দালালদের হাতে জিম্মি

মোহাম্মাদ তানভীর জালাল
Published : 13 May 2012, 05:09 AM
Updated : 13 May 2012, 05:09 AM

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আজ দালালের হাতে বন্দি। সব ধরনের মানুষ আজ রোগী নিয়ে দালালি করছে। ডাক্তার, সিস্টার, ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে হেন কেউ নাই যে রোগী নিয়ে দালালি করছে না। আর এই দালালদের খপ্পরে পড়ে রোগীর চিকিৎসার ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কাকে বিশ্বাস করবেন ভাই, বোন , ছেলে কিংবা মেয়ে? কাউকেই বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। যার হাতেই রোগী ধরা খাচ্ছে সেই তার দালালির ভাগ চাচ্ছে। এই দালালরা কিভাবে প্রশ্রয় পাচ্ছে? আসুন দেখি কিভাবে এই দালাল চক্র গড়ে উঠেছে।

এই দালালদের উত্থানের পেছনে কিছু সংখ্যক নীতি বর্জিত ডাক্তাররাই দায়ী। অনেকেই তাঁদের প্র্যাকটিস জমাতে বিভিন্ন ভাবে হাতুড়ে ও পল্লী চিকিৎসকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে রোগী যোগাড়ের চেষ্টা চালায়। এই ভাবে এই কাজে অন্যান্যরাও জড়িয়ে পড়ে কারন বিনা পরিশ্রমে টাকা কামাইয়ের সুযোগ কে হাতছাড়া করে! তখন ডাক্তারদের মাঝে দেখা দেয় দালাল ভাগানোর প্রতিযোগিতা কে কতো বেশী দালালকে খুশি করতে পারে শুরু হয় সেটার প্রতিযোগিতা। এভাবে দালালরা এতটাই দামী হয়ে যায় যে দেখা যায় দালাল যা পায় ডাক্তার তার সিকি ভাগের এক ভাগও টাকা পায় না। এভাবে ডাক্তাররা হয়ে যায় দালালদের হাতের পুতুল। এভাবেই দালালদের দউরাত্ত দিন দিন বাড়ছে। এমনকি তাঁরা এখন ডাক্তারদের বাধ্য করছে রোগীকে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা লিখে দিতে। আর এইসব পরীক্ষার জন্য মোটা অঙ্কের কমিশন নিচ্ছে ডায়াগনসটিক সেন্টার থেকে।

দালাল বাগানোর জন্য বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দিচ্ছে বিভিন্ন অফার। এতে সাধারন রোগীরা হচ্ছে প্রতারিত ও খরচ যাচ্ছে অনেক গুন বেড়ে। এই দালাল শ্রেণীর হাত হতে রোগীদের রক্ষা করতে হলে রোগীকে হতে হবে আরও সচেতন ও শিক্ষিত। সরাসরি ডাক্তার এর কাছে যেতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই দালালদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় আর খরচ ও অনেক কম হয়। অনেকেই পল্লী চিকিৎসকের উপর খুব ভরসা করে কিন্তু মনে রাখবেন ওরাই এক নম্বর দালাল। আপনি ভাবছেন আহারে ছেলেটা আমার জন্য কতো খাটছে সে আমাকে সাথে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছে তাঁকে হয়ত খুশি হয়ে কিছু দিয়েও দিলেন। কিন্তু আপনি বুঝতেই পারলেন না যে সে আপনাকে বেচে দিয়ে কতো কামাই করে নিল! অতএব সাবধান কাউকে সহজে বিশ্বাস করবেন না। আপনি হয়ত কোন এক ডাক্তারকে দেখিয়েছেন আর উনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন আপনার অপারেশন লাগবে আর উনি বললেন যে আপনার কোন চিন্তা নাই আমার হাতে ভালো ডাক্তার আছে আপনি এতো টাকা জোগাড় করেন আপনার অপারেশন আমি করিয়ে দিব। তার কাছ থেকেও সাবধান! সে আপনার টাকা নিয়ে যত কম খরচে সম্ভব কাউকে দিয়ে অপারেশন করিয়ে বাকি টাকা মেরে দেয়ার ধান্দায় আছেন।

