সোনালু-জারুল-কৃষ্ণচূড়ার আর্তি

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 25 May 2017, 06:35 PM
Updated : 25 May 2017, 06:35 PM

আবদুল্লাহপুর থেকে শুরু করে বিমানবন্দর রোড হয়ে একেবারে হাতিরঝিল পর্যন্ত পুরো রাস্তার দুই ধারে সারি সারি লাল-হলুদ কৃষ্ণচূড়া গাছ। আবার মহাখালী থেকে বিজয় স্মরণী হয়ে একেবারে সংসদ ভবন পর্যন্ত গাঢ় হলুদ সোনালু ফুল গাছের সারি। শাহবাগ থেকে মতিঝিল রাস্তার যেখানেই একটু জায়গা পাওয়া গেছে সেখানেই অশোক, শিমুল, পলাশ লাগানো। পুরো মিরপুর রোড জুড়ে বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া। যখন গাছগুলো লাগানো হচ্ছিল, তখন ঢাকাবাসী একেও অন্যান্য আর পাঁচটা সাধারণ প্রকল্প বলেই মনে করেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই তখন এর প্রতি কারো কোন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু বছর ঘুরতেই ঢাকাবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করল চির চেনা ইট-পাথরের ঢাকা প্রকৃতির নিপুণ হাতে বর্ণিল সাজে সেজেছে। নতুন প্রান ফিরে পেয়েছে সে। ঢাকার আকাশ কেবলি রঙের মেলা!

সমগ্র বিমান বন্দর রোড লাল-হলুদ কৃষ্ণচূড়ায় ঢেকে গেছে। মহাখালী থেকে বিজয় স্মরণী হয়ে সংসদ ভবন রাস্তার দু'ধারে থোকা থোকা আগুন রঙা গাঢ় হলুদ সোনালী ফুলে বিমোহিত নগরবাসী। সুন্দরের এই ঘোর কাটতে না কাটতেই নগরবাসী দেখতে পেল মিরপুর রোড জুরে বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া সাদা আর হালকা গোলাপি আভায় স্নিগ্ধতার পসরা সাজিয়ে বসেছে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে মানুষ প্রাণভরে নগরের এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে। চলতি পথে নগরবাসি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করল ঢাকার রাস্তা থেকে উধাও হয়ে গেছে রোড ডিভাইডারের সেই কিম্ভূত কিমাকার সেই চিত্র। সবগুলো রোড ডিভাইডার ঢেকে আছে দারুণ সব লতাগুল্মের দেয়ালে। নেই কাটা তারের বেড়া, নেই রুগ্ন মৃতপ্রায় গাছ গুলো। সেখানে সতেজ সবুজ এক দেয়াল। তাকালে চোখ জুরিয়ে যায়।

পাঠকের বোঝার সুবিধার্তে প্রিয় এই ফুলগুলো এবং লতাগুল্মের দেয়ালের চিত্র দেয়া হলঃ

(ছবিসূত্র: http://bangla.bdnews24.com)

(ছবিসূত্র: http://bangla.bdnews24.com)


(ছবিসূত্র: http://www.oharalandscape.com)

হ্যাঁ পাঠক, এতক্ষণ ধরে আমি আমার স্বপ্নের ঢাকার চিত্রটি আঁকার চেষ্টা করছিলাম। সম্ভবত আমার এ স্বপ্ন নগরবাসী প্রত্যেকে সন্তুষ্টচিত্তে নিজ নিজ চোখে এঁকে নিবেন। একে আমি স্বপ্ন বলছি এ জন্য যে, এর বাস্তব রূপ দিতে হলে প্রয়োজন প্রকৃতি প্রেম, ফুলের প্রতি ভালবাসা আর একটি স্বাপ্নিক হৃদয়। বলা বাহুল্য এখানে বাণিজ্য প্রায় নেই বললেই চলে। কেবল মাত্র বাণিজ্যের জন্যে যারা শয়ে শয়ে কিম্ভূত আকৃতির বনসাইকে জায়গা করে দিতে ভীষণ যত্ন করে প্রায় ছয় মাস ধরে চেষ্টা করে রাস্তার দুই ধারের গাছগুলোর শেকড়, গোঁড়া কেটে দিয়ে মারার বন্দবস্ত করেছিল। তাদের কাছ থেকে আর যাই হোক প্রকৃতি প্রেম আশা করা যায় না। এখন এরা বেশ জোড় দিয়েই বলে চলেছেন তাদের ঐ কিম্ভূত আকৃতির বনসাই লাগাতে একটি গাছও কাটতে হয়নি। এই গাছগুলো যদি কথা বলতে পারত তাহলে হয়ত জানতে চাইত। কাটা যাতে না লাগে সে জন্যে আগেই মেরে ফেলার বন্দোবস্ত কারা করেছে?

