‘ঢাবি অবমাননা’ র শাস্তি কী নির্ধারণ হতে পারে?

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 28 Oct 2016, 01:02 AM
Updated : 28 Oct 2016, 01:02 AM

নতুন মেটাফোর, মেটাফোর নয়, একেবারে পারসনিফিকেশন করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে ঢাবিকে! এখন থেকে রাষ্ট্রে 'ঢাবি অবমাননা' যুক্ত হল। "ঢাবিয়ানরা আবার চাপাতিয়ান হয়ে পিছু নেবে না তো কোনো অবমাননাকারীর?" প্রশ্ন আমার এক অঢাবিয়ান ছোট ভাইয়ের। জবাব দিতে পারিনি।

মি. সুশান্ত পাল অনেক দিন ধরেই সিমটম দেখাচ্ছিল। অবশেষে ধপাস। বিষয়টি ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারত, পাশাপাশি তার ডিপার্টমেন্ট কাস্টমস্ যে ব্যবস্থা নেয় নিত। তাই বলে বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এক বিশাল সমুদ্র হজম করে নেবে না, ইগনোর করবে না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি এতই সংকীর্ণ যে কেউ কিছু বললেই সে তেড়ে যাবে মান বাঁচাতে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ জঙ্গিপনা মানায় কি?

শুনলাম সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বলে। যতদূর জানি এটা একটি বিতর্কিত আইন। বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে সংঘায়িত নয়। এই মামলাটি একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে কারো এই মামলা করার সুযোগ থাকা উচিৎ না, কেউ ব্যক্তিগতভাবে মামলা করলে সেটি তার ব্যাপার।

এনবিআর তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে সুশান্ত পালকে বদলী করে রংপুর পাঠিয়েছে। এটা মোটেও ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাকে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করে রাখলেই যথাযথ হত, যেহেতু তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে এবং তাকে বিশেষ কর্মকর্তা করা হয়েছে। দেখা উচিৎ আইনে কী আছে? ঢাবির হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আবেগ-অনুভূতি আহত হয়েছে নিশ্চিত, তাই বলে সেটি বিচারের মানদণ্ড হতে পারে না।

মি. পালের শাস্তি হওয়া উচিৎ সরকারি চাকরির বিধি-বিধান অনুযায়ী, তবে ৫৭ ধারা অপব্যবহার হচ্ছে এবং সেটি এখন ধর্মাবমাননার গণ্ডি পেরিয়ে ঢাবি অবমাননাতে গিয়ে ঠেকেছে, এটা ভয়ঙ্কর বিষয়।

অারেকটি বিষয়, কাউকে মানসিক রোগী বলার একতিয়ার ফরমালি কারো নেই, যদি না সেরকম কোনো প্রমাণ (স্বীকৃত চিকিৎসকের ঘোষণা) হাতে না থাকে। সরকারের একটি বিভাগ তাদের কোনো কর্মকর্তাকে একদম ঘোষণা দিয়ে মানসিক রোগী বলতে পারে কি? একজন মানসিক রোগীর কিন্তু সরকারি চাকরি বা কোনো চাকরিতে আইনতই থাকার সুযোগ নেই। যেহেতু এনবিআর কর্তৃপক্ষ সুশান্ত পালকে মানসিক রোগী বলে চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছে, তাই একইসাথে তাকে চাকরিতে বহাল রাখা যায় কীভাবে? হয় তাকে মানসিক রোগী বলা ভুল হয়েছে, অথবা এনবিআর প্রমাণ সাপেক্ষভাবেই তা বলেছে, সেক্ষেত্রে মি. পালকে চাকরিতে রাখার আর সুযোগ নেই।