কিসিঞ্জারি আর নিউট্রন বোমা বুঝি, মানুষ বুঝি না আমি -হেনরি কিসিঞ্জার

উৎপল চক্রবর্তী
Published : 7 Dec 2016, 04:27 PM
Updated : 7 Dec 2016, 04:27 PM

"There cannot be a crisis next week. My schedule is already full." -Henry Kissinger.

১৯৭১ সাল ১৩ই মে। পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা বন্ধের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি প্রেরিত একটি পত্র , হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট বিশ্বশান্তি কংগ্রেস সম্মেলনে পাঠ করা হয়। ২৩ই মে পাকিস্তানকে বোঝানোর জন্য ইন্দিরা দেখা করেন , মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সাথে । ১২ই আগস্ট , বঙ্গবন্ধুর প্রাণরক্ষা ও মুক্তির জন্য ২৪জন রাষ্ট্রপ্রধান নিকটে চিঠি লেখেন ইন্দিরা। ২৮শে সেপ্টেম্বর ক্রেমলিনে সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভ সহ সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট-এর সঙ্গে বসেন ইন্দিরা গান্ধি , প্রকাশিত হয় সোভিয়েত-ভারত যুক্ত ইশতেহার । ১৬ই অক্টোবর , যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট যোশেফ টিটোর সঙ্গে, ২৬ অক্টোবর ব্রাসেলসে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে  , অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ও চ্যান্সেলর ড. ব্রুনের সঙ্গে এবং ৩১শে অক্টোবর , বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এ্যাডওয়ার্ড হিথ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলেক ডগলাস সাথে মিটিং করেন ইন্দিরা । ২রা নভেম্বর , বিবিসি'র মার্কটালি'র সাথে সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা গান্ধি বাংলাদেশে পাকিস্তানি নৃশংসতা'র বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন  । ১০ই নভেম্বর , ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং  ফরাসী সাহিত্যিক আন্দ্রে মালরোর সঙ্গে এবং  ১১ই নভেম্বর পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্টের সঙ্গে আলোচনা হয় শ্রীমতি ইন্দিরার।

অবশ্য তার আগেই ৩রা নভেম্বর , সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি উদ্দেশ্যে তিনি লন্ডন থেকে ওয়াশিংটন পৌঁছেন । ৪ঠা নভেম্বর , মার্কিন প্রেসিডেন্ট দপ্তরে প্রায় আধাঘণ্টা  রিসিপশনে বসে থাকেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী । ৪ঠা এবং ৫ই নভেম্বর দুইদিন দুই দফায় মিটিং চলে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে । ইন্দিরা সেখানে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন এবং  ইন্দিরা আমেরিকার  সহায়তা প্রার্থনা করেন । নিক্সন কিসিঞ্জারও  তাদের মতামত ব্যক্ত করেন এবং  তারাও ইন্দিরার সহায়তা প্রার্থনা করেন । পাকিস্তানের সাথে কোন প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহে অবতীর্ণ না হতে ফাইনালি ইন্দিরাকে পরামর্শ দেন – রিচার্ড নিক্সন ও হেনরি কিসিঞ্জার।

২০০৫ সালে , ইউএসএ গভঃ প্রিন্টিং অফিস , "ফরেন রিলেশান্স অব দ্য ইউনাইটেড স্ট্যাটস , ১৯৬৯-১৯৭৬ , ভলিউম ই-৭, ডকুমেন্টস অন সাউথ এশিয়া , ১৯৬৯-১৯৭২" শিরোনামে ,সরকারী দপ্তরের কনফিডেন্সিয়াল  ট্রান্সক্রিপ্ট সমূহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, অবশ্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ফাঁস হয়ে যায় কিংবা অন্য রাষ্ট্রের কাছে গোচরীভূত হয়ে যায় ,প্রকাশের অনেক আগেই । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারে মধ্যে সংগঠিত কথোপকথন থেকে চুম্বকাংশ নিম্নে তুলে ধরা হল ।

