আমার গ্রাম মসনী: উপড়ে গেছে সম্প্রীতির শিকড়

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 8 Oct 2017, 03:49 AM
Updated : 8 Oct 2017, 03:49 AM
মসনী (কচুয়া, বাগেরহাট) একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এটি এমন একটি গ্রাম যেখানে স্কুল, ডাকঘর, হাসপাতাল সবই রয়েছে। এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত হলেও পাশেই কয়েকটি গ্রামে মুসলিম বসতি রয়েছে যারা সবসময় হিন্দু গ্রামগুলোর পূজা-পার্বণে এবং সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
শত শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে এখানে দূর্গা পূজা, কালী পূজা ও রাস পূজা এবং শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন গান অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণের দিক থেকে হিন্দু মুসলিম থাকে সমান সমান। কিন্তু গত কয়েক বছরে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করেছে। 
গত বছর থেকে এটি প্রবলভাবে দৃশ্যমান, দেখা যাচ্ছে, পূজোয় এবং পূজো সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানগুলোতে মুসলামানদের অংশগ্রহণ বেশ কমেছে। মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকে পূজোয় এবং মেলায় বিভিন্ন দোকার দিত সেটিও আর দেখা যাচ্ছে না।
এ বছর কিছু ভয়াবহ বিষয় সেখানে ঘটেছে। পাশেই গ্রামের একটি রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। পূজোর সময় পূজোর গেট কেটে ট্রাক ঢুকানো হয়েছে রাস্তার মালামাল রাখার জন্য, অথচ কয়েকদিন পরে মাল ঢুকালেও কোনো সমস্যা ছিল না, কারণ, এটি গ্রামে ঢোকার একটি রাস্তা মাত্র, এবং কাজ চলছে সেখানে অনেকদিন ধরে থেমে থেমে।
ট্রাকটি গেট কেটে ঢুকে একশো মিটার সামনে নিয়ে মাল রেখেছে। গেট কাটায় বাধা দিতে সাহস করেনি স্থানীয় সনাতন ধর্মবালম্বী লোকেরা, কারণ, তারা মনে করছে পানের থেকে চুন খসলেই যেকোনো সময় তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হতে পারে– এমন একটি পরিস্থিতি সেখানে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।
এর চেয়েও ভয়াবহ বিষয়, পাশে অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও কালি মন্দিরটি পুরোপুরি ঢেকে দিয়ে রাস্তার মালামাল রাখা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার চ্যালেঞ্জ করে এভাবে মালামাল রেখেছে বলে জানা গিয়েছে। কারণ, এর আগে দুর্গা মন্দিরের সামনে মালামাল রাখায় পূজা কমিটির সভাপতির সাথে তার কিছু মতান্তর হয়েছিল। অথচ রাস্তার মালামাল রাখার মত যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা আশেপাশে রয়েছে।

 

সার্বজনীন তিনটি মন্দির রয়েছে এখানে। কয়েকটি গ্রামের মানুষ মিলেমিশে পূজো-পার্বন-বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। এটি দূর্গা মন্দির। একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে, মন্দিরটির প্রতিমা নতুন প্রতিমা বসানোর আগ পর্যন্ত বিসর্জন দেওয়া হয় না।

 

এটি রাধাকৃষ্ণ মন্দির। পূজা পরবর্তীতে অগ্রাহায়ণ বা পৌষ মাসে এখানে পদাবলী কীর্তন গান অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

এটি কালি মন্দির। নিয়মমাফিক আগামী অমাবস্যায় এখানে কালি পূজো হওয়ার কথা। কিন্তু অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এভাবে মালামাল রাখায়। কারণ, বেশ কিছুদিন আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করা দরকার হয়। ভেতরে রয়েছে গতবারের প্রতিমা।

 

পাশেই রয়েছে একটি কম্যুনিটি হাসপাতাল। দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের সামনে এ ধরনের মালামাল রাখার মত যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, "পূজো থাক বা না থাক কোনো মন্দির, মসজিদ, যে কোনো উপসনালয় বা স্থাপনার সামনে এভাবে মালামাল রাখা যায় কিনা?"