[Sreepur founder "Mother" Pat Kerr with some of the school's children]
[The Sreepur team warming up for a practice match at Mirpur national stadium.]
প্রত্যেকের জন্য আছে সুষম খাদ্য, বেঁচে থাকার জন্য যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সতের একর জায়গায় নিজেদের জমিতে উৎপাদিত হচ্ছে আম, কলা, নারকেল, পেঁপে, পেয়ারা, লিচু আরও জানি কত কিছু! শাক-সবজি আছে, পুকুর ভরা মাছ এবং গোয়ালে বিশটি গরু, গভীর নলকূপ থেকে আসছে সুপেয় পানি। মায়েরা করবে সূচিশিল্প, কারুকাজ আর আর রান্নাবান্না বিদ্যাশিক্ষা তাদের জীবনের এক অপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ এবং তা গুরুত্বহীন – লাগে তা কোন দরকারে! তাদের হাত থাকে বাঁধা, চোখ যদিও বা থাকে খোলা তবুও সমাজ চায় -তারা থাকুক না অন্ধকারে! অর্থনৈতিক ভাবে তারা নিজে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবে, দাঁড়াবে সমাজে মাথা উঁচু করে এবং অবশ্যই নিজের পায়ে নিজে – প্রতিনিয়ত এই মন্ত্রে তাদের উজ্জীবিত করে তোলেন 'প্যাট কের'।
[Rising stars of the Sreepur cricket team. From left: Chumki Akter and Ismat Ara.]
২০১২ সালে আমরা মেয়েদের নিয়ে একটি ক্রিকেট দল তৈরি করি , চাইছিলাম একটি দলবদ্ধ আয়োজন। চেয়েছি এমন কিছু খেলা -যেখানে মুসলিম মেয়েদের পোশাকে একটি শালীনতা বজায় থাকে এবং খেলাগুলো যেন এমন হয় -যেখানে শারীরিক সংঘর্ষের কোন অবকাশ নেই। আর তেমনটা ভেবেই আমি ফুটবল ও কাবাডিকে বাদ দিয়ে দিয়েছি, যদিও কাবাডি এখানে জাতীয় খেলা। তাই বেছে নিয়েছিলাম ক্রিকেট। মেয়েরা ক্রিকেট খেললে তাদের মনোবল চাঙ্গা হবে, তারা ডিসিপ্লিন শিখবে, পরস্পরের প্রতি আস্থা অর্জন এবং শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হবে তাদের। প্রথম প্রথম তারা রেগে গেলে ব্যাট ছুঁড়ে ফেলে দিত, ধীরে ধীরে তারা অর্জন করেছে -প্রতিপক্ষের প্রতি শিষ্টাচার প্রদর্শন। ক্রিকেট আদতেই অসভ্যকে সভ্য করার খেলা, এখানে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পূর্ণ পজিটিভ রূপ পরিগ্রহ করবে একদিন। আমি ক্রিকেট ফ্যান বা লাভার কিছুই নই কিংবা নির্দিষ্ট অন্য কোন খেলার প্রতি আমি ভীষণ অনুরাগী, ব্যাপারটি তাও নয়। লন্ডন ২০১২ অলিম্পিক মশালটি বহন করার ডাক পেয়েছিলাম, আমি মনে করি সেটি ছিল আমার জন্য যথেষ্ট সম্মানের একটি ব্যাপার, বললেন 'প্যাট ক্যার।
বাড়ির অদূরে ঢাকা শহরেরই আশেপাশে কোথাও, সেটি ছিল একটি মেলার ঘটনা। সৎ মায়ের সাথে তারা দুই বোন এসেছিল সেই মেলায়। বড় বোন চুমকি নাগরদোলায় চড়বে আবদার করল মায়ের কাছে, মা তুলে দিলেন। নাগর দোলা থেকে নেমে বড় বোন চুমকি অনেক করল খোঁজাখুঁজি, মেলায় ছিল হাজার হাজার মানুষ। কোথাও আর খুঁজে পেল না তার মাকে। এক কোণায় বোনটিকে খুঁজে পেল -দাঁড়িয়ে কাঁদছে তার ছোট বোন বৃষ্টি। ছোট বোনকে সাথে নিয়ে তারপরও অনেক সময় এদিকওদিক অনেক খুঁজে বেড়াল। মা তাদের হারিয়ে গেছে কিংবা বলা যেতে পারে এভাবেই তারা হারিয়ে ফেলল মা। তারপর সেখান থেকে কেউ একজন তাদের নিয়ে আসলো – 'শ্রীপুর ভিলেজ' হল তাদের ঠিকানা। শ্রীপুর ভিলেজের সাথে ইংল্যান্ড দলের সম্পর্কটি একদম নতুন ছিল না। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল, বাংলাদেশে খেলতে এসেছিল সেটা ২০০৩ সালের ঘটনা। এনড্রু ফ্লিনটফ ছিলেন দলের অধিনায়ক। চুমকির বয়স তখন পাঁচ বছর, তাই তার জানবার কোন কারণ ছিল না, কার কোলে উঠেছিল সে। মিডিয়ার কল্যাণে সেই সময় সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল ছবিটি। সেই চুমকি আক্তার বর্তমানে শ্রীপুর গার্লস ক্রিকেট টিমের একজন অন্যতম প্লেয়ার।
