কৃষি পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা, যা দেখছি

শুভ্র মোহাম্মদ
Published : 2 Nov 2012, 07:45 AM
Updated : 2 Nov 2012, 07:45 AM

প্রিয়জনের সাথে নিজ নিজ ধর্মাচার তথা পূজা ও ঈদ উদযাপনের পর আবার কর্মচাঞ্চল্য এসেছে সবার জীবনে। গ্রাম বাংলার মানুষ ব্যস্ত এখন আমন সংগ্রহে ও রবি ফসল আবাদ পরিকল্পনা নিয়ে। অফিস পাড়ায় ও ইত্যবসরে শুরু হয়ে গেছে কর্মব্যস্ততা। ঈদের টুকরো টুকরো স্মৃতি ভাগাভাগি করছেন অনেকেই। ঈদ পূর্ব কুরবানির হাটের তিক্ত ও মজার অভিজ্ঞতাও হয়েছে কারো কারো। ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়িতে যাওয়া ও ফিরে আসার ঝক্কির কথা না বললেই নয়। এ বছর ঢাকার বাজারে নিম্ন মূল্যের কারণে কুরবানির হাটে গরু বিক্রি করতে না পারা কৃষকের কান্নার স্মৃতিও ভাবিয়ে তুলেছে কাউকে না কাউকে। সব কষ্ট ভুলে হয়ত আবার নতুন একটি ঈদ তথা মিলন মেলার জন্য অপেক্ষা করবো আবার একটি বছর। কিন্তু কৃষকের যে অফুরন্ত ক্ষতি হল তারা এটা কি করে ভুলবে। কিংবা এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার মত বিকল্প কি উপায় আছে তাদের হাতে।

বাংলাদেশ নদ-নদী বিধৌত বঙ্গীয় বদ্বীপ। সাতান্ন হাজার বর্গ মাইলের ছোট্ট এই উর্বর ভূমিতে প্রায় ষোল কোটি মানুষের বসবাস। ক্ষুধা ও দারিদ্র পীড়িত বিশাল এ জনগোষ্ঠীর নানান প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম যেন আর শেষ হবার নয়। অশিক্ষা ও অন্ধতা তাদের কে বুঝতে শেখায়নি খাদ্য নিরাপত্তা কি, তারা জানতে পারেনি তাদের অধিকার ও সীমাবদ্ধতা কি? এদের অধিকাংশের মূল পেশা কৃষি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশা-পাশি সময়পযোগী কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণার অভাব, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে ধীরগতি, নতুন প্রযুক্তি ভীতি, না জেনে, না বুঝে অপরিকল্পিত ও মাত্রাতিরিক্ত সার, সেচ ও কীটনাশকের ব্যবহার কৃষি আবাদ কে ব্যয়বহুল ও অলাভজনক করেছে। যা দরিদ্র কৃষক কুলকে ঠেলে দিচ্ছে অধিকতর দারিদ্রের দিকে।এর পেছনে তাদের অজ্ঞতা ও ভুল থেকে শিক্ষা না নেয়াটা অনেকাংশে দায়ী।

