মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে একজন হয়েও যে কারণে আমি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 15 April 2015, 08:12 PM
Updated : 15 April 2015, 08:12 PM

১। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাজা কী?

২। প্রায় প্রতিবছরে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ঘটে, ঘটে কিনা?

৩। চৌদ্দ বছর বয়সে (১৪ বছর বয়সে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছিল, ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল ঊনিশ বছর বয়সে) ক্ষুধিরামের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, সে কথা আপনারা, মানে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ জানেন কিনা? ক্ষুধিরাম কিন্তু হাতেনাতে ধরা পড়েনি, একজন পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে ধরা হয়েছিল। চৌদ্দ বছর বয়সে ব্রিটিশ অফিসার চৌকি গুলোতে বোম্বিং এর পরিকল্পনা সে করেছিল! উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামানের বয়স ছিল বিশ বছর।আর কামারুজ্জামানের বিচার শুধু তার বিশ বছরের অপরাধের জন্য হয়নি, জীবনভরই তো কামারুজ্জামানরা অপরাধ করে গেছে, যাচ্ছে।

৪।হত্যাকরার পরেও যে নির্লিপ্ত থাকতে পারে, স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে যেতে পারে, একই ধরণের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে পারে তাকে মানুষ বলা যায় কি? আরো অনেক ষড়যন্ত্র এবং হত্যকাণ্ডের সাথে সে জড়িত অনুমান করে তা বলাই যায়।

৫।কামরুজ্জামানরা কি '৭১ এর পরে পারিবারিক জীবন-যাপন করেছে, চুপচাপ ধর্মপালন করেছে, নাকি পুনরায় পাকিস্তান কায়েমের ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছে? এদের জেলের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখাও তো রিস্ক, নাকি?

৬। গণহত্যাকারীদের যদি রাষ্ট্র সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড না দেয় তাহলে সে রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড থাকে কোন যুক্তিতে? কাকে আপনি মৃত্যুদণ্ড দেবেন?

৭। যুদ্ধাপরাধীদের ছানা-পোনারা পাকিস্তান গিয়ে না থেকে ইউরোপ আমেরিকায় বসত গাড়ে কেন? অনেকেই হয়ত অবগত আছেন যে, কামারুজ্জামানের দুই ছেলে থাকে সুইডেন। একটা তথ্য দেওয়া প্রয়োজন- সুইডেন হচ্ছে সেই দেশে যে দেশের আশি ভাগ মানুষ নাস্তিক, এবং নাস্তিকতার দিক থেকে সুইডেনের অবস্থান বিশ্বে ছয় নম্বরে। যেসব বিষয়কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সৌদি আরবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়- সুইডেনে সেগুলো কোন অপরাধই না। যেমন- সুইডেনে ধর্ম অবমাননা বলে কিছু নেই, কে কোন ধর্ম গ্রহণ করল বা ত্যাগ করল তা নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। যাদুবিদ্যা প্রদর্শণ সেখানে প্রশংসিত হয়। বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নেই এমন লোক সুইডেনে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে সেই 'নাপাক' দেশ সুইডেনে কামারুজ্জামানের ছেলেরা থাকে কেন?

৮।যেসব 'মহাত্মা' যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে আনন্দ প্রকাশ করা যাবে না বলছেন, তারা এর আগে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড যাতে না থাকে- সে জন্য কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কি? মৃত্যুদণ্ড চাওয়ার দরকার নেই, যুদ্ধাপরাধীদের যে কোন ধরণের শাস্তির দাবি এতদিন আপনারা করেছিলেন কি?

৯। একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিই- বাংলাদেশে ২০০৭ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল ৬ জনের, ২০০৮ সালে ৫ জনের, ২০০৯ সালে ৩ জনের, ২০১০ সালে ৯ জনের (বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী), ২০১১ সালে ৫ জনের, ২০১২ সালে ১ জনের, ২০১৩ সালে ২ জনের। ২০১৪ সালে ১ জনের (কাদের মোল্লা)। ২০১৫ সালে ১ জনের (কামারুজ্জামান)। যুদ্ধাপরাধদের বিচার শুরু হয় ৯ ডিসেম্বর ২০১০ সালে। এরপরে ফাঁসি হয়েছে দশজনের। এরমধ্যে ৮ জনের ফাঁসি হয়েছে সাধারণ অপরাধে (যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের তুলনায়)। এ পর্যন্ত দুইজন মাত্র যুদ্ধাপরাধীরে ফাঁসি হয়েছে। বাংলাদেশপন্থী এবং প্রগতিশীল হয়েও যাদের কামারুজ্জামানের ফাঁসির জন্য বুক ফেটে যাচ্ছে তারা ঐ আটজনের মৃত্যুদণ্ডের পরে প্রতিবাদ করেছিলেন কি?
উপসংহার: সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডটা পরিকল্পনা করে মেরে ফেলার মতই, আমি ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নই। সেক্ষেত্রে দেশে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড রাখার কোন সুযোগ নেই। যতক্ষণ দেশে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে, ততক্ষণ পর্যযন্ত যুদ্ধাপরাধীদের সাজা মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত আর কি হতে পারে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কোন খেলা নয়, এটা বাংলাদেশের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর কোন বিকল্প নেই। জনগণের রাষ্ট্র গঠন করতে হলে, অন্যসব অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কথা বলতে হলে, সবার আগে মূল সমস্যাটা দূর করতে হবে। খাটের নিচে সাপের বাসা থাকলে ঘরের চারপাশে কার্বলিক এসিড ছিটিয়ে কোন লাভ হয় কি?