(বিঃ দ্রঃ  লেখক কর্ত্তৃক অনূদিত নিক্সন- কিসিঞ্জার কথোপকথন অংশটুকু নিতান্তই একটি ভাবানুবাদ প্রচেষ্টা মাত্র , তাই এর ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা'র জন্য বিনীত অনুরোধ)

রিচার্ড নিক্সন হেনরি কিসিঞ্জার কথোপকথন-১

১৯৭১ সাল ৫ই নভেম্বর , সকাল ৮-৫১ থেকে ৯-০০ টা পর্যন্ত।

নিঃ বুঝলি তো কিসিঞ্জা , ইন্দিরা আসলেই একটা কুত্তী !

কিঃ ওস্তাদ একদম খাঁটি কথা। ইন্ডিয়ানগুলো আসলেই বাস্টার্ড । তারা এখন পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ লাগানোর পথে । পূর্ব পাকিস্তান এখন আর কোন ইস্যু নয় , অথচ  গতকাল দেখলেন তো , ইন্দিরা কীভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একতরফা বলেই গেল ! নাটক , গান  আর প্লে সব একসঙ্গে । খুবই ইন্টারেস্টিং! 

নিঃ দেখি আজকের মিটিং-এ কিছুটা ঠাণ্ডা করতে পারি কিনা , আমার মনে হয় না খুব একটা কাজ হবে , তবু চেষ্টা করতে তো দোষ নাই,  আজ ইন্দিরারে এক চাঞ্চে একটু ভিয়েতনামের নামটা  স্মরণ করায়ে দিব।

কিঃ ওস্তাদ আমিও ট্রাই করে দেখব , যদি বোঝান যায় তারে !

নিঃ দেখ যদি পারিস !

কিঃ তবে ওস্তাদ বেশী তেল দেওন যাইবো না  কিন্তু !

নিঃ শোন কিসিঞ্জা, এখানে এতো তেলাতেলির কিছুই নাই , আমাদের যা করনের তা সামহাও আমাদের করতেই হবে , স্ট্রেইট বলে দিব –দিস এন্ড দিস , ইন্দিরা দেবী আপনে এইবার ভাবেন আপনে কী করতে চান !

কিঃ ওস্তাদ আমরা যখন কিছু চাই তখন তা অটোম্যাটিক আমাদের হয়ে যায় । যেহেতু ইন্দিরা একটা কুত্তী তাই সে এখন , ধূর্তামি আর ধান্দামির আশ্রয় নেবে । দেশে ফিরে বলবে , আমেরিকা গেছিলাম বড্ড হতাশ হয়ে ফিরলাম । আমাকে ফুল বেলপাতা দিয়া পূজা করে নাই , বরং অসহযোগিতা করেছে , সুতরাং ভয়াবহ যুদ্ধের আর কুনু বিকল্প নাই।

নিঃ আমিও সেটাই মনে করছি।

কিঃ সে আম্রিকা এসেছে কিছু আশা ভরসা নিয়ে  , আমরা তার কুনু ইস্যুরেই পাত্তা দিচ্ছি না,  তার কপালে এই রকম একটা ঠাণ্ডা   অভ্যর্থনা ছিল তা কস্মিন কালেও ভাবে নাই ইন্দিরা।  

নিঃ দ্যাটস রাইট !

কিঃ তাইলে ইন্দিরা এখন রাষ্ট্র করে বেড়াক, আম্রিকার কাছে গেছিলাম , সেখানে দেখলাম আমার কুনু বেইল নাই।

নিঃ শোন কিসি , বুড়ী ডাইনী ইন্দিরার উপ্রে আমি কিন্তু পুরাই পাগলা কুত্তা হয়ে আছি !

