সরকার কবে পদক্ষেপ নিবে এসব দুর্ভাগাদের জন্য ?

তৌহিদ উল্লাহ শাকিল
Published : 4 Dec 2011, 01:51 PM
Updated : 4 Dec 2011, 01:51 PM

গত বেশ কয়েকদিন হাসপাতাল বাসা অফিস দৌড়াদৌড়ি করতে করতে বেশ ক্লান্ত । সুস্থ হতেই সবাই অনেক শুভেচ্ছা জানাল । তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই । সকলের জন্য অনেক ভালোবাসা ছাড়া আমার দেবার কিছু নেই ।

রিয়াদের বিখ্যাত হাসপাতাল রাবেয়া ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য গেলাম । যথারীতি ইনস্যুরেন্স কার্ড দিয়ে চিকিৎসা করালাম । ভারতীয় ডাক্তার সিমাব রহমান বেশ ভাল মত পরীক্ষা করে ভাল চিকিৎসা করলেন । অত্যাধুনিক হাসপাতাল চিকিৎসা সেবা অনেক ভাল । এছাড়া ইন্দোনেশিয়ান নার্স তাদের সেবা আমাকে মুগ্ধ করল । দুইদিন সেখানে ছিলাম । বেশ কয়েকটি স্যালাইন এবং ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে । আশি পারসেন্ট ইনস্যুরেন্স খরচ আর বাকিটা আমার নিজের ।

চিকিৎসা সেবায় নিজের খরচের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চলে আসব । সাথে পরম শুভাকাঙ্ক্ষী জাহাঙ্গীর ভাই ছিল । সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবে মাত্র বেরিয়ে এসেছি এমন সময় দেখি শরীরে রক্তমাখা এক বাংলাদেশী হাসপাতালের বাইরে কাঁদছে । এগিয়ে গিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলাম । জবাবে বলল

"একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে কাজ করছিল ছেলেটি । সাথে পাসপোর্ট আছে কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট (আকামা ) নাই । তাই আহত হয়ে ও চিকিৎসা করাতে পারছে না । হাসপাতাল কতৃপক্ষ আকামা ছাড়া কারো চিকিৎসা করতে অপারগ । "

ছেলেটির বয়স হবে বাইশ কি তেইশ বছর। জিজ্ঞেস করলাম কতদিন হল এখানে এসেছে। জবাবে বলল – " আজ তিন বছর হল এসেছে , কপিল (স্পন্সর) কাজ দেয়নাই এমনকি ওয়ার্ক পারমিট ও বানিয়ে দেয় নাই "

ভাবলাম কি করা যায় । ভেতরে গিয়ে ভারতীয় ডাক্তারের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করলাম । ডাক্তার বললেন-

"এই রকম কেইস আমরা হ্যান্ডেল করিনা । তবে আপনি যেহুতু অনুরোধ করছেন তাহলে দেখি কি করা যায় । তবে সেক্ষেত্রে আপনার কার্ডটির প্রয়োজন হতে পারে । "

আমি রাজি হলাম । সেই ডাক্তারের অনেক সহযোগিতায় ছেলেটিকে মোটামুটি ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হল । ছেলেটি কৃতজ্ঞতায় কেঁদে ফেলল । আমি তার ঔষধ সংগ্রহ করে নিজের বাসায় চলে এলাম।
সারারাত একটু ঘুম আসেনি । শুধু কি এমন একজন বাংলাদেশী এমন অবস্থায় আছে । হাজার নয় লাখো বাংলাদেশী আজ সৌদি আরবে অবৈধ ভাবে সৌদি আরবে অবস্থান করছে । যাদের জীবন যাপন কত
কষ্টের তা নিজের চোখে না দেখলে বুঝার উপায় নাই । আমার কষ্ট লাগে কিন্তু আমি কিইবা করতে পারি ।

বারবার এই নিয়ে লিখছি , অনেক বিরক্ত হতে পারে । কিন্তু যাদের নিয়ে লিখছি তাঁরা কি রকম সমস্যায় আছে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই । পালিয়ে পালিয়ে কাজ করতে হয় । দিনের পর দিন লুকিয়ে কাজ করতে করতে তাদের অনেকের মনোবল আজ শুন্যের কোঠায় ।

সরকারের উচিত এসব অবৈধ বাংলাদেশীদের জন্য অতি জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া । প্রতিবার অনেক আশা নিয়ে লিখি কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ না দেখে নিজেই নিজের কাছে হতাশ হই । আশা করি সরকার সেই সব দুর্ভাগা বাংলাদেশীদের জন্য অচিরেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিবে ।