উত্তম বিনিময়

মাই নেম ইজ খান
Published : 14 Dec 2010, 01:11 PM
Updated : 11 Jan 2011, 12:46 PM

ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাঃ) পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল পাঁচজন। হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হযরত হাসান, হযরত হুসাইন এবং হযরত হারেস রা·। একদা তাঁরা তিনদিন পর্যন্তক্ষুধার্ত অবস্থায় অভুক্ত থেকে দিন অতিবাহিত করলেন।

হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর একটি চাদর ছিল। তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর হাতে সেটি তুলে দিয়ে বললেন, আপনি এটি নিয়ে বাজারে যান। চাদরটি বিক্রির পর যা পাবেন তা দ্বারা কিছু খাদ্য সামগ্রী কিনে আনুন। হযরত আলী (রাঃ) তা নিয়ে বাজারে গেলেন। ছয় দিরহামের বিনিময়ে চাদরটি তিনি একজনের কাছে বিক্রি করলেন। ইতিমধ্যে তিনি পথের ধারে বেশ কিছু ফকীর-মিসকীন দেখে তাদেরকে নিজের থেকে বেশী অসহায় মনে করে উক্ত দিরহামগুলো তাদের মাঝে দান করে দিলেন। এরপর তিনি আবার বাসায় ফিরে আসার পথ ধরলেন। পথিমধ্যে এক ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাত হলো। লোকটির সাথে একটি উটনী ছিল। তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর কাছে সেই উটনীটি বিক্রয় করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) নিজের কাছে টাকা নেই বললে লোকটি তা বাকিতেই বিক্রি করতে রাজি হলেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) তার মূল্য জিজ্ঞেস করলেন। লোকটি বলল, একশত দিরহাম। তখন হযরত আলী রা· তার থেকে একশত দিরহাম বাকিতে সেই উটনীটি ক্রয় করলেন।

উটনীটি নিয়ে কিছু পথ চলার পর আরেক ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাত হলো। হযরত আলীর কাছে একটি সুন্দর উটনী দেখে সেই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আবুল হাসান! তুমি কি তোমার এই উটটি আমার কাছে বিক্রি করবে? হযরত আলী (রাঃ) বললেনঃ হ্যা, বিক্রি করবো। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, তুমি কতো দ্বারা এটি ক্রয় করেছিলে? হযরত আলী (রাঃ) বললেন, একশত দিরহাম দ্বারা কিনেছিলাম। তখন লোকটি বলল, আমি তোমাকে ষাট দিরহাম লাভ দিবো। তুমি একশত ষাট দিরহামের বিনিময়ে উটনীটি আমার কাছে বিক্রি করে দাও। হযরত আলী (রাঃ) লোকটির কাছে একশত ষাট দিরহাম নগদ মূল্যে উটনীটি বিক্রি করে দিলেন। বেদুঈন লোকটি হযরত আলীকে একশত ষাট দিরহাম দিয়ে উটনীটি নিয়ে চলে গেল।

কিছু পথ চলার পর হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে প্রথম ব্যক্তির সাক্ষাত হলো, যার কাছ থেকে তিনি একশত দিরহাম বাকীতে উটনীটি ক্রয় করেছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে উটনী নেই দেখে লোকটি জিজ্ঞেস করলঃ হে আলী! তুমি কি উটনীটি বিক্রি করে ফেলেছ? হযরত আলী (রাঃ) হ্যা বললে লোকটি তার পাওনা একশত দিরহাম দিতে বললেন। হযরত আলী (রাঃ) তার একশত দিরহাম ঋণ পরিশোধ করে দিলেন।

অবশিষ্ট ষাট দিরহাম নিয়ে হযরত আলী (রাঃ) ঘরে ফিরে এলেন। হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর সামনে দিরহাম গুলো মেলে ধরলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন এতো টাকা আপনার কাছে কোত্থেকে আসলো? জবাবে তিনি বললেন, আমি আল্লাহর সাথে ছয় দিরহাম দিয়ে ব্যবসা করেছি। ফলে আল্লাহ আমাকে ষাট দিরহাম মুনাফা দিয়েছেন।
এরপর হযরত আলী (রাঃ) মহানবী (সাঃ) এর দরবারে আসলেন এবং তাঁকে উক্ত ঘটনা বিস্তারিত খুলে বললেন। ঘটনা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, হে আলী! তুমি কি জানো তোমার কাছে উটনী বিক্রেতা এবং ক্রেতা কে ছিল? আলী (রাঃ) বললেনঃ না, আমি জানি না। মহানবী (সাঃ) বললেন, উটনী বিক্রেতা ছিলেন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আর ক্রেতা ছিলেন হযরত মিকাঈল (আঃ)। আর এই উটনীটিই কিয়ামতের দিন হযরত ফাতেমার বাহন হবে।

এরপর মহানবী (সাঃ) বললেনঃ হে আলী! তোমাকে এমন তিনটি জিনিষ দেয়া হয়েছে, যা আর কাউকে দেয়া হয়নি। তোমাকে এমন স্ত্রী দান করা হয়েছে, যিনি জান্নাতবাসী রমণীদের সর্দার। তোমাকে এমন দু'সন্তান দেয়া হয়েছে, যারা জান্নাতবাসী যুবকদের সর্দার হবে। আর তোমাকে এমন শশুর দান করা হয়েছে, যিনি সকল রাসূলের সর্দার। সুতরাং তোমাকে আল্লাহ তা'আলা যা দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শোকর আদায় কর এবং তোমাকে যে সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন সেজন্য তার প্রশংসা করো।

তথ্যসূত্র:
সুয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা,
আত তারগীব ওয়াত তারহীব।