কিঃ ওস্তাদ , পাগলা কুত্তা না শান্ত খরগোশ , আপনি কী হয়ে আছেন , সেটা এখন কুনু ম্যাটার না , যেটা আসলে ম্যাটার সেটা হল-

নিঃ কোনটা আসল ম্যাটার ,বল দেখি?

কিঃ ওস্তাদ আপনি এখন পর্যন্ত ইন্দিরারে এক ইঞ্চিও ছাড় দেন নাই , আমি মনে করি এটাই আসলে ম্যাটার !

নিঃ আরে বেকুব , ইন্দিরা খুব ভালো করেই  জানে , আমি তারে দিমুনা কচুও !

১৯৭১ সাল ৪ঠা  ডিসেম্বর , জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ।

ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জার নিরাপত্তা পরিষদের আহূত অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবী সম্বলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার প্রস্তুতি নেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে উপমহাদেশের সংঘাতের জন্য মুখ্যত ভারতকে দায়ী করেন। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হবার পর মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সোভিয়েত প্রতিনিধি এই প্রস্তাবকে 'একতরফা' বলে অভিহিত করে ভেটো প্রয়োগ করেন। পোল্যান্ডও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন ভোট দানে বিরত থাকে । পরদিন ৫ই ডিসেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদের পুনরায় যে অধিবেশন বসে তাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের এক প্রস্তাবে বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক 'রাজনৈতিক নিষ্পত্তি' প্রয়োজন যার ফলে বর্তমান সংঘর্ষের অবসান নিশ্চিতভাবেই ঘটবে এবং পাক-বাহিনীর যে সহিংসতার দরুন পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে তাও অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন।একমাত্র পোল্যান্ড প্রস্তাবটি সমর্থন করে। চীন ভোট দেয় বিপক্ষে।অন্য সকল সদস্য ভোটদানে বিরত থাকে।

বাংলাদেশ 'একটি তলাবিহীন ঝুড়ি' এই কথাটি কিসিঞ্জারের নয় ।

১৯৭১ সাল ৬ই ডিসেম্বর , সকাল ১১-০৭ থেকে ১১-৫৬ টা পর্যন্ত ।

যদিও ইতিহাসে দুর্ভাগ্যজনক ঠাঁই পেয়ে গেছে কথাটি, কিন্তু তা সত্যি নয় । বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধ , সম্ভাব্য স্বাধীনতা প্রাপ্তি এবং যুদ্ধ পরবর্তী দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যবস্থা , সাথে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আশংকা ইত্যাকার বিষয়াদি নিয়ে চলমান সভার সভাপতি ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার । তাতে আরও অংশ নিয়েছিলেন ইউ এলিক্সিস জনসন , জেনারেল ওইলিয়াম সি ওয়েস্টমোর ল্যান্ড , জোসেফ সিস্কো প্রমুখ । এক পর্যায়ে জনসন বাংলাদেশকে 'এন ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস' হিসাবে অভিহিত করেন। নিম্নে প্রযোজ্য অংশটুকু'র কপি পেস্টঃ

Dr. Kissinger: (to Mr. Williams) Will there be a massive famine in East Pakistan?

Mr. Williams: They have a huge crop just coming in.

Dr. Kissinger: How about next spring?

Mr. Williams: Yes, there will be famine by next spring unless they can pull themselves together by the end of March.

Dr. Kissinger: And we will be asked to bail out the Bangla Desh from famine next spring?

Mr. Williams: Yes.

Dr. Kissinger: Then we had better start thinking about what our policy will be.

Mr. Williams: By March the Bangla Desh will need all kinds of help.

Mr. Johnson: They'll be an international basket case.

Dr. Kissinger: But not necessarily our basket case.

Mr. Sisco: Wait until you hear the humanitarian bleats in this country.

Mr. Williams: They will have a tremendous problem of resettlement of the refugees.

