`ও তে ওড়না দাও' নিয়ে জল বেশ ঘোলা হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে নানা মত, যুক্তি, তর্ক। বেশিরভাগই ধর্ম কেন্দ্রিক আলোচনা। প্রশ্ন উঠেছে শিশু শ্রেণীর একজন বাচ্চাকে ওড়নার মতো ধর্মীয় গোড়ামীকে ধারণ করতে ইনসিস্ট করা হচ্ছে। আমি মনে করি শুধু শিশু শ্রেণী নয়, শুধু বাংলা বইয়ে নয় – সব শ্রেণীতে, সব পুস্তকে প্রত্যেকটি গল্পের, প্রত্যেকটি পদ্যের, নিবন্ধের শেষে পাদটীকা আকারে এই `ও তে ওড়না দাও' বাক্যটি থাকা উচিত। কারণ আপনি জানেন না কোন পুস্তকের কোন গল্পটি পড়া শেষ করেই আপনার সন্তান ভারতীয় চ্যানেল দেখতে বসবে। টিভি খুলতেই ৪২ ইঞ্চি স্ক্রিনে দেখা মিলবে পরিবারের কলহপ্রিয় এক কন্যা তার বক্ষদেশের ৬৩.৯৮ শতাংশ উন্মুক্ত করে একখানা ব্লাউজ পরে লাফিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঠিক এই মুহূর্তেই আপনার, আপনার সন্তানের এবং পরিবারের সবার জন্য প্রয়োজন একখানা ওড়নার, স্ব স্ব দৃষ্টিকে আব্রুর মধ্যে নিয়ে আসার জন্য।
আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে যে, ভালো একটা সমন্বয় আছে তা এই বিষয়টি দেখলেই বোঝা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিশু বয়েসেই ওড়না ধরিয়ে দিচ্ছে যাতে সংস্কৃতি আর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত ভারতীয় অর্ধনগ্ন চ্যানেল দেখতে পারিবারিক ভাবে কোনো অসুবিধা না হয়।
ভারতীয় এই চ্যানেলগুলো নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিছুতেই কিছু হয়নি, কিছু হয় না। দিনদিন এদের অনুষ্ঠানের মান এতো উপরে উঠে যাচ্ছে যে এখন ভয় হয়। আমাদের নীতিনির্ধারকরা কি একবারও এইসব দেখেন না। এদের এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই যেখানে সেক্স এর উপস্থিতি নেই। আমি একটা টিভি শো করছি আর দর্শক একবারও সেক্স রিলেটেড কোনো শব্দ শুনবে না এটা অসম্ভব। এদের পোশাক, এদের ডায়ালগ, এদের তাকানো সবকিছুতে সেক্স। আধুনিকরা বলবেন `তো সমস্যা কি? সেক্স একটি জৈবিক বিষয়। এটা নিয়ে লুকো ছাপার কি আছে? যতসব ধর্মান্ধতা'। ভাই – এটা যতটা না ধর্মের তার চেয়ে ঢের বেশী আমার সংস্কৃতির, আমার নৈতিকতার, আমার লজ্জাবোধের। আপনি আধুনিক হয়ে প্রকাশ্য মঞ্চে ঘোষণা দিতেই পারেন `মাই ওয়াইফ ইজ টু সেক্সি' আর আমি হাজার বছরের বাঙালি হয়ে আমার সন্তানকে পাশে বসিয়ে রেখে আপনার এই বাক্য শুনতে পছন্দ করিনা।
এইরকম একটা শো `কফি উইথ করন'। সর্বশেষ এপিসোডে শহীদ কাপুর এবং তার স্ত্রীর সেক্স লাইফ নিয়ে করা মন্তব্য এখন আলোচনায়। কি করে এইসব অনুষ্ঠান পরিবারের সবাই মিলে দেখা সম্ভব! যে উপস্থাপক যত শরীর বিষয়ক কথা বলে সেলিব্রেটিদের সেক্স লাইফ জনসম্মুক্ষে নিয়ে আসতে পারবে সে তত বড় উপস্থাপক আর তার অনুষ্ঠানের টিআরপি তত বেশি। মনের মধ্যে সন্দেহ উঁকি দেয় আগামি ১০ বছর পরে করন সাহেবরা হয়তো সেক্স নিয়ে প্রশ্নের উত্তর শোনার পর উচ্ছসিত হয়ে বলবেন `ও মাই গড ! ইউ এঞ্জয়েড আ লট! আভি কারকে দেখাও – ইয়ার'। শুধু কফি উইথ করন না এইরকম আরও একটি অনুষ্ঠান হলো বিগ বস, আর তাছাড়া একতা কাপুর নামক এক বিকৃতমনার অশ্লীল সিরিয়ালগুলোতো আছেই।
আমার মানতে কষ্ট হয় যে, আমার দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী একজন খাঁটি বাঙালি সংস্কৃতির ধারক হয়েও কি করে এইসব টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বসে থাকেন। এই সমস্ত নোংরা চ্যানেল বন্ধ করতে তো আর ধর্মের ঢাল ব্যবহার করতে হবে না, যে অশিক্ষিত, ধর্মান্ধ, মলৌবাদ এইসব গালমন্দ শোনার ভয় আছে। এগুলো সরাসরি আমার সংস্কৃতির পরিপন্হী, পারিবারিক মূল্যবোধের পরিপন্হী, নৈতিকতার পরিপন্হী। আপনি শুধু আরেকবার ডাক দেন না `জাগো বাহে কুন্ঠে সবাই' – আমরা আছিতো আপনার পাশে।