নাটকে এই দৃশ্যের দেখা মেলে হরহামেশাই সহ-শিল্পীদের পিঠের উপর দিয়ে পার হন মহানায়ক। কিন্তু বাস্তবে এই দৃশ্য দেখেছেন কি কভু? তিনি সেই ঘটনা দ্বারাই উজ্জীবিত হয়েছেন কিনা কে জানে! ডিয়ার লিসেনার, আমাদের আজকের ঘটনা-নাটকের কোন দৃশ্য নয় এবং এটি কোন গল্পও নয়, শুনুন এক ভয়াবহ বাস্তব ঘটনা। তবে তিনি অভিনেতা নন-তিনি নেতা। তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের! তিনি কোমলমতি ছাত্রদের গায়ের উপর দিয়ে সদর্পে জুতা পায়েই হেঁটে পার হলেন কাল্পনিক 'পদ্মা ব্রিজ'। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটোয়ারী এই ঘটনার নায়ক। ঘটনাটি ঘটেছে ৩০শে জানুয়ারি সোমবার, নীলকমল উছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে।
গত ২৯ জানুয়ারি, মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও এক শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে অনুরূপ আরও একটি ঘটনার সন্ধান পাওয়া গেছে ডিয়ার লিসেনার। এই অনুষ্ঠানেও স্কাউটসের সদস্যরা কাঁধে কাঁধ রেখে তৈরি করেছিল 'প্রতীকী সেতু', আর সেই 'মানব সেতু'র উপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছিলেন বিদ্যালয়ের জমি দানকারী, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দিলদার হোসেন প্রিন্স। আর এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন স্কুলের শরীরচর্চার শিক্ষক হাফিজুর রহমান।
এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকার অনিন্দ্য রায় জানালেন, সেটি ছিল ২০১২ সালের একটি ঘটনা। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার খয়েরকাটা গ্রাম তখন বন্যায় ছিল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন, আর ছাত্র-ছাত্রীদের তখন চলছিল ইউনিট টেস্ট পরীক্ষা। তখন প্রশাসনের উদ্যোগে দুটি কুনকি হাতি (যে পোষা হস্তিনী বন্য হাতি ধরতে সাহায্য করে/কৌশলে অন্যকে বশে রাখে) নিয়ে আসা হল গ্রামে। অতঃপর গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতির পিঠে চাপিয়ে, তাদের নাগরাকাটার শুল্কাপাড়া ও কলাবাড়ি এলাকার দুটি স্কুলে, পৌঁছে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
যদিও উপজেলা চেয়ারম্যানের পকেট থেকে বেরিয়ে গেছে পাঁচ সহস্র মুদ্রা কিন্তু এই ব্রিজ ব্রিজ খেলার জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এবং মেলান্দহের বিদ্যালয়ের জমি দানকারী দিলদার হোসেন প্রিন্সের অবস্থাও হোক অনুরূপ- দেশবাসীর এখন, এটিই একমাত্র প্রত্যাশা!
উন্নত বিশ্বে শারীরিক শ্রম এবং রিস্ক ফ্যাক্টরের উপর নির্ধারিত হয় শ্রমের মজুরী। আপনি কিংবা আমি বঙ্গদেশে যখন ফুলবাবু হয়ে রিক্সায় ঠ্যাং তুলে বসি- তখন সচিব, উকিল শিক্ষক যাই হই না কেন- অনুভব করতে ভুলে যাই- আমার মজুরী এই রিক্সা প্যাডেল মারা ভাইটির চেয়ে অন্তত চল্লিশ গুন কম হওয়া উচিত। দেশে বাস করার কালে আমি তা মালুম করতে পারি না যদিও- কিন্তু টরেন্টো'তে বসবাসকালে আমি তা ঠিকঠিক অনুধাবনে সক্ষম হই। গার্মেন্টস শ্রমিকদের দিন রাত খাটিয়ে, নিজে ফুলে উঠি আর গন্ধ ছড়াই যত্রতত্র- শ্রমিকদের জীবন ঝরা পাতার মত, কখন কোনটা খসে পড়ে- এ খবর আমাকে জানায় কে- আর কেই বা লেখে পত্র!
ওহে মহামান্য জনাব ও জনাবা! আপনারাই বলুন- শিক্ষার্থীদের দ্বারা 'মানব ব্রিজ' নির্মাণ এবং তাতে মনিবের হেঁটে যাওয়া আদৌ কী তাহলে অপরাধ?