রিচার্ড নিক্সন হেনরি কিসিঞ্জার কথোপকথন-২

১৯৭১ সাল ১০ ডিসেম্বর , সকাল ১০-৫১ থেকে ১১-৫২ টা পর্যন্ত।

কিঃ ওস্তাদ আপনার অনুমতি নিয়ে জানাচ্ছি , আজ পর্যন্ত আমি মোটামুটি কী কী করছি , একটু মন দিয়া শোনেন।

নিঃ বল দেখি তুই কী কী করছিস ?

কিঃ ওস্তাদ কেন জানি মনে হচ্ছে , পাকিস্তান এখন মাইনকা চিপায় পতিত । যুদ্ধ বিরতি প্রয়োজন পড়লে আবার নিরাপত্তা পরিষদ নিয়ে টানাটানি , এটা একটা বড় টেনশন । কিন্তু ওস্তাদ , পাকিরা  কিন্তু তীরে চলে এসেছিল  প্রায় , বাট এখন যে অবস্থা , ধাক্কা দিলে  ডাইরেক্ট পড়ব খাড়া থেকে নামায়।

নিঃ ওহ নো !

কিঃ তাইলে এখন ওস্তাদ , যুদ্ধ বিরতি ছাড়া  আর কেম্নে কী ?

নিঃ শোন কিসিঞ্জা , আমাদের মূল কাজ হচ্ছে পাকিস্তান রক্ষা করা , বাই হুক্কু বাই ক্রুক্কু।

কিঃ যা বলছেন তার সাথে একমত আমিও।

নিঃ তাইলে তুই এখনও দেরী করতেছিস ক্যারে ? যে যেখানে আছে সক্কলেরে রওনা হইতে অর্ডার কর।

কিঃ ওস্তাদ , অর্ডার আমি করে দিসি , চার খান প্লেন নিয়া জর্ডান অলরেডি রাস্তায় , আরো বাইশ খান আসতেছে । সৌদির লগে কথা বলা সাড়া , টার্কী নিয়া আসতেছে পাঁচখান। কোন সেটেলমেন্ট হয় কিনা সেটাও নজরে রাখছি ।  সেটেলমেন্ট না হলে তো আলাপের আর কিছুই নাই।

নিঃ হেনরি তুই চায়নার লগে দেখা করবি কখন?

কিঃ ওস্তাদ এটাই এখন আমার মূল কাজ , আজকেই দেখা হবে ৫-৩০ টাইম।

নিঃ তুই চায়না রে কী বলবি , আমারে একটু ভাইঙ্গা বল তো?

কিঃ আমাদের অবস্থান , পর্যবেক্ষন আমাদের ভাবনা , বিস্তারিত গেইম প্ল্যান , কেমনে কী করুম , যন্ত্রপাতি অস্ত্রপাতি কুনটা কুনটা আসতেছে , কুনটা লাগামু , চায়নার সাথে বেবাক ডিটেইলস শেয়ার করব আমি ওস্তাদ ।

নিঃ হেনরি তুই চায়নারে বুঝিয়ে বলবি , বস্‌ আপনেরা ফোর্স নিয়া শিগগির শিগগির রওনা দেন । যদি তাতে কিছুটা কালক্ষেপণ হয় , তাহলে   ইন্ডিয়ারে এটলিস্ট একটা ভাব মতন 'আইতাসি কইলাম' আওয়াজ দিয়া থ্রেট মাইরা দেন । দেখবি তাহলেই কাজের অনেকটুকু হয়ে যাবে।  

কিঃ ইয়েস ওস্তাদ।

নিঃ চায়না হয় মাল পত্তর নিয়া  রওনা দিব , আদারওয়াইজ ইন্ডিয়ারে থ্রেট দিব , দুইটার যে কুনু একটা কিন্তু মাস্ট করতেই হবে ,যত কুইক সম্ভব।  যা বললাম, বুঝেছিস তো?