"আমি যখন আমার মামার বাড়িতে আমার মা'র সাথে ছিলাম, তিনি ছিলেন আমার সৎ মা। তিনি আমাকে খুব মারধর করতেন। পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি। কিন্তু সেখানে আমার পড়াশুনা না করিয়ে আমাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছিল তারা। পরে আমি সেখান থেকে পালিয়ে এসে রাস্তায় ইচ্ছা মতো কান্না করছিলাম… পরে আমি এই ভিলেজে চলে আসি একদিন " – সুমি।
[The Sreepur girls with England's Steven Finn.]
"বাংলাদেশে যখন একটি কন্যা শিশু জন্ম গ্রহণ করে, সবাই ভাবে এটি একটি বোঝা। আমি যখন এখানে আসি, আমি দেখি মাত্র তিনটি মেয়ে ক্রিকেট ভালো খেলে, কিন্তু একটি দল বানাতে গেলে মিনিমাম পনের জন চাই। তখন আমি এখানে বাকীদেরও বোঝাই। বলি তোমরা ক্রিকেট খেললে তোমাদের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো হবে। তারপর আস্তে আস্তে মেয়েদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রথম প্রথম তারা খুব লজ্জা পাচ্ছিল যখন তাদের পড়তে হচ্ছিল হ্যালমেট এবং এই রকম ট্র্যাক-সুট টাইপ পোশাক যা তারা আগে পড়েনি। বাংলাদেশে পনের থেকে ষোল বছর বয়সেই এই সব মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়, তখন তাদের আর কিছুই করার থাকে না। এই মেয়েগুলো এখন খুবই ভালো করছে, তাদের ভাগ্য তারা নিজেরাই পরিবর্তন করবে আমার বিশ্বাস।"
বলছিলেন সাথিরা জাকির জেসী, ২০০৭ সাল থেকেই বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেটের যিনি এক আলোচিত নাম। ২০১৪ সাল থেকে তিনি আছেন এদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোচ। মেয়েটির খেলা দেখে তিনি জানিয়েছিলেন, সঠিক পরিচর্যা করলে ভবিষ্যতে খুব ভালো ক্রিকেটার হবার সম্ভাবনা আছে তার। তাই মেয়েটিকে পাঠিয়ে দেয়া হল বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের একটি বড় অংশ যেখান থেকে এসেছে। এখন সেখানে সে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মেয়েটির মধ্যে আছে দুর্দান্ত ক্রিকেটিয় প্রতিভা! ব্রিলিয়ান্ট খেলছে এখন, ফাস্ট বোলিং করে, তার ব্যাটিং ও ফিল্ডিং দুটোই দুর্দান্ত! সাথিরা জাকির জেসী বাংলাদেশ রেডিও টিভির প্রথম নারী ধারাভাষ্যকার ও বিশেষজ্ঞ যিনি প্রাক্তন ক্রিকেটারও বটে, বললেন- আমি ভীষণ আশাবাদী।
"I feel the power when I have a bat or a ball in my hands"
"আমি শক্তি পাই যখন আমার হাতে ব্যাট কিংবা বল থাকে"
সূত্রঃ
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় মার্ক সিকোম্ব লিখিত Breaking boundaries: Bangladesh's women cricketers -এর ছায়া অনুসারে লিখিত এবং অন্যান্য তথ্য 'শ্রীপুর ভিলেজ' ওয়েব সাইট থেকে ।
[Photograph: Sarker Protick for the Observer]