ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি শিক্ষায় ভাস্কর্যের তুলনা হয় না (পর্ব- ১)

সৈয়দ আনোয়ারুল হক
Published : 1 May 2017, 04:44 AM
Updated : 1 May 2017, 04:44 AM

আমার ছোট মেয়ে নাদিয়া মাত্র পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে। আমি তখন পরিবারসহ সোনারগাঁ লোকশিল্প যাদুঘরে বেড়াতে গেলাম। যাদুঘরের গেটের ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে নাদিয়া অত্যন্ত খুশি হয়ে বলল, "বাবা এই ছবিটা তো আমাদের বইয়ের মধ্যে আছে, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা।" আমি বললাম, "তুমি ঠিকই বলেছো, এটি জয়নুল আবেদিনের আঁকা একটি তৈলচিত্র, এটার নাম 'সংগ্রাম' আর একজন এ ছবি দিয়েই ভাস্কর্য তৈরী করেছেন শিল্পী মোঃ কাইয়ুম।"

এরপর অনেক প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হয়েছে। কেন এর নাম 'সংগ্রাম' এ সংগ্রামের অর্থ কী? ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ভাস্কর্যটি সোনারগাঁ লোকশিল্প যাদুঘরে থাকায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উপকরণ হিসেবে কাজ করছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন অনেকটা প্রসারিত হয়েছে। আসলে এভাবেই তো বাস্তবে দেখে-শুনে-পড়ে বা কজের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে।

.

যাদুঘরের একটু ভিতরে যাওয়ার পর 'শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন যাদুঘর' এর সামনে তাঁর ভাস্কর্য দেখে খুব খুশি হল নাদিয়া। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, "নাদিয়া তুমি কি জান? কেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্য ও ছবি এখানে আছে?" তখন সে বলল, "শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এ যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আমাদের বইয়ে এটা পড়েছি।" তারপর আমি তাকে বললাম, "তাহলে চল আমরা এখন যাদুঘরের ভিতরে গিয়ে প্রাচীনকালের লোকশিল্প, ইতিহাস ও ঐতিহ্য দেখি।" আমার দুই কন্যার পাহাড় সমান প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অনেক্ষণ দেখার পর আবার চলে আসলাম বাইরে।

.

এরপর আমি, দুই মেয়ের মা ও মেয়েরা চারজন এক জায়গায় বসে কিছু খেয়ে নিলাম। আবার হাঁটা শুরু করলাম। বড় মেয়ে নাবিলা শেখ রাসেলের ভাষ্কর্য্য দেখেই খুশি হয়ে বলল, "বাবা, শেখ রাসেলের ভাস্কর্য এখানেও আছে দেখ দেখ।" আমি বললাম, "শেখ রাসেলের ভাস্কর্য আর কোথায় দেখেছো তুমি?" সে উত্তর দিল, "আমাদের শিশু একাডেমীর শেখ রাসেল যাদুঘর এ আছে।" আমি তখন বললাম, " মনে পড়েছে, গত বছর শিশু একাডেমীর শেখ রাসেল যাদুঘর গ্যালারি থেকে একশ এর উপরে ছবি উঠিয়ে ল্যাপটপে রেখেছিলাম।

.

এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল ভাস্কর্য দেখে ভাল লাগল। সবাই একে একে ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিলাম।

.

জাতির পিতার ভাস্কর্যের একটু উত্তরেই ছিল গ্রামবাংলা ঐতিহ্যবাহী বাঁশ, কাঠ ও বেতের জিনিসপত্র। সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কৃষকের লাঙল, জোয়াল,মই, মাছ ধরার উপকরণ, ডালা, কুলা, পাইলা সহ অনেক উপকরণ। আমার মেয়েদের কাছে এ সমস্ত জিনিসের চুলচেড়া বর্ণনা দিতে হয়েছে মা-বাবা দুজনকেই।

.

যাদুঘরের গেটের ভিতরে ছিল একটি ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের লড়াইয়ের ভাষ্কর্য্য। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের লড়াইয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে আরো চুলচেড়া বিশ্লেষণ করতে হলো মেয়েদের কাছে।

.

যাদুঘরের একেবারে পূর্বপাশে লেকের পাড়ে সাজানো বিশালদেহী হাতির পাল দেখে সেখানে গিয়ে অনেক ছবি উঠালাম সবাই। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খেয়ে একটু বিশ্রাম করে চলে আসলাম গেটের দিকে।

.

তারপর বিকাল হয়ে গেল। মেয়েদের পছন্দমত কিছু কেনাকাটা করে চলে আসলাম বাসায়।

(চলবে)