কিঃ এবসুলেটলি বুঝে ফেলেছি ওস্তাদ।

নিঃ শোন কিসি , তুই চায়নারে  বলবি আমাদের যেটা দায়িত্ব সেটা আমরা করছি। ইন্ডিয়ারে কট করার পদ্ধতি আমাদের জানা আছে। আর রাশিয়ারে আপাতত আমাদের  গোনার টাইম নাই । বলবি , বস্‌ আপনে জাস্ট আসেন তারপর দেখেন খেলা !

কিঃ ইয়েস ওস্তাদ ।

নিঃ কিসিঞ্জা মাথায় রাখবি সদা সর্বদা ,  চায়না আর পাকি হচ্ছে এখন এক্কেবারে জানে জিগার । তাই পাকিস্তানের সাথে লাগতে আসলে , চায়না যদি রাশিয়ারে লাথি মারে তাইলে কিন্তু ডাইরেক্ট দোজখে পড়বে রাশিয়া । আবার পাকির বন্ধু  সে কারণে চায়নাও কিন্তু রাশিয়ার লাথি খেয়ে বসতে পারে এনিটাইম । মানে রাশিয়া চায়নার এই কনফ্লিক্টটাই হচ্ছে আমাদের ফিক্সড ডিপোজিট , সেটা এখন ক্যাশ করে দিতে হবে , আর এটাই আমাদের কাজ।

কিঃ ওস্তাদ আমরা যদি সবাই , নিজেরা নিজেরা ইস্ট্রং থাকি , যতোই বিপদ আসুক যদি সাথে থাকে চায়না , পুরাই আয়নাবাজি করে দেব , আপনি ওস্তাদ নিশ্চিত থাকেন।  

নিঃ কিসিঞ্জা তুই একটা ব্যাপার বল তো , পাকি রা কী ফ্রান্স থেকে প্লেন-টেন কিনছে কিছু ?

কিঃ ওস্তাদ পাকিদের অলরেডি কেনা বেচা সাড়া !

নিঃ গুড সিদ্ধান্ত , আমি বুঝি খুব সিম্পল । তোমার যেটা লাগবে সেটা তোমাকে কিনতেই হবে , তাহলে কেন ফ্রান্স নয়?

কিঃ হক কথা !

নিঃ ফ্রান্স মাল বানিয়েছে বেচার জন্য ,  যার কাছে মুঞ্চায়  তার কাছেই সে বেচবো তাই না ?

কিঃ ওস্তাদ ভিত্রে ভিত্রে পকিস্তান-ফ্রান্স বেচাকেনা ভরপুর ।

নিঃ শোন কিসি , ফ্রান্স কেনা-বেচায় ইনভল্ভ হলে , তখন আমিও একটি শক্ত গ্রাউন্ড পেয়ে  যাই , আমি তখন আম্রিকারে বলতে পারি , এই বিপদে কিছু অস্ত্র পাতি দিয়া পাকি'র দের সাহায্য আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

কিঃ কথা একটুও রং বলেন নাই , ওস্তাদ ।   

নিঃ যাওক গা ! এক কাজের ভিত্রে আরেক কাজের আলাপ আপাতত  বাদ দেই। এখন তাহলে  ইন্ডিয়া পাকিস্তান বিষয়ে আমাদের আর কী কী করার আছে ?

কিঃ ওস্তাদ আমাদের কাজ এখন একটাই , চিকনে আওয়াজ ছাড়া ফাটায় দেওয়া !

