মগবাজার ফ্লাইওভারের নাম প্রস্তাব করছি ‘স্বেচ্ছাচার উড়াল সড়ক’

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 18 March 2017, 03:27 AM
Updated : 18 March 2017, 03:27 AM


মগবাজার ফ্লাইওভারের মত স্বেচ্ছাচারের এমন জ্বলন্ত উদাহরণ সারা বিশ্বে আর একটিও মিলবে কিনা সন্দেহ। এর নকশার ভুল থেকে শুরু করে কাজের মন্থর গতি, জনস্বার্থকে সামান্যতম বিবেচনায় না নেয়া- এ সবই আমার প্রস্তাব কৃত নামের স্বার্থকতা নির্দেশ করে। ফ্লাইওভারটির নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তমা কনস্ট্রাকশনকে যাদের ফ্লাইওভার তৈরির পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই!

ফ্লাইওভারটি তৈরি হচ্ছে একটি ব্যস্ত সড়কে অথচ নেই ন্যুনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এমনকি হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরেও নেয়া হয়নি কোন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। মগবাজার থেকে মালিবাগ পর্যন্ত সড়কে ছোটখাট ডোবা থেকে শুরু করে অজস্র খানা খন্দে ভরপুর। পুরো এলাকা ঢাকা পরে আছে ধুলোর আস্তরণে। এত কিছুর পরেও ৭৭২ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে আরও ৪৪২ কোটি টাকা। সময় বাড়ানো হয়েছে তিন বারে চার বছর।

প্রশ্ন হল কে এই তমা কনস্ট্রাকশনের মালিক? তিনি কি ঢাকার একাংশের মালিক। আমরা কি তার নিজস্ব সম্পত্তিতে অবৈধ বসবাসকারী? যদি তাই হয় তাহলে তার কর্ম যজ্ঞে সরকার কেন এত টাকা ঢালছে? নাকি তমা কনস্ট্রাকশন এ দেশটাকেই কিনে নিয়েছে? দেশটা কি তমার মালিকের তালুক?

তমা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনাকে থোরাই কেয়ার করছে। লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ-শিশু রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বছর বছর মানুষ মারা পড়ছে। অথচ এদের কিছুই হচ্ছে না? একটু খেয়াল করুন, দুর্ঘটনার পর একমাত্র দক্ষিণের মেয়র ছুটে গেলেন। কি লাভ সিটি কর্পোরেশন তো আর এর অথোরিটি নয়। তিনি কি করবেন? তিনি বড়জোর সাধারণ মানুষের দুঃখের ভাগীদার হবেন তাতে কি লাভ? গতবছর একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির গাফলতিতে সাদ থেকে ইট পড়ে এক পথচারী নিহত হলে সেই কোম্পানিকে এর দায় নিতে হয়েছিল। কিন্তু জানামতে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে রড পড়ে যে মটর সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছিল সে জন্যে তমাকে কোন দায় নিতে হয়নি।

আমি জানি না তমা কনস্ট্রাকশনের মালিক কে বা কারা। তবে তারা যে ভাসুর গোছের কেউ সেটা বেশ বুঝতে পারছি। গত দু'দিন ধরে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় মগবাজার ফ্লাইওভার নিয়ে একের পর এক আলাপ চারিতা চলছে অথচ কেউ একটিবার ভাসুরদের নাম মুখে আনলেন না!

এ দেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নেত্রীদের নামে উষ্মা প্রকাশ করা যায় কিন্তু কিছু জাতীয় ভাসুর আছেন তাদের নাম পর্যন্ত মুখে আনা যায় না। যে ৪৫% ক্ষেত্রে দুদক ব্যর্থ হয়েছে বলে স্বীকার করে তাও ঐ ভাসুরদের সম্পৃক্ততার কারণেই। কথা হল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভা তথা সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কাদের স্বার্থ রক্ষা করছেন? কেন করছেন? না হলে কোন ক্ষমতাবলেই বা তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন? এ দেশের মানুষ দিনের পর দিন পুড়ে মরলেও রাস্তায় বেড়িয়ে আসে না। এমন কি জানা থাকা স্বত্বেও আগুন দাতাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায় না। এদের তো পুড়ে মরাই উচিৎ।

২০১৩ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলে ২০১৭ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার চরম সীমা লঙ্ঘন করার পরেও, এমনকি স্থানীয় শিশু কিশোরদের মারাত্মক অসুস্থতা দেখা দেয়া স্বত্বেও যে এলাকার মানুষ এখন অব্ধি এর বিরুদ্ধে একটি মানব বন্ধন পর্যন্ত করেনি! তাদের মরাই উচিৎ।

আজ অবধি ক্ষুদ্ধ মানুষকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে দেখিনি। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠতে দেখিনি কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠনকে। তাঁর মানে হয় আমরা নিরেট নির্বোধ নয়ত আমাদের সহ্য ক্ষমতা অসীম। অতএব ভাসুরগন আরও হত্যা, আরও স্বেচ্ছাচার চালাতেই পারেন। একদিন হয়ত এই ভাসুরগণও টিভি টকশো তে এসে প্রকাশ্যে পূর্বেকার স্বেচ্ছাচারের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলবেন সে তুলনায় আমরা তো কিছুই করলাম না!

এরা তুলনামূলক আলোচনা করে এই স্বেচ্ছাচারকেও জাস্টিফাইয়ের চেষ্টা করবেন। আর আমরাও নতুন করে ভাবতে বসে যাবো। কে কার থেকে বড় স্বেচ্ছাচার? তবে এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও যেন কোন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একটু বেশিই প্রশ্রয় দিচ্ছেন। যে প্রশ্রয় তারা সমস্ত সাফল্যকে খুব সহজেই ম্লান করে দেয়। আর আওয়ামীলীগ সরকারকে দাঁড় করিয়ে দেয় অযাচিত প্রশ্নের মুখোমুখি।

kmgmehadi@gmail.com