রাজধানীর অলিতে গলিতে শহীদ মিনারের অবমাননা

তৌহিদুল ইসলাম
Published : 20 Feb 2016, 09:51 PM
Updated : 20 Feb 2016, 09:51 PM

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি । বাঙালি জাতির বাংলা ভাষা অর্জনের অনবদ্য একটি মাস । মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৪৮ সালে এ দেশের ছাত্র সমাজ মহান ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে ছাত্রদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র সমাজের গৌরবময় রক্তাক্ত ইতিহাস সৃষ্টি হয়। '৫২-এর ছাত্র আন্দোলন এদেশের বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের আকাঙ্খাকে জাগ্রত করে।

একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই আলোচনা সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু এই দিবসটি এখনকার তথাকথিত তরুন সমাজের কাছে অধরাই রয়ে গেল । অনেকেই জিজ্ঞাসা করলে তারা বলতেও পারবে না ভাষা আন্দোলন কেন হয়েছিল, তারপরেও তারা এইদিনটিকে বরণ করার জন্য করে থাকে নানা ঢং ও আয়োজন, যার বেশীরভাগটাই শহীদদের সন্মানের পরিবর্তে তাদেরকে অবমাননাই করাই বলা চলে ।

রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রধান আয়োজন থাকলেও আয়োজনের কমতি নেই বিভিন্ন এলাকার অলিতে গলিতেও, যেখানে তারা ইট দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে থাকে। যেখানে শহীদদের সন্মানে পুষ্পস্তবকের পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে টাকা (দশ টাকা, পাঁচ টাকা) যে যেমন পারে ।

এমনি ঢাকার এক এলাকায় আজ রাতে(২০ তারিখ ১০.১৫ মিনিটে) এই ঘটনা দেখে আমি উপস্থিত একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই আপনারা শহীদ মিনারে টাকা কেন নিচ্ছেন, আপনারা কি জানেন শহীদ মিনার কী আর কেনই বা তৈরি করা হয়? তখন তাদের ভাষ্য হল প্রতিবারেই তো এমন করি তাছাড়া এগুলো তৈরি করতে কত কষ্ট হইছে, টাকা না নিলে কাল মজা করব কিভাবে। আর যখন জিজ্ঞাস করলাম বলেন তো একুশে ফেব্রুয়ারি কী জন্য আমরা পালন করি তখন তারা বলল, এইদিনে আমরা দেশ স্বাধীন করছি তাই বিজয় উল্লাস করি । তখন আমি মজা করে বললাম, তা এই টাকা কি শহীদের জন্য ? শহীদরা কি এই টাকার ভাগ পাবে ? তখন তারাও মজা করে বলে দিয়ামুনি কালকে কিছু ভাগ, আরও বলল- "আরে ভাই টাকা দেয়ার হইলে দেন না হইলে ফোটেন" ।

এই যদি হয় এখনকার তরুণ সমাজের  ভাষার প্রতি ভালবাসা তবে ধিক্কার জানাই এই ভালবাসাকে ধিক্কার জানাই সামগ্র বাঙালি  জাতিকে এই সমাজ ব্যবস্থাকে । আর বিশেষ করে তাদের প্রতি ধিক্কার যারা প্রতি বৎসর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে সেমিনারের আয়োজন করে, আলোচনা সভার আয়োজন করে, ভাষা নিয়ে বড় বড় গলাবাজি করে আর এই তরুণ সমাজের মাঝে একুশের চেতনা বিকাশ ঘটাতে পারলো না, অথচ সেমিনারের পোষ্টারে বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকে একুশে ফেব্রুয়ারি আমার অহংকার একুশে ফেব্রুয়ারি আমার চেতনা ।

এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে আমাদের কোন এক প্রজন্মের তরুণেরা হয়তো বলবে একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ভাষা সৈনিকেরা এলিয়েনের সাথে যুদ্ধ করেছিলো । সর্বশেষে এই কথাই বলব যতদিন পর্যন্ত না একুশের মহত্ত আমাদের মাঝে সঠিকভাবে না বিকশিত হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের মহান ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথাই রয়ে যাবে ।