নিঃ তাইলে কিসিঞ্জা , তুই আমারে কনফার্ম কর , আজ কালের  মধ্যেই , চায়না ইন্ডিয়ারে একটা জম্মের থ্রেট মেরে দিবে ।

কিঃ সেটা ওস্তাদ আমি আজকেই কনফার্ম করে ফেলব।

নিঃ হেনরি , আমি চাই তুই তোর বেস্ট'টা  আমাকে দেখাবি।

কিঃ ওস্তাদ টেনশন কম নেন , কিসিঞ্জারি আমি এখনও শুরু করি নাই , তা ভুলে যাবেন না যেন।

নিঃ কিন্তু এই কাজটা  , মানে চায়নারে  দিয়া থ্রেট মারা , আরও আগে করনের দরকার ছিল আমাদের।

কিঃ টাইম কিন্তু শেষ হয় নাই  ওস্তাদ।

নিঃ কিছু ট্রাক আর প্লেন সহযোগে বহর সাজিয়ে রওনা দেবার দরকার ছিল । যন্ত্রপাতি অস্ত্রপাতি সহ একটা তাফালিং টাইপ পাঁয়তারা শুরু করে দেওনের ভীষণ দরকার ছিল আগেই। হেনরি তুই বুঝেছিস তো , আমরা যে বেহুদা খেলছি না ,জেনুইন খেলছি সেটা সবার জানা  দরকার , তর কী মনে হয়?

কিঃ সেম টু সেম ইয়ু মনে হয় আমার ।

নিঃ কিন্তু ইন্ডিয়ান গুলারে ,আমি মনে করি সব ভিতু মুরগি ছানা , ভুল বললাম নাকি?

কিঃ না ওস্তাদ পুরাপুরি ভুল বলেন নাই । তবে রাশিয়া ইন্ডিয়ারে ব্যাক দিচ্ছে এটা অবশ্যই একটা সমস্যা টাইপ পোব্লেম। রাশিয়া অলরেডি ইরান টার্কী সহ আরও অনেকেরেই থ্রেট মেরে দিসে । ওস্তাদ , রাশিয়া না আবার পুরা খেলাটারেই গেইম বানায় দেয় !সেটাও কিন্তু ভাবার দরকার।

নিঃ আচ্ছা হেনরি  , আমি কিঞ্চিৎ বুঝতে চাইছি , ধর যদি সত্যি সত্যি প্যাঁচ খেয়ে  যায় , ধর যদি পাকিস্তানের বিপদ আরও ঘনীভূত হয় , ব্যাপারটা পাকিস্তান সেটেল করবে কিভাবে ?

কিঃ ওস্তাদ যেহেতু ক্যাচাল পূর্ব পাকিস্তানের সাথে  ,  তাই পূর্ব পাকিস্তানের সাথেই সল্ভ করবে , তাই না ওস্তাদ?

নিঃ  আমার কেন জানি মনে হয় , পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে কোন দরাদরির চাঞ্চ , পাকিস্তানকে দেবে না , ইন্ডিয়া ।

কিঃ ওস্তাদ , রাশিয়া'র এ নিয়ে আপত্তি করার কথা না । আবার ওস্তাদ এটাও ঠিক যাই হোক না কেন , তা রিয়েলস্টিক পথেই চিন্তা করা উচিত । পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধিরা স্বাধীনতা চাইবে , বাস্তবে যদি হেডাম না থাকে তবে পশ্চিম পাকিস্তানকে তা মেনে নিতে হবে। আমাদের জন্য সমস্যা , পাকিস্তান মতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কে স্বীকার করে নেওয়া।

নিঃ ফাইনালি যা হবে তা মেনে নেব , কিন্তু আমরা বাংলাদেশকে কখনও স্বীকৃতি দেব না । এই 'না' মানেই কিন্তু কক্ষনোই 'হ্যাঁ' নয় । অবশ্য পাকিস্তান স্বীকৃতি দিয়ে দিলে তখন সেটা ভিন্ন ব্যাপার।

কিঃ ইয়েস ওস্তাদ , দিস ইজ দ্য পয়েন্ট।

নিঃ আমি কুনু ভাবেই ইন্ডিয়া সুখ-শান্তিতে থাকবে তা  অনুমোদন করি না  । আমি চাই ইন্ডিয়া তলে পড়ে থাকুক ।

কিঃ আমিও সেটাই চাই ।

নিঃ ইন্ডিয়া সুযোগ পেলেই আমাদের কথা শুনিয়ে দেয় । ভণ্ডামি আর ইন্দিরার অটোক্রেসী  আমার সহ্যে সীমা অতিক্রম করে গেছে!

