বয়েস বারো। জন্মদিনে বাবা ক্যাসিয়াস ক্লে সিনিয়রের দেয়া বাইসাইকেলটি চুরি হয়ে গেলো। আর তাতে ক্যাসিয়াস ক্লে জুনিয়রের মাথা গরম হয়ে গেলো প্রচন্ড । দ্রুত থানায় যেয়ে অভিযোগ ডায়েরী করলো ক্লে জুনিয়র এবং পুলিশ অফিসারকে জানিয়ে দিলো সাফ সাফ, যদি বা চোর কে হাতে নাতে ধরতে পারা যায় তাহলে ওর বডিতে স্রেফ হাড্ডি কয়টা থাকবে 'মা কি কছম অফিসার'! অফিসার জো মার্টিন বললেন – মাথা ঠান্ডা করো হে জুনিয়র ক্লে, চোর কে ধরে প্যাদানি দিতে গেলে কিছু কায়দা কানুন জানা চাই, মাথা গরম করে কিচ্ছু হবে না কো, তুমি আমার সাথে পরে মীট করতে ভুলো না যেনো। জো মার্টিনের জানা ছিলো বক্সিং তাই ক্লে জুনিয়র কে হয়ে যেতে হলো তাঁর একান্ত অনুগত ছাত্র। ১৯৫৪ সাল, সেই বছরই অপেশাদার বক্সিং-এ নাম লিখিয়ে ফেললেন ক্যাসিয়ায় ক্লে জুনিয়র। এর পরের বাকী সব ইতিহাস – ক্লে থেকে মুহাম্মদ আলী 'দ্য পিপলস চ্যাম্পিয়ন' হয়ে যাওয়ার প্রতিটি ঘটনা আমাদের জানা।
বয়েস বারো। কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে তাঁর স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটলো। সেই স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে শুরু হলো ব্যায়াম চর্চা। তিনি তখন পুরান ঢাকার জুবিলি স্কুলের ছাত্র। শারীরিক কসরতের জন্য ভর্তি হলেন 'রূপলাল ব্যায়াম সমিতিতে'। পিসি সরকার যাদু প্রদর্শনীতে 'ফিজিক অ্যান্ড ম্যাজিক'-এ দাঁত দিয়ে ইস্পাত বাঁকানো, বল্লমের তীক্ষ্ণ ফলা গলায় চেপে ধরা, আর ধারালো তরোয়াল পেটে বসিয়ে –নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ ক্রীড়া কৌশলাদি প্রদর্শন করে চলছেন অবলীলায়। ১৯৪২ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে যোগদান করলেন তিনি, বয়েস তখন তিরিশ, মার্টিন নামক একজন ব্রিটিশ অফিসারের কাছ থেকে ভারত্তোলনের পাঠ নিতে লাগলেন, সাথে চলতে থাকলো বডিবিল্ডিংয়ের প্রতি তাঁর আবিরাম সাধনা। ঔপনিবেশিক অত্যাচারের স্বপক্ষে মত দেওয়ার প্রতিবাদে একদিন দুম করে এক বৃটিশ কে কষিয়ে দিলেন এক 'চড়'। অনিবার্য পরিণতি – গন্তব্য হলো কারাগার। কারাগারে গিয়ে তিনি শুরু করলেন কঠিন অনুশীলন চর্চা। শরীর চর্চার প্রতি তাঁর এইরূপ অধ্যাবসায় দেখে কারাগার কর্ত্তৃপক্ষ তাঁর জন্য বরাদ্দ করলো খাবারে স্পেশাল মেন্যু, অল্প কদিনে মাথাতেই মুক্তি পেয়ে গেলেন তিনি। ১৯৫০ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে জিতলেন মিস্টার হারকিউলিস খেতাব।
১৯৫১ সালে আয়োজিত মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন এবং ১৯৫২ সালে এই একই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে মিস্টার ইউনিভার্স খেতাব জিতলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় তৃতীয় এবং ১৯৬০ সালে ৪৭ বৎসর বয়সে মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান অধিকার করলেন। ২০০৩ সালে শেষবারের মতো বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় দাঁড়িয়েছিলেন তিনি, তাঁর তখন সবে মাত্র ৮৯ বছর বয়েস। 'পান্তা ভাতের জল, তিন পুরুষের বল' –এটাই নাকি ছিল তাঁর শক্তির মূল উৎস! নিয়মিত খেতেন- মাড় সহ ভাত, ডাল, শাকসবজি, নানারকম ফল আর তাজা মাছ। উচ্চতা ছিল মাত্র ৪ ফিট ১১ ইঞ্চি, তাই 'পকেট হারকিউলিস' ছিল তাঁর ডাক নাম। জন্মশত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হয়েছিল – সাফল্যের রহস্য কী? জবাব দিয়েছিলেন- 'চিন্তা করে কিছু হয় না, তাই ওসব টেন্সন বাদ, শৈশব থেকেই অর্থের টানাটানি, তবু আমি জানতাম আমি জিতবই'।
২০১৬ সাল জুন মাসের ৩ তারিখ কিংবদন্তী মোহাম্মদ আলীর জীবনাবসান হলো, বাংলাদেশ সহ শোকে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো সমগ্র বিশ্ব। তার মাত্র ৪৮ ঘন্টা পর, আজীবন যার কণ্ঠে ছিল কুমিল্লার লোকাল ভাষা, ১০৪ বৎসর আগে ১৯১২ সালের ১৭ ই মার্চ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার "ধামতি" গ্রামে জন্মেছিলেন যিনি, তিনি মৃত্যুবরণ করলেন কোলকাতায়, দিনটি ২০১৬ সাল জুন মাসের ৫ তারিখ। সেই ছোট্ট খবরটি বাংলা হরফে ছাপতে ভুলে গেলো সেদিন – সংবাদ, মিডিয়া এবং বংগবাসী ফেসবুক ব্যবহারকারী সহ আরো অনেকেই, তন্মধ্যে আমি কুমিল্লা বাসী লেখকও অন্যতম একজন।
এসো নিজে করি , সবাই মিলে ভুলে যাই –নাম ছিল তাঁর 'মনোহর আইচ'।