২০১০ সালের কথা মনে পড়ে। কুরবানি উপলক্ষে উচ্চ মূল্য প্রাপ্তির আশায় কৃষক তাদের প্রায় অধিকাংশ গরু ঢাকায় নিয়ে আসে। ফলাফল গ্রামের ক্রেতারা গরুর সংকটের কারণে অধিক মূল্যে গরু কিনতে বাধ্য হয়। কিন্তু ঢাকা শহরে চাহিদার চাইতে যোগান বেশি থাকায় গরুর মূল্য একদিকে হ্রাস পায় অন্যদিকে অবিক্রীত গরু ফেরত নিয়ে যেতে হয় কৃষককে। বিপরীত ঘটনা ২০১১ এ দেখা যায়। ঢাকায় গরু চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। ২০১২ কথা আর নাই বা বললাম। এই ঘটনা শুধু যে গরুর ক্ষেত্রেই ঘটছে তা কিন্তু নয়। প্রধান প্রধান কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রেও চিত্রটা একই রকম। যেমন আলুর কথাই ধরা যাক এক বছর আলুর আবাদ এত বেশি করা হল যে আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের সংকট, বাজারে নিম্ন চাহিদা, অতিরিক্ত যোগান থাকায় আলুর বাজার মূল্য এমন পর্যায়ে নেমে এলো যে কৃষক আলু জমি থেকে উত্তলনের যে খরচ তা তুলতে পারবেন কি না সন্দেহ দেখা দিল। ফলাফল সম্পদ হানির দুঃখ্, বেদনা থেকে হতাশা ও পরবর্তী বছর আবাদ বন্ধ। এমনি করে শুধু আলু নয়, ধান, পাট সবজি সব কৃষি পণ্য আবাদে এমন একটি সমন্বয় হীনতা দেখা যায়। এমনিতেই কৃষি আবাদে অপরিকল্পিত সার, কীটনাশক ও সেচ ব্যবহারের কারনে কৃষি লাভ জনক নেই তার উপর চাহিদা যোগান, সংগ্রহোত্তর সংরক্ষণ ও সুষ্ঠ বিপণন ব্যাবস্থা না থাকায় কৃষকগণ সর্বশান্ত হচ্ছে।

২০০৮ বিশ্বজুড়ে চালের সংকট তৈরি হয়। আমাদেরও খাদ্য ঘাটতি ছিল। কেনার মত অর্থ থাকা সত্ত্বেও কিনতে পারা যায়নি বিশ্ব বাজার থেকে। যা আমাদের সার্বিক অর্থনীতির জন্য নেতি বাচক ছিল এবং দেবতার বেশে আবির্ভূত হওয়া সরকারকে চরম বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল চালের সংকট। বিগত বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়। চালের বাজার নিম্নমুখী থাকায় কৃষক তার উৎপাদন খরচ তুলতে পারেনি। বিগত বছরের লাভ ক্ষতি হিসেবে নিয়ে এ বছর বোরো আবাদ কমিয়ে দিলে আবার চালের সংকটে পড়তে পারে দেশ। তাই আমাদের উচিৎ এই চক্র থেকে বের হয়ে এসে চাহিদা ভিত্তিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে না আবার কৃষি পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠবে না নিম্ন আয়ের মানুষের।ল

প্রিয়জনের সাথে নিজ নিজ ধর্মাচার তথা পূজা ও ঈদ উদযাপনের পর আবার কর্মচাঞ্চল্য এসেছে সবার জীবনে। গ্রাম বাংলার মানুষ ব্যস্ত এখন আমন সংগ্রহে ও রবি ফসল আবাদ পরিকল্পনা নিয়ে। অফিস পাড়ায় ও ইত্যবসরে শুরু হয়ে গেছে কর্মব্যস্ততা। ঈদের টুকরো টুকরো স্মৃতি ভাগাভাগি করছেন অনেকেই। ঈদ পূর্ব কুরবানির হাটের তিক্ত ও মজার অভিজ্ঞতাও হয়েছে কারো কারো। ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়িতে যাওয়া ও ফিরে আসার ঝক্কির কথা না বললেই নয়। এ বছর ঢাকার বাজারে নিম্ন মূল্যের কারণে কুরবানির হাটে গরু বিক্রি করতে না পারা কৃষকের কান্নার স্মৃতিও ভাবিয়ে তুলেছে কাউকে না কাউকে। সব কষ্ট ভুলে হয়ত আবার নতুন একটি ঈদ তথা মিলন মেলার জন্য অপেক্ষা করবো আবার একটি বছর। কিন্তু কৃষকের যে অফুরন্ত ক্ষতি হল তারা এটা কি করে ভুলবে। কিংবা এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার মত বিকল্প কি উপায় আছে তাদের হাতে।