কিঃ রাইট বলেছেন।

নিঃ ইন্ডিয়া বলছে সেখানে ধর্ষণ মার্ডার চলছেই , তাদের চরিত্রও ফুলের মত পবিত্র নয়।

কিঃ এবসুলেটলি !

নিঃ আচ্ছা হেনরি , ইন্ডিয়া কী  এর মধ্যে অনেক লোক মেরে ফেলেছে ?

কিঃ ওস্তাদ স্যরি , ইন্ডিয়া এই পর্যন্ত কতজন মেরেছে  লেটেস্ট খবরটা আমার জানা নাই , জেনে বলতে হবে । তবে পাকিগুলার মতো তারা এত স্টুপিড হবে না , আমার বিশ্বাস।  পাকি ইডিয়ট গুলান আসলে কী জানেন তো  , ওই যে কথায় আছে না 'আওয়াজে পাকিস্তান' জাস্ট সেটাই ! ইন্ডিয়া এখন পর্যন্ত তেমন কুনু নিউজ প্রেস করে নাই , আওয়াজ একটু কম।

"Power is the ultimate aphrodisiac."-Henry Kissinger.


১৯৭৩ সাল , শান্তিতে নোবেল।

হেনরি কিসিঞ্জার ও ভিয়েতনামের লে-ডাক-থো কে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয় । জানুয়ারি, ১৯৭৩ সালে উত্তর ভিয়েতনাম ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার যুদ্ধ বিরতি এবং সেখান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপটে তাঁকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু লে-ডাক-থো পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান কেননা তখনো যুদ্ধ চলছিল। সমালোচকদের অভিমত, কিসিঞ্জার শান্তি প্রণেতা ছিলেন না; বরঞ্চ যুদ্ধের ব্যাপক প্রসারে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখেছিলেন। এই নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের ফলে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়। এরফলে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির দুইজন সদস্য পদত্যাগ করেন।

১৯৭৪ সাল ২৯ অক্টোবর, বাংলাদেশ সফর।

হেনরি কিসিঞ্জার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন । পরদিন বিকালে মুজিব আর কিসিঞ্জার বৈঠক হয়।  শেখ মুজিব জানান তিনি স্বেচ্ছায় পাকিস্তানের সকল বন্দিদের মুক্তি দিয়েছেন , কেননা তিনি চান জুলফিকার ভুট্টো যেন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায়। এই কাজটি না করলে পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় চলে আসার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০০৭ সালের অক্টোবরে এই তথ্যটি অবমুক্ত করে।

মুজিবঃ আপনি সময় করে বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন , আমি কৃতজ্ঞ।

কিসিঞ্জারঃ আমাকে আমন্ত্রণ করাটা অবশ্যই আপনার বড় মনের পরিচয়।

মুজিবঃ এই দেশের মানুষের মায়া মমতা আর মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা , আপনাকে দেখাতে পারবো , তাতেই আমি গর্বিত। মাঝে মাঝে আমাদের অবস্থানও খুব কঠিন হয়ে যায় এটাও সত্য।

কিসিঞ্জারঃ দেশে দেশে ভ্রমণ করে আমি ভৌগলিক বিবরণ সমূহ , সেখানকার মানুষদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারনা পেয়ে যাই , যা পরবর্তীতে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়ক হয়। আমি এখানে এসে যে অভ্যর্থনা পেয়েছে তা উষ্ণতায় পরিপূর্ণ।

মুজিবঃ আরও বেশী করা যেতো প্র্যাক্টিক্যাল কারণেই সে রকম কিছু আপ্যায়ন করতে পারলাম না ।