আমরা ঢাকার রাস্তায় সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ছোট ছোট ঝিনুককে দেখতে পাই দেহের দ্বিগুন আকারের বিশাল আকৃতির ডিম পেরে বসে থাকতে! ডলফিনকে দেখতে পাই ঝর্নার পানিতে স্নান করতে! আমরা দেখতে পাই এক ফিট আকৃতির গাছের নিচে তিন ফিট আকৃতির টব বানাতে। দেখতে পাই বাথরুম টাইলস কী করে রোড ডিভাইডারের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কিছু লোককে টাকার কুমির বানিয়ে দিচ্ছে।

এখন আর আশা করি না যে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মাঝে প্রকৃত সৌন্দর্য বোধ জাগ্রত হবে। তথাপিও একজন সাধারণ নগরবাসী হিসেবে ঢাকার দুই সুযোগ্য নগর প্রধানের কাছে আমার একটি আবেদন জানাতে চাই।  রমনা, সোহরাওয়ার্দী, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যানসহ ঢাকার সবগুলো বড় পার্কে আলাদা আলাদা করে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, জারুল গাছ লাগিয়ে আলাদা আলাদা কর্নার করুন এবং ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলির দুই পাশে নির্দিষ্ট ভাবে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, জারুল, বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া গাছ লাগিয়ে দিন। যখন এই গাছগুলো ফুলে ফুলে ঢেকে যাবে তখন আপনিও কম বিস্মিত হবেন না। আপনিও আনন্দে আপ্লুত হবেন।

বিশ্বের সব থেকে জনবহুল এই শহরে গাছ চাই, অনেক-অনেক গাছ। প্রাণহীন শুষ্ক এই নগরে চাই  প্রানের স্ফুরণ। আর তা এনে দিতে পারে এই সব গাছ-ফুল। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে চাই পত্র-পল্লবে ভরপুর ভরা যৌবনা প্রকৃতি। ঢাকা বাসি বাঁচুক আনন্দে, বাঁচুক স্বস্তিতে, বাঁচুক অনাবিল প্রশান্তিতে। আমাদের এই ছোট্ট চাওয়াটি পূরণে আপনাদের দুজন নগরপ্রধানের সহৃদয় সহানুভূতিই যথেষ্ট।

(ছবিসূত্র: http://bangla.bdnews24.com)

এমন আধা গাছ লাগানো প্রকৃতির সাথে চরম রসিকতা ছাড়া আর কিছু না। যার মূল্যও হয়ত একদিন চড়া সুদে এই নগরবাসীকেই চুকাতে হবে। দয়া করে ঢাকাকে আর নিষ্প্রাণ করে তুলবেন না। থাইল্যান্ডের রাস্তায় এমন বনসাই লাগানো আছে বলেই যে সেটা ঢাকার রাস্তায়ও লাগাতে হবে এমন তো কোন কথা নেই।

আপনারা দুই নগরপ্রধানই পারেন এই ঢাকাকে পুনরায় প্রকৃতির কোলে ফিরিয়ে নিতে। আপনারা কি দয়া করে আমাদের এই আর্তিটুকু বিবেচনায় নেবেন?