গাঁও গ্রামের নির্বাচন

ওয়াসিম ফারুক
Published : 27 Feb 2016, 11:12 AM
Updated : 27 Feb 2016, 11:12 AM

ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ইউনিট কারন আর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির ই প্রতিনিধিত্ব করে । ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ই আমাদের প্রন্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে । তাই আমাদের দেশে যত গুলি নির্বাচন হয় এর গুলির মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ই আমার কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে । সিটি কর্পোরেশন বা পৌর সভা নির্বাচন কেন জানি সব সময় ই আমার কাছে শহুড়ে নির্বাচন বলে মনে হয় এ নির্বাচনে কেন জানি সব সময় ই ইট পাথরের গন্ধ পাই । ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন গ্রামের সাধারন মানুষদের নির্বাচন তাই এর সাথে মিশে আছে মাটির কোমল ঘ্রান । জাতীয় বা উপজেলা নির্বাচন সে তো ধনী ও প্রভাবশালীদের নির্বাচন এর মাঝে কেন জানি কোন আন্তরিকতার প্রতিফলন পাই না সবকিছু মিলেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কে আমি গাঁও গ্রামের নির্বাচন বলে থাকি । কালের বিবর্তনে আবারো সময় হয়েছে সেই গাঁও গ্রামের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার । এবার ই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যদিও দীর্ঘ দিন যাবৎ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রভাব কে ই প্রাধান্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ।

দেশের মোট ৪২৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম ধাপে দেশের ৭৩৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২২ মার্চ ২০১৬ আর ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল ঐ ৭৩৮ টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিযোগী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমাদেয়ার শেষ দিন ।বিভিন্ন সংবাদমধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী এ সকল ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ২৫ টি তে আওয়ামীলিগের প্রার্থী ছাড়া আর অন্য কোন প্রার্থী নেই বলে এগুলিতে আওয়ামীলিগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ।আওয়ামীলিগের পাশাপশি বিএনপি ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অংগনে একটি শক্তিশালী সংগঠন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে তা হলে কি কারনে ঐ ২৫ টি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামীলিগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হলো ? মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব সহ নানা করনে ৬৭ টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রার্থী দিতে পারে নি বিএনপি এমন টি ই দাবি দলটির । ২৫ টি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামীলিগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সাধারন ভাবেই আমাদের মনের ভিতর নির্বাচন নিয়ে একটা সংকার জন্ম হয়েছে সেই সাথে প্রশ্ন ও জন্ম নিয়েছে তা হলে কি আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্তমান ক্ষমতাশীন দলের রাজনৈতিক প্রভাব ও পেশী শক্তির কাছে কি বিপন্ন হতে যাচ্ছে ? সদ্য অতীত হওয়া বিভিন্ন নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি কি আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ও ফুটে উঠবে ?

২৫ টি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামীলিগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ও ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্হানে মনোনয়ন পত্র জমাদেওয়া নিয়ে যে নৈরাজ্য দেখা গেছে তা নিয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের অনেকের ই মন্তব্য এতে আশ্চর্য হওয়ার তেমন কিছুই নেই । যেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ শতাংশেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমন টি হওয়া তো স্বাভাবিক ব্যাপার ।

মেনে নিলাম না হয় গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের জোট নির্বাচনে না আসায় হয়তো সে নির্বাচনে ৫০ শতাংশেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং তা হতেই পারেন। কিন্তু বর্তমান দলীয় ভাবে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তো বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দল ই অংশ গ্রহন করেছেন তবে কেন এই নির্বাচনের এমন করূন অবস্হা ? ইতোমধ্যে এই নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র ছিনতাই দলীয় সন্ত্রাসী সহ আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী দিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের নানা হুমকি , প্রার্থী অপহরন সহ নানা অভিযোগ উপস্হাপিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ বিষয়ে মোটে ও নাকি কর্নপাত করেন নি তারা । তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের আগেই যদি নির্বাচন কমিশন এধরনের বিমাতা সুলভ আচরন করেন সে ক্ষেত্রে গাঁও গ্রামের এই নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠ হতে পারে ?

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অন্তনাই গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর জাতীয় নির্বাচন সহ এর পরবর্তী বিভিন্ন স্হানীয় সরকার নির্বাচনে জাতির কাছে তাদের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ ।তাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ও যদি বিগত নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে তা হলে আমাদের ধ্বংস প্রায় গনতন্ত্র পুরোটাই প্রশ্নের সম্মুখীন হবে । তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে আশা করবো তারা আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির গাঁও গ্রামের এই নির্বাচনকে সুষ্ঠ ভাবে অনুষ্ঠিত করে তাদের গৌরব ও সম্মান অক্ষুন্ন রাখবে ।