কিসিঞ্জারঃ আপনার অতিথি সৎকার ও আপ্যায়ন আমাকে মুগ্ধ করেছে।

১৯৭৫ সাল ৫ ফেব্রুয়ারি , ভুট্টো কিসিঞ্জার ।

ওয়াশিংটন ডিসি । মার্কিন প্রেসিডেন্টের অতিথি নিবাস ব্লেয়ার হাউসে মিলিত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ইয়াহিয়া'র প্রত্যক্ষ মদদ কারী নিক্সন-কিসিঞ্জার জুটির বড় কারিগর হেনরি কিসিঞ্জারের সাথে চার বছর বাদেও জুলফিকার ভুট্টোর খাতির , তখন পুরাই জমে ক্ষীর। তৎকালীন বাংলাদেশ পরিস্থিতি , সেনাবাহিনী ও ভারত-বিরোধী সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেন তারা । যে কোন সময় ক্ষমতা থেকে পতন হবে মুজিবের , তেমনটাই মনে করেছেন কিসিঞ্জার ।

২০০৭ সাল অক্টোবর , কিসিঞ্জার বলেন আমি ক্ষমা প্রার্থী ।

১৯৭১ সাল ৫ নভেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে কিসিঞ্জার বলেছিলেন-

"The Indians are bastards anyway. They are starting a war there." 

এই তথ্যটি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে । এই রকম অশ্রাব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত গালাগাল করার জন্য ভারতে সফর কালীন ক্ষমা প্রার্থনা করেন কিসিঞ্জার।

I regret that these words were used. I have extremely high regard for Mrs Gandhi as a statesman. The fact that we were at cross purposes at that time was inherent in the situation but she was a great leader who did great things for her country.

২০১৬ সাল নভেম্বর । ৭১-এ পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।

'দ্য আটলান্টিক' এর প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কিসিঞ্জার বলেন , সেই সময় পাকিস্তান এবং চায়না পরস্পর বন্ধু ছিল , এবং পাকিস্তানের মাধ্যমে চায়নার সংগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছিল আমেরিকা। তাই সংগত কারণেই প্রকাশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা আমেরিকার জন্য ছিল কঠিন । "After the opening to China via Pakistan, America engaged in increasingly urging Pakistan to grant autonomy to Bangladesh. In November, the Pakistani president agreed with Nixon to grant independence the following March." পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় চায়না-আমেরিকা সম্পর্কের দরজা খুলে যেতেই, আমরা পাকিস্তানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য চাপ দিতে শুরু করি , নভেম্বরে পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন সামনের মার্চ মাসে স্বাধীনতা দেওয়া হবে । কিন্তু বাস্তবে সে রকম কিছুই হয়নি কিংবা তা ঘটবার কোন আলামতও দেখা যায় নি। বরং উল্টো ১৯৭১-এর ৩রা ডিসেম্বর মাসে আচমকা ভারতের বিমানঘাঁটিগুলিতে পাকিস্তান এয়ার ফোর্স বোমাবর্ষণ শুরু করে দেয় । কিসিঞ্জারের বলতে চেয়েছেন এই ঘটনার বিন্দু বিসর্গও আমেরিকা জানতো তা তখন  । ফলত পূর্বপাকিস্তান সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধটিতে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে সরাসরি সাহায্য করতে ময়দানে নেমে পড়া ছাড়া ভারতের আর কোন উপায় থাকে না , মন্তব্য করেন হেনরি কিসিঞ্জার।

WASHINGTON, DC – JANUARY 29: The protest group "Code Pink" disrupts a Senate Armed Services Committee hearing, carrying banners calling Former Secretary of State Henry Kissinger a "War Criminal" as he and fellow former Secretary of States George Shultz, and Madeleine Albright were set to testify on U.S. national security on Capitol Hill on January 29, 2015 in Washington, DC. (Photo by Andrew Harnik for The Washington Post via Getty Images)

সূত্রঃ