উপমহাদেশের ক্রিকেট সমর্থনের মধ্য দিয়েই এখানকার রাজনৈতিক এবং জাতিগত বিদ্বেষ পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 17 March 2016, 08:05 AM
Updated : 17 March 2016, 08:05 AM

এই উপমহাদেশের ক্রিকেট শুধু ক্রিকেট না। এই ক্রিকেটীয় আবেগের সাথে মিশে আছে ধর্ম, উপমহাদেশের ইতিহাস, রাজনতি ইত্যাদি। আপনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে বা এরকম কোথাও বসে খেলা দেখেন, তাহলে এসব বোঝা যাবে না, কারণ 'ভদ্রলোক' আবেগ চাপতে জানে। আপনাকে আম জনতার মধ্যে বসে খেলাটা দেখতে হবে। আগে ভারত-পাকিস্তানের খেলায় এইসব আবেগের (ঘৃণার) বহিঃপ্রকাশ ঘটত, এখন সেখানে নতুন মাত্রা পেয়েছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ-ভারত।
বাংলাদেশিদের কাছে (সংখ্যাটা অবশ্যই ৫০% এর উপরে) মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও ভারত ইস্যু বেশি জাগ্রত। তাই এটা সত্য যে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারালে আমাদের যে আনন্দ, ভারত কে হারালে আনন্দ তার চেয়ে একটু হলেও বেশি। সত্য কঠিন হলেও তা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো। এই বিনোদনে দোষ নেই, তবে বোঝার আছে অনেক কিছু।

আচ্ছা, বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলায় কত পার্সেন্ট বাংলাদেশি পাকিস্তানের সমর্থন করতে পারে? আমার ধারণা ছিল, হাতে গোনা কিছু হতে পারে। সে ধারণা বদলেছে। সঠিকভাবে বলা মুশকিল, তবে একটা বড় অংশ বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলায় পাকিস্তানের সমর্থন করে। ঘটনাচক্রে কালক খেলা দেখছিলাম একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানে। তারা কোনো রাগঢাক ছাড়াই পাকিস্তানের সমর্থক। যুক্তি হচ্ছে, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না, তাহলে পাকিস্তানকে হারানো যাবে না, কারণ, পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা আছে। যেহেতু তারা ইনডোরে খেলা দেখছিল, তাই আবেগ গোপন রাখেনি। আবেগে এটা স্পষ্ট যে, আফ্রিদি চার/ছয় মারলে যে আনন্দ তারা পায় সাকিব মারলে পায় না।

এর বাইরেও তো কালকের খেলায় উপমহাদেশের রাজনীতি এবং হিন্দু-মুসলিম সমস্যার আরেকটি দিক উম্মোচিত হয়েছে। ইডেনে কালকে কি হল? কলকাতার মুসলিমরা পাকিস্তানের সমর্থন করল। দেশ হিসেবে ভারত-পাকিস্তান মারাত্মক বৈরি, কিন্তু তাতে কিছু এলো গেল না, তারা বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানকেই পবিত্র মনে করল! সত্যি কথা বলতে কি উপমহাদেশের ক্রিকেট সমর্থনের মধ্য দিয়েই এখানকার রাজনৈতিক এবং জাতিগত বিদ্বেষ পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়। এখান থেকে সামাজিক সংকটটাও বিবেচনায় নেওয়া যায়।