বর্তমান ব্যবস্থায়ই সবার জন্য অধিকার নিশ্চিত করা যায়

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 9 July 2016, 11:41 PM
Updated : 9 July 2016, 11:41 PM
এটাকে কীভাবে সভ্যতা বলা যায়? এটাকে কীভাবে উন্নতি বলা যায়? আমার চারপাশে খাবার সাজানো থাকবে, কিন্তু ক্ষুধার্ত হলেও, ক্ষুধায় মরে গেলেও শুধু টাকা নেই বলে সে খাবার আমি খেতে পারব না!
হাসপাতাল আছে, ডাক্তার আছে, ওষুধ আছে, কিন্তু টাকা নেই বলে আমি চিকিৎসা পাব না! এটা হতে পারে না। রাষ্ট্রব্যবস্থায় এর একটি বিকল্প খুঁজে বের করতেই হবে। ধনী, গরীব, চোর, ডাকাত, বাটপাড়, ভবঘুরে, পাগল, সবার জন্য মৌলিক চাহিদাগুলো রাষ্ট্রে নিশ্চিত থাকতে হবে।
এমন একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে ক্ষুধার্ত কেউ যেন সেখানে গিয়ে নূন্যতম খেতে পায়, বিনামূল্যে। এমন একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে অসুস্থ মানুষ যেখান থেকে চিকিৎসা নিতে পারে বিনামূল্যে, ওষুধ পাবে বিনামূল্যে; এবং বিষয়টিকে জনগণের অধিকার হিসেবে দেখতে হবে, করুণা হিসেবে নয়। নইলে এসব সভ্যতার দাবি টেকে না। রাষ্ট্রব্যবস্থা কতিপয়ের জন্য হয়ে যায়।
এটা খুবই নির্লজ্জ আচরণ, এটা মানুষের নিষ্ঠুরতা, যদিও এসব কথায় চারপাশের দশজনের আটজনই বিরোধী পক্ষ হয়ে যাবে, অখুশি হবে, তবুও বলতে হবে, এত মানুষকে বঞ্চিত রেখে অতিরিক্ত কেনাকাটা, উদ্ভট আয়োজন বা কনজুমারিজমই বর্তমান সভ্যতার সবচে' বড় সংকট।
"আমার টাকা" বলে কিছু নেই, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় টাকাটা আমার করে নেওয়ার মধ্যে বিশেষ কোনো কৃতিত্ব নয়, বরং নিশ্চয়ই তার জন্য যেকোন কৌশল (নেতিবাচক অর্থে) অথবা ক্রাইম করতে হয়েছে। তাই, "আমার টাকা, তাই আমি যা করব আমার ইচ্ছে" এটা হতে পারে না। তবে টাকা যে দেয় তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকারও প্রশ্ন রয়েছে, কারণ, টাকা উপার্জনের সাথে নানান ধরনের স্যাক্রিফাইস থাকে।
টাকা উপার্জনের বিপক্ষে আমি নই, কিন্তু খরচের মধ্যেই কাণ্ডজ্ঞানের প্রশ্ন। কাকে টাকাটা দেওয়া উচিৎ আর কাকে দেওয়া উচিৎ না, সেখানেই কাণ্ডজ্ঞানের প্রশ্ন। অাপনি রিক্সালার সাথে দশ টাকা নিয়ে যুদ্ধ করবেন আর স্মার্ট ফোন কিনবেন ফিক্সড্ রেটে বিশ হাজার টাকা দিয়ে (যে দাম নিয়ে সবসময় প্রশ্ন থেকে যায়), এটা নির্বিচার।
সবচে' বড় কথা, মানুষের উপর ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই আসলে, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কার্যকর ট্যাক্সেশন এবং আধুনিক ও উদ্ভাবনী ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমেই কিছুটা বা প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভারসাম্য আনা সম্ভব।
সরকারি কোষাগার মজবুত করতে হলে দুর্বত্তের ঘাড়ে পা দিতেই হবে সরকারকে। প্রশ্ন হচ্ছে,কোষাগারের পাহারাদার অর্থাৎ রক্ষকই ভক্ষক কিনা। নইলে বর্তমান ব্যবস্থায়ই সবার জন্য অধিকার নিশ্চিত করা যায়, যদি সরকার চায় এবং সরকার ততটা নৈতিক হতে পারে।