বাংলাদেশ নদ-নদী বিধৌত বঙ্গীয় বদ্বীপ। সাতান্ন হাজার বর্গ মাইলের ছোট্ট এই উর্বর ভূমিতে প্রায় ষোল কোটি মানুষের বসবাস। ক্ষুধা ও দারিদ্র পীড়িত বিশাল এ জনগোষ্ঠীর নানান প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম যেন আর শেষ হবার নয়। অশিক্ষা ও অন্ধতা তাদের কে বুঝতে শেখায়নি খাদ্য নিরাপত্তা কি, তারা জানতে পারেনি তাদের অধিকার ও সীমাবদ্ধতা কি? এদের অধিকাংশের মূল পেশা কৃষি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশা-পাশি সময়পযোগী কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণার অভাব, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে ধীরগতি, নতুন প্রযুক্তি ভীতি, না জেনে, না বুঝে অপরিকল্পিত ও মাত্রাতিরিক্ত সার, সেচ ও কীটনাশকের ব্যবহার কৃষি আবাদ কে ব্যয়বহুল ও অলাভজনক করেছে। যা দরিদ্র কৃষক কুলকে ঠেলে দিচ্ছে অধিকতর দারিদ্রের দিকে।এর পেছনে তাদের অজ্ঞতা ও ভুল থেকে শিক্ষা না নেয়াটা অনেকাংশে দায়ী।

২০১০ সালের কথা মনে পড়ে। কুরবানি উপলক্ষে উচ্চ মূল্য প্রাপ্তির আশায় কৃষক তাদের প্রায় অধিকাংশ গরু ঢাকায় নিয়ে আসে। ফলাফল গ্রামের ক্রেতারা গরুর সংকটের কারণে অধিক মূল্যে গরু কিনতে বাধ্য হয়। কিন্তু ঢাকা শহরে চাহিদার চাইতে যোগান বেশি থাকায় গরুর মূল্য একদিকে হ্রাস পায় অন্যদিকে অবিক্রীত গরু ফেরত নিয়ে যেতে হয় কৃষককে। বিপরীত ঘটনা ২০১১ এ দেখা যায়। ঢাকায় গরু চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। ২০১২ কথা আর নাই বা বললাম। এই ঘটনা শুধু যে গরুর ক্ষেত্রেই ঘটছে তা কিন্তু নয়। প্রধান প্রধান কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রেও চিত্রটা একই রকম। যেমন আলুর কথাই ধরা যাক এক বছর আলুর আবাদ এত বেশি করা হল যে আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের সংকট, বাজারে নিম্ন চাহিদা, অতিরিক্ত যোগান থাকায় আলুর বাজার মূল্য এমন পর্যায়ে নেমে এলো যে কৃষক আলু জমি থেকে উত্তলনের যে খরচ তা তুলতে পারবেন কি না সন্দেহ দেখা দিল। ফলাফল সম্পদ হানির দুঃখ্, বেদনা থেকে হতাশা ও পরবর্তী বছর আবাদ বন্ধ। এমনি করে শুধু আলু নয়, ধান, পাট সবজি সব কৃষি পণ্য আবাদে এমন একটি সমন্বয় হীনতা দেখা যায়। এমনিতেই কৃষি আবাদে অপরিকল্পিত সার, কীটনাশক ও সেচ ব্যবহারের কারনে কৃষি লাভ জনক নেই তার উপর চাহিদা যোগান, সংগ্রহোত্তর সংরক্ষণ ও সুষ্ঠ বিপণন ব্যাবস্থা না থাকায় কৃষকগণ সর্বশান্ত হচ্ছে।

২০০৮ বিশ্বজুড়ে চালের সংকট তৈরি হয়। আমাদেরও খাদ্য ঘাটতি ছিল। কেনার মত অর্থ থাকা সত্ত্বেও কিনতে পারা যায়নি বিশ্ব বাজার থেকে। যা আমাদের সার্বিক অর্থনীতির জন্য নেতি বাচক ছিল এবং দেবতার বেশে আবির্ভূত হওয়া সরকারকে চরম বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল চালের সংকট। বিগত বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়। চালের বাজার নিম্নমুখী থাকায় কৃষক তার উৎপাদন খরচ তুলতে পারেনি। বিগত বছরের লাভ ক্ষতি হিসেবে নিয়ে এ বছর বোরো আবাদ কমিয়ে দিলে আবার চালের সংকটে পড়তে পারে দেশ। তাই আমাদের উচিৎ এই চক্র থেকে বের হয়ে এসে চাহিদা ভিত্তিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে না আবার কৃষি পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠবে না নিম্ন আয়ের মানুষের।