এরকম হাজার রকমের আনআইডেন্টিফাইড দুর্নীতি আছে

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 25 Sept 2015, 06:59 PM
Updated : 25 Sept 2015, 06:59 PM

মানুষের শখ, স্বপ্ন, লোভ -সবই এখন সংগত কারণেই সীমাহীন। মানুষ এখন মানুষকে ঠকাবেই, শিক্ষিত মানুষই এখন বেশি ঠগবাজ এবং বাস্তব কারণেই তা হচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং বিশ্বায়ন মানুষকে সামনের দিকে এত বেশি টানছে যে, পিছে তাকানোর সময় এখন আর কারো নেই। বিশ্বটাকে মানুষ এখন দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু ধরতে পারছে না, পৌঁছুতে পারছে না। পৌঁছুতে চাচ্ছে। চাওয়ার রকম ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু পরিমাণ একই, এবং তা সীমাহীন। ধরা যাক, একজন ভ্রমণপিয়াসী, খুব নিষ্পাপ ইচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে- এই নিষ্পাপ ইচ্ছেটি আর নিষ্পাপ থাকছে না। এখনকার ভ্রমণপিয়াসীরা জানে যে, তার সীমানা পৃথিবী ছাড়িয়েছে। বলুন তো পৃথিবীর সব দেশের একটি করে স্থান দেখতে হলেও কোনো না কোনোভাবে মানুষ না ঠকিয়ে, দস্যুবৃত্তি না করে সে শখ কি পূরণ করা সম্ভব?
এই যে ওয়াসফিয়া নাজরিন নামক একজন নারী সাতটি মহাদেশের সাতটি পর্বত শৃঙ্গে উঠে একটি রেকর্ড গড়তে চাচ্ছে, তার এই ইচ্ছেটিতেও কিন্তু ঠকবাজি আছে। কি সেই ঠকবাজি? ঠকবাজে হচ্ছে- তার এই কর্মে যে রসদ লাগছে তা যোগাচ্ছে কে? প্রত্যক্ষভাবে কোম্পানি স্পন্সর করছে, কিন্তু আসলে তো তা আসছে পিছিয়ে থাকা জনগণের কাছ থেকেই, যাদের শখের সুযোগ নেই, স্বপ্ন দেখার সামার্থ নেই। তারা কম সুযোগ নিচ্ছে বলেই, কেউ কেউ বেশি নিতে পারছে।
টাকার চাহিদা মানুষের এখন পূরণ হবে কেন? কারো হয়ত একশো কোটি টাকা আছে। সে হিসেব করে দেখল- এতে হয় না, না হওয়ার কারণটা কিন্তু সংগতই। একশো কোটি টাকায় না হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ফলে তার আরো টাকা চাই। যখন এক হাজার কোটি টাকা, তখনো হিসেব মেলে না, ফলে আরো চাই।

ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমে টাকা দিয়ে সব হয়। এইজন্য এই টাকাটা যেনতেনভাবে উপার্জনের সুযোগ থাকটাই হচ্ছে ভয়ঙ্কর। মুহূর্তের ঘুষের এক লক্ষ টাকা আর দশ মাসের বেতনের এক লক্ষ টাকার মধ্যে মূল্যমানে এবং ব্যবহারিক দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। এ কারণে বর্তমান অর্থনৈতিক এবং সমাজে ব্যবস্থায় এগিয়ে থাকে দুর্বৃত্তরা। সবাই হয়ত দৃশ্যত দুর্বত্ত না, অনেকে নিজের কর্মকাণ্ডকে নিজস্ব যুক্তিতে জাস্টিফাই করে নিতে চেষ্টা করছে, আসলে কি জাস্টিফাইড হয়? কাজ না করে বেতন তোলাও তো দুর্নীত, নাকি? কোথাও কোনো কনর্টিবিউট না করে তাইরে নাইরে করে বেড়ানোও কিন্তু দুর্নীতি। পৈর্তৃক সম্পত্তি বলে আসলে কিছু নেই। একজনের জমানো টাকা আরেকজনে খরচ করা তো সবচে বড় দুর্নীতি। এরকম হাজার রকমের আনআইডেন্টিফাইড দুর্নীতি আছে। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কিন্তু কোনো একটি অজুহাতে সে ক্লাস নিচ্ছে না এবং ক্লাস না নেওয়ার বিষয়টিকে সে কোনো একটা শক্ত অজুহাতে জাস্টিফাইড ভাবছে। অথচ তার এই ক্লাস না নেওয়ার কারণ হচ্ছে কোনো একটি বা কতগুলো হাতছানি। বর্তমান ব্যবস্থায় এ অবস্থা থেকে রেহাই নেই। উন্নত দেশগুলো হয়ত কিছু কন্ট্রোলিং এজেন্ট তৈরি করে নিয়েছে, কিন্তু তাতে দিয়ে আসলে কি এই ধারা কন্ট্রোল করা সম্ভব?
উন্মুক্ত ভোগ্য সামগ্রীর পরিচয় শিক্ষিত মানুষ জেনে গেছে, ফলে শিক্ষিত মানুষ মাত্রেই এখন দূর্বিনীত। মানবিক উৎকর্ষ অনেকের লাগাম টেনে ধরলেও, অবশেষে সেও কোনো না কোনো হাতছানির ক্রীড়নক হয়ে পড়ছে। ফলাফল হচ্ছে- অবিচার এবং বৈষম্য। নতুন কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড় করানো না গেলে, বিশেষ করে টাকা উপার্জনের পথগুলো স্বচ্ছ না হলে এ সমস্যা বাড়তেই থাকবে।