কয়েকদিন পূর্বে এক সিস্টার আমার কাছে রোগী দেখিয়ে বলল স্যার ইনি আমার ভাই, আমি আপনার কাছে বাহিরে অপারেশন করাব। আমি রাজী হলাম । কিন্তু সে বলল সে আমার খরচের অতিরিক্ত ১০,০০০ টাকা রোগীর কাছ থেকে নিবে। আমি তো তাজ্জব বনে গেলাম! ভাই এর সাথে দালালি! আমি খুবই মর্মাহত হয়ে তাঁকে না বলে দিলাম। এই রকম বহু প্রস্তাব পাই, ওরা বলে স্যার আপনি আমাদের প্রস্তাবে রাজী হয়ে যান দেখবেন আপনি রোগী দেখে শেষ করতে পারবেন না। কিন্তু আমি পারিনা বিবেক বাঁধা দেয়। কিন্তু অনেকেই সেটা আনন্দের সাথেই করে যাচ্ছেন আর বলছেন যে আমাকে রোগী দিয়ে দেখ কমিশন কেমন দেই!!!

এই দালালদের খপ্পর থেকে বাঁচতে হলে আমার মনে হয় ডাক্তাররা যদি সরাসরি সঠিক প্রচার প্রচারণা চালায় তাহলে রোগীরা সরাসরি ডাক্তারদের চিহ্নিত করে তার কাছে চলে যেতে পারে। এতে দালালদের হাত থেকে রোগীরা রেহাই পাবে আর তাঁদের সঠিক চিকিৎসা কম খরচে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক নামিদামী প্রফেসর ও ডাক্তাররা জিম্মি হয়ে গেছেন বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের হাতে। এইসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা এর মাধ্যমে রোগীদের আকৃষ্ট করে ঐসব প্রতিষ্ঠান মুখি করে ফেলছে। তাই অনেক রোগী ডাক্তারকে না চিনে যায় ঐসব প্রতিষ্ঠানে । যেহেতু রোগী আসে ঐসব প্রতিষ্ঠানের নামে তাই ডাক্তাররা ওখানে অসহায় এর মতো থাকে। প্রতিষ্ঠানের খরচ উঠাতে আর তার চেম্বার রক্ষা করতে রোগীকে দিতে হয় অপ্রয়োজনীয় টেস্ট।

অনেক হাসপাতালে রোগীর কাছ থেকে যে টাকা ডাক্তারের নাম করে নেয়া হয় তার অনেক কম টাকা ডাক্তারকে দেয়া হয়। কারন রোগী যেহেতু হাসপাতাল এর নামে এসেছে ডাক্তারের কাছে আসেনি তাই ডাক্তারকে ওরা যা দিবে তাই নিতে হবে। অথচ রোগীর কাছ থেকে কিন্তু ডাক্তারের নাম করেই টাকাটা নিচ্ছে। অনেক ডাক্তার বাধ্য হয়ে এই অপকর্ম মুখ বুজে সহ্য করছেন কারন ওখানে চেম্বার না করলে হয়ত তিনি কোন রোগীই পাবেন না। আর ঐসব প্রতিষ্ঠান ও এই সুযোগে ডাক্তারকে ব্যাবহার করে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। আর এই কাজে সিদ্ধহস্ত হল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল। ওরা এই কাজটা খুব বেশী করে যেহেতু রোগীরা ওদের হাসপাতালের নামে আসে।

শুধু দেশী নয় অনেক বিদেশী হাসপাতালও রোগী ধরার জন্য বিভিন্ন এজেন্সি খুলেছে এই দেশে। আর এঁদের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে রোগী ধরার পাঁয়তারা চলছে সমানে।
এই দালাল চক্র থেকে আমাদের রোগীকে রক্ষা করতে হবে।আসুন আমরা সবাই মিলে এইসব দালালদের প্রতিহত করি। রোগী ও রোগীর নিকট অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ আপনারা যথাসম্ভব দালালদের এড়িয়ে চলুন। সরাসরি ডাক্তারকে দেখাতে চেষ্টা করুন। আপনার যে রোগ হয়েছে সেই ডাক্তারের ঠিকানা নিয়ে সরাসরি তার সাথে যোগাযোগ করুন। কোন ভায়া বা কারো মাধ্যমে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কারো রেফারেন্স এ গেলেও ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এই দালাল চক্রকে পাশ কাটানো খুবই কঠিন কাজ। আল্লাহ্‌ আমাদের সহায় হউন।