাথে মিশে পার্কের উত্তরদিকের রাস্তা দিয়া খামারবাড়ির পশ্চিমপ্রান্তে গিয়ে আবার দুইভাগ হয়ে প্রথমভাগ সোজা মানিকমিয়া এভিনিউ হয়ে আড়ং এর দিকে চলে যাবে, দ্বিতীয়ভাগ আড়ং এর দিক থেকে মানিকমিয়া এভিনিউ হয়ে আসা গাড়ির সাথে মিশে ডানদিকে টার্ন নিয়ে সংসদভবন ও মনিপুরীপাড়ার মাঝখানের রাস্তাদিয়া সোজা উত্তরদিকে ক্রিসেন্টরোড-বিমানচত্বর মোড়ের দিকে চলে যাবে । মনীপুরীপাড়ার উত্তর প্রান্তের বিমান চত্বর ক্রসিং এ এসে গাড়িগুলি আবার তিনভাগে বিভক্ত হয়ে প্রথমভাগ বামদিকে টার্ন নিয়ে ক্রিসেন্ট রোডে ঢুকে সোজা পশ্চিমদিকে জিয়ার মাজারের দিকে চলে যাবে, দ্বিতীয় ভাগ ডানদিকে টার্ন নিয়ে বিজয়স্মরণী রাস্তার দক্ষিনাংশ দিয়া রেংগসভবন মোড়ে এসে আবার ডানদিকে টার্ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিক ও নাবিস্কোর দিক থেকে ওভারপাসের উপর দিয়ে আসা গাড়িগুলির সাথে মিশে সোজা ফার্মগেইটের দিকে চলে যাবে এবং তৃতীয়ভাগ ক্রিসেন্ট রোড হইতে আসা ও রেংগসভবন মোড় থেকে বিজয়স্মরণী রাস্তার উত্তরাংশ দিয়ে আসা গাড়িগুলির সাথে মিশে সোজা আগারগাঁ এর দিকে অগ্রসর হবে । আগারগাঁর দিকে অগ্রসরমান গাড়িগুলি থেকে মহাখালীগামী গাড়িগুলি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসে ইউ টার্ন করে মিরপুর-শ্যামলীর দিক থেকে আসা গাড়িগুলির সাথে মিশে পুরাতন বিমানবন্দরের ভিতরের রাস্তা দিয়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে এসে আবার দুইভাগ হয়ে যাবে । প্রথমভাগ বামদিকে টার্ন নিয়ে জাহাংগীর গেইট হয়ে মহাখালীর দিকে চলে যাবে, আর দ্বিতীয়ভাগ ডানদিকে টার্ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দক্ষিন প্রান্তে মহাখালীর দিক থেকে আসা গাড়িগুলির সাথে মিশে রেংগসভবন মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্বের বর্ননা অনুযায়ী তিনভাগে বিভক্ত হয়ে তিনদিকে চলে যাবে । আমার বর্ননা অনুযায়ী যদি রাস্তাটিকে ওয়ানওয়ে রাস্তায় রুপান্তর করা হয়, তবে এই এলাকার রাস্তার কোন ক্রসিং পয়েন্টেই আর ট্রাফিক সিগনালের মাধ্যমে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হবে না এবং গাড়িগুলি চলবে বাধাহীনভাবে, যেমনটা চলে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে । ফলে এই এলাকার রাস্তাগুলি দিয়া সম্পূর্ন যানজটমুক্তভাবে গাড়িগুলি চলাচল করতে সক্ষম হবে । অত্যন্ত অল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে এই ওয়ানওয়ে রাস্তাটি বাস্তবায়ন করে অত্র এলাকার যানজট দূর করা সম্ভব বিধায় মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি ।